ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশকে ইরাক, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের মতো অকার্যকর এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনায় ভারত গুলশানের হলি আর্টিজেন রেঁস্তোরায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলে জনমনে ব্যাপক ধারনার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জঙ্গিরাষ্ট্র এবং অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণ করে ভারত সরকার চায় এদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে।
জঙ্গি দমনে একসাথে কাজ করার নামে দিল্লীর মসনদ ছায়া স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। যদিও ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, সেনা সদর, পুলিশ সদর দপ্তর, প্রশাসনসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভারতীয়রা ঘাঁটি গেঢ়ে বসে গেছে। তবুও এখন কোন রাখঢাক না রেখে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ভারত। ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণ ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
বিগত দিনগুলোতে একের পর এক নিরিহ ছেলেদের ধরে জঙ্গি হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। দেয়া হয় একের পর এক ক্রসফায়ার। গত ৬ মাসে ৮০ টি কথিত ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ভারত বিশ্বকে ম্যাসেজ দিতে চাইছে বাংলাদেশ একটি জঙ্গি রাষ্ট্র। কারণ এ দেশে প্রচুর জঙ্গি গ্রেফতার হচ্ছে আবার ক্রসফায়ারে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব বিশ্বাস না করায় দ্বিতীয় মিশন শুরু। সারাদেশে চালানো হয় একের পর এক গুপ্তহত্যা। বিশেষ করে বিদেশিদের টার্গেট করা হয়।
যাতে বিশ্ব এ বিষয়ে মাথা ঘামাতে বাধ্য হয়। গুপ্তহত্যা করিয়ে ভারত প্রমাণ করতে চায় বাংলাদেশে জঙ্গি রয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এবার আন্তর্জাতিক কায়দায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় গুলশানের মতো একটি কূটনৈতিক জোনের একটি রেঁস্তোরা। এবারও বিদেশিদের টার্গেট করা হয়। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে বিশ্বকে ভারত ম্যাসেজ দিতে চায় যে বাংলাদেশে জঙ্গি রয়েছে আর এ জঙ্গি দমনে ভারতের সাহায্য দরকার। এবং ভারত যেহেতু সীমান্তবর্তী দেশ সুতরাং বাংলাদেশের জঙ্গির উত্থান ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ভেতর সরাসরি হস্তক্ষেপ করার বৈধতার সার্টিফিকেট নেয়া।
গুলশানের রেঁস্তোরার এ হামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এ ধরণের হামলা প্যারিস, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কে দেখা গেছে। বাংলাদেশেও এ কায়দার ভয়াবহ হামলা আমদানি করা হয়েছে বিশ্বকে বাংলাদেশের জঙ্গি উত্থান জানানোর নিমিত্তে।
ভারতের পরিকল্পনায় গুলশানের রেঁস্তোরায় সন্ত্রাসী হামলার প্রমাণ:
১. গুলশানের হামলার সাথে সাথে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর আগেই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো সম্প্রচার শুরু করে, যেটি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করিয়ে দেয় ! সেদিনও ঘটনা ঘটার আগেই ভারতীয় টিভি মিডিয়াগুলো পিলখানা ম্যাসাকারের খবর সম্প্রচার শুরু করে, যেটি পরবর্তীতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলো !
বিশ্বের তাবৎ বাঘা-বাঘা মিডিয়াগুলোতো বটেই, খোদ বাংলাদেশের এতগুলো টিভি মিডিয়ার আগেই কিভাবে ভারতীয় মিডিয়া সম্প্রচার করতে পারে, সেগুলো বরাবরই বিস্ময়ের ও সন্দেহের!
২. ডিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এই ঘটনায় আওয়ামীলীগের দুইজন মন্ত্রী, একজন সাংসদ, একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, একজন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জড়িত। উপর্যুক্ত ব্যক্তিরা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পরিকল্পনা মাফিক কাজটি সম্পাদন করেছেন। এই জন্যই আওয়ামীলীগের কেউ ঘটনাস্থলে যাননি!
সন্ত্রাসীরা যে সিম ব্যবহার করে বিদেশি গনমাধ্যমে ছবি পাঠিয়েছে, তার সব সিমগুলোই এই উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে উত্তোলিত হয়েছে।
৩. এ হামলার মধ্যদিয়ে ভারত চেয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দাদাগিরির মওকা সৃষ্টি করতে। কিন্তু আমেরিকা সাথে সাথেই মনিটরিং করায় ও প্রতিক্রিয়া জানানোয় ভারত কিছুটা পশ্চাৎপদ হয়েছে।
৪. গুলশানে হামলার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীতো দূরের কথা কোন সাংসদ বা মেয়রও কোন কথা বা বিবৃতি দেননি। বিবৃতি দেননি পুলিশের আইজিপিও। শুধুমাত্র র্যাবের মহাপরিচালককে কথা বলতে দেখা গেছে। কিন্তু ঘটনার ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সদস্য ইন্দ্রজিত দত্ত তাঁর ফেসবুকে জানান, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কন্ট্রোলে আছে সব। ভারতীয় কমান্ডোরা নেমেছে বাংলাদেশে। আরো ২ প্লাটুন বাড়তি বাহিনী কোলকাতা থেকে আসার জন্য বিশেষ বিমান প্রস্তুত। এরা আইএসআইর সুইসাইড বোম্বার! এমনকি বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেটা দমানোর জন্য ভারতীয় মিলিটারী তৈরী আছে।
যখন আকস্মিক এ ঘটনায় পুরো বিশ্বসহ বাংলাদেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন ভারত হামলার সাথে সাথেই তাদের প্রস্তুতির কথা জানায় কিভাবে? তারমানে ভারতের পরিকল্পনায় এ ঘটনা ঘটেছে। এবং পূর্বপরিকল্পিত এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ভারত। আর এ কারণেই ভারত তাদের মিলিটারি ফোর্স প্রস্তুত করে রেখেছে এবং সম্ভাব্য সবধরণের বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও তাদের ছিল। এছাড়াও ইন্দ্রজিতের কথায় প্রমাণ যে, হামলার আগেই ভারতীয় কমান্ডোরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।
বুঝে নিন প্লানটা দাদাদের এবং কত গভীর!
৫. উদ্ধার হওয়া ১ জন জিন্মি জানিয়েছেন, রেস্ট্রুরেন্টে অপহরনকারীরা সবাই হিন্দি আর ইংরেজিতে কথা বলছেন, এবং সম্ভ্যবত তারা ইন্ডিয়ান স্পেসাল মিলিটারি কমান্ডো বলে ধারনা করা হচ্ছে।
৬. গণমাধ্যমকে র্যাবের মহাপরিচালক বারবার সরে যেতে বলার কারণ কী জানেন? বা হাসিনা কেন লাইভ সম্প্রচার করায় গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছেন জানেন? ঐ যে গণমাধ্যমের জন্য ভারতীয় বাহিনী অভিযানে নামতে পারেনি। কারণ ভারত চেয়েছিল তারা রাতের অন্ধকারে শাপলা চত্বরের হেফাজতের মতো ঘটনা ঘটাবে। যদিও হেফাজতকে হত্যা করেছিল আর এদেরকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তাদের পাঠানো সন্ত্রাসীদের মুক্ত করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সে শর্তেই সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। কিন্তু রাতভর শত চেষ্টার পর দেশি বিদেশি গণমাধ্যম স্পট ছেড়ে না যাওয়ায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। খেয়াল করে দেখুন, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের সাথে নেগোসিয়েশনের চেষ্টা করছি। তারমানে কী?
৬. বনানীর ওসি সালাউদ্দীন ও ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউলকে কেন হত্যা করা হয়েছে জানেন? কারণ যেসব বন্দুকধারী রেঁস্তোরায় ঢুকেছিল তারা ছিল ভারতেরই পাঠানো। তাদেরকে যেন ধরতে না পারে ও চিনতে না পারে এবং হামলাকারীরা নিরাপদে পালাতে পারে সেজন্য দুই পুলিশ অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ প্রাথমিকভাবে এই পুলিশ অফিসাররা হামলারকারীদের মিশন সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
৭. এবার স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, তাহলে হাসিনার সরকার হামলাকারীদের হত্যা করলো কেন? কারণ খুবই পরিষ্কার। মাত্র ১১ মিনিটে সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান শেষ করলো কোন রকম নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া। হামলাকারীরা সুইসাইডাল স্কোয়াডের হলে কেন সেনা ও নৌবাহিনীর অভিযানে অংশ নেয়া কাউকে গুলি করলো না বা কাউকে হত্যার কোন চেষ্টাই করলো না বা পাল্টা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুললো না? যে অভিযান ১১ মিনিটে সমাপ্ত হলো সে অভিযান কেন রাতে চালানোর নির্দেশ দিলেন না হাসিনা? কারণ রাতভর চেষ্টা চলছিল ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীকে দিয়ে রাতের আঁধারে গণমাধ্যমকে সরিয়ে আততায়ীদের সরিয়ে নিতে। আর সেজন্যই আওয়ামীলীগের দলীয় পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউন সংবাদ প্রচার করে যে, জঙ্গিরা তিনটি শর্ত দিয়েছে। বাস্তবে জঙ্গিদের সাথে বাংলাদেশ পুলিশের কোন কথাই হয়নি। তারমানে এ পত্রিকাটি ভারতের পরিকল্পনায় এ সংবাদটি পরিবেশন করে। তিনটি শর্তের একটি হলো তাদেরকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ, এভাবেই জিম্মি বাঁচানোর নাম করে বেনজিরের ভাষায় নেগোসিয়েশনের ধুয়া তুলে হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা। যেটা পিলখানাতেও ঘটিয়েছিল। মোটিভ প্রায় একই। কারণ দুটো ঘটনার পরিকল্পনাকারী যে ভারত।
৮. যাহোক ভারতের এই পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় হামলাকারীদের হত্যা করবে। কারণ হামলাকারীরা গ্রেফতার হলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে প্রমাণ হয়ে যাবে হামলাকারীরা কোন দেশের। যেহেতু হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলো না সুতরাং তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হলো। কারণ সারারাত কোন অভিযান না চালানোয় আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তখন বাধ্য হয়েই সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনীকে অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বাহিনী চাইলে হামলাকারীদের জীবিত গ্রেফতার করতে পারতো। কারণ হামলাকারীরা অভিযানের সময় কোন পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। কারণ তারা গ্রেফতারই হতে চেয়েছিল। সুইসাইডাল হলে অবশ্যই অন্যদের মেরে নিজেরা মরতো। ১৩ জন জিম্মিকেও বাঁচিয়ে রাখতো না।
৯. এবার আসি ভারতীয় গণমাধ্যমের বিষয়ে। হামলার সাথে সাথে সংবাদ পরিবেশন শুরু। এবং যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো নিহতের সংখ্যা বলছে একজন। তখন ভারতের চ্যানেল ২৪ ঘন্টা বলছে ৪ জন। কোনভাবেই কেউ রেঁস্তোরার ভিতরে কোন সংবাদ না পেলেও ভারতের গণমাধ্যমগুলো কিভাবে নিহতের সংখ্যাগুলো আপডেট করেছে এ প্রশ্নটি কী করা উচিৎ নয়? এছাড়াও, ভারতের চ্যানেলগুলো ব্রেকিং হিসেবে প্রচার করেছে বাংলাদেশে ভারতীয় কমান্ডোরা অপারেশন চালানোর জন্য প্রস্তুত। ‘‘India to send special forces to Bangladesh.’’
১০. আইএসের কথিত মুখপাত্র আকাম ওয়েবসাইট এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। আবার আন্সারুল্লাহ এবং জে এম বিও স্বীকার করেছে। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, নিহত জঙ্গির ৫ জনই তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের জঙ্গি। তাহলে এতোদিন হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছে বাংলাদেশে কোন জঙ্গি নেই, আইএস নেই। আসলে এসবই ভুয়া। ইন্দ্রজিতদের স্ট্যাটাসই বলে দেয় … সব কিছুর নেপথ্যে ভারতই দায়ী। ইন্দ্রজিত বারবার তার স্ট্যাটাসে এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করতে থাকে। এটাও পরিকল্পনার অংশ। যাতে পাকিস্তানকে ঠেকানোর ধুয়া তুলে ভারত তাদের কমান্ডো পাঠানোর বৈধতা পায়।
সরকারি প্রেসনোট অনুযায়ি, গুলশান ট্রাজেডিতে ২৮জন নিহত। এদের দু'জন পুলিস অফিসার, ২০জন পণবন্দী হিসেবে আটক বিদেশী নাগরিক। বাকী ৬ জন সন্ত্রাসী হামলাকারী বলে মনে করা হচ্ছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তিন বিদেশী নাগরিকসহ ১৩ জনকে। একজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাকে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের একজন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে এসে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও ভয়াবহতা আঁচ না করেই পুলিস রেস্তঁরাটিতে অভিযান চালাতে গিয়ে দুজন অফিসার হারিয়েছে। প্রায় ৪০জন জখম হয়েছে সন্ত্রাসীদের গুলি-বোমায়। এরপর রাতভর আর নতুন করে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু রাতেই সন্ত্রাসীরা পণবন্দী বিদেশী নাগরিকদের ২০জনকেই কুপিয়ে মেরে ফেলে।
সেনা কমান্ডোরা সকালে মাত্র ১২ বা ১৩ মিনিটের ঝটিকা অভিযানে রেস্তরাঁটি অধিকার করে ফেলে।
সশস্ত্রবাহিনীকে ধন্যবাদ। একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের রাত শেষে তারা একটি আপাতঃ স্বস্তির প্রভাত জাতিকে উপহার দিয়েছেন। এমন জাতীয় দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবেলায় তাদের অনিবার্যতা ও সামর্থ্য আরেকবার প্রমাণিত হলো। দুর্যোগের রাতে সরকারের কোনো অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি। আইনশৃংখলা বাহিনীগুলো আর মিডিয়াই ছিল যেন সবকিছু। সেনাকমান্ডো অভিযানে সব ঠান্ডা হবার পর সরকারী কর্তারা তাদের বাণী ও নানান শানে নুযুল নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন।
যা এখনো জানানো হয়নি:
হতাহতদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিদেশী নাগরিকদের নাগরিকত্ব এবং পেশা ও ব্যক্তিগত পরিচয় এখনো অজানা। বহুমুখী নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে কূটনৈতিক এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর আগ্নেয়াস্ত্র-বোমা-গ্রেনেড নিয়ে সন্ত্রাসীদল কেমন করে ঢুকতে পেরেছিল, এ প্রশ্নের সদুত্তরও কেউ দেয়নি এখন পর্যন্ত।
এ ভয়ংকর ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ও দলীয় ফায়দা হাসিল এবং সাফল্যের আত্মপ্রচারণার মতন কুৎসিত বদ অভ্যাস হাসিনা ছাড়তে পারেননি। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে নিজের সরকারের কৃতিত্ব প্রচার করছেন। কিন্তু এতোবড় ঘটনার কোন দায় তিনি স্বীকার করেননি।
আক্রান্ত বাংলাদেশ:
তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ আজ বিপন্ন। জাতি আজ ভেতরে-বাইরে থেকে আক্রান্ত। নির্বিষ ঢোঁড়া সাপ বিরোধীদলকে ষড়যন্ত্র করে ও মেরেকেটে নাশ করে মেকি বিরোধীদল বানিয়ে পার্লামেন্ট ও সরকার সাজাবার যে সার্কাস চালু করা হয়েছে সেই প্রহসনই তো এমন ঘটনার দিকে জাতিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশকে বিরোধীশূণ্য ভেবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সময়ে এখন বিষাক্ত কালকেউটেরা বিরোধীদল হয়ে ওঠার মরিয়া প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে হয়তো। বিভাজনের এ অনৈক্য কাজে লাগিয়ে ভারত চাইছে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে করায়ত্ত করে নিতে। শেখ হাসিনা সে সুযোগ নির্লজ্জ্রে মতো দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আখেরে হাসিনার জন্যও তা বুমেরাং হবে। এ ঘটনাই তার প্রমাণ। ভারত বাংলাদশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানানোর যে চেষ্টা চালাচ্ছে তাতে সাময়িক লাভ দেখলেও আখেরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির জন্যু বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সময়ের দাবি:
ঐক্য ও সমঝোতার কথা বললেই ক্ষমতাসীনেরা পরিহাস করতে থাকে। তবে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ যাই করুন না কেন, এই সংকট থেকে বেরুবার একমাত্র পথ হচ্ছে মহাসংকটকালীন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। এটা মুখের আহ্বানে হবে না। কাজে সে ঐক্য-সংহতির প্রমাণ দিতে হবে।
মহাসংকটকালীন এই জাতীয় ঐক্য-সংহতির উদ্যোগ নেয়ার ও নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা ও সামর্থ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের না থাকলে তাদের সরে দাঁড়ানোই একমাত্র কর্তব্য। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষ ও দলীয় দৃষ্টিকোণবর্জিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন আজ দরকার। প্রয়োজন কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো। দরকার আইনশৃংখলা বাহিনীকেও ঢেলে সাজানো। ভারতের হাত থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হাসিনার পদত্যাগ জরুরি।
গুলশানের হোটেলের বর্বরোচিত হামলা জাতীয় ঐক্য, সংলাপ ও একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনকে অনিবার্য করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারন সম্পাদক আবদুল মালেক রতন।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে জেএসডি নেতৃবৃন্দ বলেন, গুলশান কূটনৈতিক পাড়ার মত নিরাপত্তা প্রহরাধীন এলাকার একটি হোটেলে দেশি-বিদেশি লোকদের জিম্মি ও হত্যা করার মত বর্বরোচিত ঘটনা দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভুলে জাতীয় সংলাপ, ঐক্য, জনগণের ভোটাধিকার এবং একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনিবার্য করে তুলেছে।
তারা আরও বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ নেই, আইএস নেই- এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত হয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠান ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।