ক্যাপ্টেন(অবঃ) মারুফ রাজুঃ শুধু সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা নয়, ভারত সবক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ দিল্লিতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।
দিল্লী সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ এবং আন্তরিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে জানান।
মন্ত্রী জানান, এসব আলোচনায় মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সকল দুর্যোগে ভারত যেমন বাংলাদেশের পাশে ছিল ভবিষ্যতেও সবক্ষেত্রে তেমনি আমাদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
স্বরাষ্টমন্ত্রী শনিবার দুপুরে জেট এয়ারওয়েজ-এর একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে দিল্লী ত্যাগ করেন।
সফর থেকে কতটুকু অর্জন হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা এখন মনে করছি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত আমাদের পাশে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত শুধু সঙ্গে থাকবে না, প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্টমন্ত্রী আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে বলেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। জঙ্গিরা সকলেই বাংলাদেশে জন্ম নেয়া সন্ত্রাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে প্রতিহত করতে এসব কিছু স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
গুলশান ট্র্যাজেডিকে একটি নতুন ধরনের সন্ত্রাসবাদী ঘটনা বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদশে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা আগেও ছিল। অতীতে ৬৩টি জেলায় জঙ্গিরা একসঙ্গে বোমা ফাটিয়েছে, বিচারকাজ পরিচালনার সময় বিচারকের উপর হামলা চালিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে, জেএমবি নামের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের উত্থান আমারা অতীতে প্রত্যক্ষ করেছি। তবে সেসময় যারা বাংলাদশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তারা এসব তৎপরতাকে উৎসাহ দিয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কখনো জেএমবি, কখনো হুজি অথবা বিভিন্ন নামে পরিচালিত জঙ্গি সংগঠনগুলো আসলে শিবির নেতাদের দ্বারাই পরিচালিত। এসব জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দমনে আমরা যখন কঠোর ব্যবস্থা নিলাম তখন তারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালে বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন তাদের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করলাম তখন তারা সারাদেশে একনাগাড়ে ৯০দিন অগ্নি সন্ত্রাস চালায়। এই অগ্নি সন্ত্রাসে মানুষ এবং যানবাহন পোড়ানো থেকে শুরু করে কোন কিছুই বাদ যায়নি।
তিনি বলেন, সব সন্ত্রাসী তৎপরতা সফলভাবে দমন করার পর বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে একজন নন্দিত নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে ঠিক তখনই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে নতুন করে অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এই অপচেষ্টার অংশ হিসাবে ইতালীয় নাগরিক ট্রাভেলা সিজারকে হত্যা করা হয়। তারপর বনিও সুজিকে হত্যা করা হয়। এইভাবে হিন্দু মন্দিরের পুরহিত, খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, নামাজরত অবস্থায় শিয়া মসজিদের মোয়াজ্জিন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীসহ ৩৫জনকে হত্যা করা হয়। এসব কিছুই করা হয় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে। এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় সফলতা অর্জন করলেন তখন এক নতুন মাত্রা শুরু হয়।
তিনি জানান, আগে জঙ্গিরা মাদ্রাসার কোমলমতি অবুঝ ছেলেদের সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্যে ব্যবহার করতো। এখন তারা সমাজের শিক্ষিত এবং অবস্থাপন্ন পরিবারের মেধাবী ছেলেদের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্যে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর দেশে পরিণত করা।
তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে তখন জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা নিজেরাই আইএসের সাথে সম্পৃক্ত হবার ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে আইএসের কোনো সংগঠন নাই। স্থানীয় জঙ্গিরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আইএসের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তারা মানুষকে আইএসের নামে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে মাত্র।
তিনদিনের সরকারী সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৭শে জুলাই এক প্রতিনিধিদল নিয়ে দিল্লীতে যান তিনি ।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের আইজি শহীদুল হক, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ডিজি রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ সহ সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তারা।