ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের শীর্ষ সম্পদশালী ৫০ ব্যক্তির তালিকায় দেখা গেছে, ১০০ কোটি টাকার বেশি নিট সম্পদের মালিক রয়েছেন ২৭ জন। আর ৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকার নিট সম্পদের মালিক রয়েছেন এমন সম্পদশালীর সংখ্যা ৪৬ জন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের তালিকায় এমন তথ্য জানা গেছে।
মোট সম্পদ থেকে মোট দায় বাদ দিলে যা থাকে তাই নিট সম্পদ।
এনবিআরের তালিকায় শীর্ষ দশ সম্পদশালী শওকত আলী চৌধুরী প্রকাশিত নিট সম্পদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী। তার প্রদর্শিত সম্পদের পরিমাণ ২৭৫ কোটি টাকা।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ডিরেক্টর এবং দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। শওকত আলী চৌধুরী শিপ রিসাইক্লিং, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, রিয়েল এস্টেট, পাওয়ার জেনারেশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস, কনটেইনার টার্মিনাল এন্ড হ্যান্ডলিং, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, শেয়ার ব্রকারস এন্ড টি প্লান্টেসন এন্ড প্রোডাকশন ব্যবসার সাথে জড়িত।
সাইফুল ইসলাম: দ্বিতীয় সম্পদশালী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন নাভানা গ্রুপের সাইফুল ইসলাম। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। সাইফুল ইসলাম নাভানা গ্রুপের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম কামালের ছেলে। তিনি ব্যবসা বিষয়ে ভারতের নিউ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে থাকতেই তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপে যোগদান করেন। ২০০০ সালে নাভানা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সেসময় থেকেই তিনি নাভানা রিয়ের এস্টেট লিমিটেড, নাভানা কন্সট্রাকশন লিমিটেড, নাভানা সিএনজি লিমিটেড পরিচালনায়ও ভূমিকা রেখে আসছেন।
সা’দাত সোবহান: ২০৫ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সা’দাদ সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চার সন্তানের সবার বড় সা’দাত সোবহান। শৈশব ও কৈশরের বেশিরভাগ সময় ইউরোপে কাটানো সা’দাত সোবহান ২০০০ সালে লন্ডনের হুরন বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন শেষ করে তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপেই যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাথে দারিদ্র্য দূরীকরণে বেশ কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত আছেন। এপর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ছিন্নমূলকে তিনি পুণর্বাসন করেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন: ২০০ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন হোসাফ গ্রুপের মোয়াজ্জেম হোসেন। মোয়াজ্জেম হোসেন শুধু হোসাফ গ্রুপেরই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নন, সেই সাথে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডেরও ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডিরেক্টর। তিনি হোসাফ মিটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং সিটিলিংক অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মোযাজ্জেম হোসেন বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোক্তদের একজন, যিনি তার ব্যবসা দেশ এবং বিদেশে সমানতালে ছড়িয়েছেন। তিনি বিজিএমইয়ের সাবেক সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ এনার্জি কোম্পানিজ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সালমান এফ রহমান: ১৬৫ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া একটি জুট মিল দিয়ে ১৯৬৬ সালে সালমান এফ রহমান তার ভাই সোহেল এফ রহমানের সাথে ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৭১ সালে সরকার ওই মিলটিকে সরকারিকরণ করলে তারা দুই ভাই বাধ্য হন অন্যদিকে ব্যবসা ঘুরিয়ে নিতে। ১৯৭২ সালে এই দুই ভাই বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে তারা সি-ফুড এবং হাড়চূর্ণ রপ্তানি করতেন বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস-এ। সেই সাথে তারা বিদেশি ওষুধ আমদানি করতেন। ১৯৭৬ সালে এই দুই ভাই বেক্সিমকো ফার্মা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে সোহেল এফ রহমান এবং সালমান এফ রহমান তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করেন এমনভাবে, একটা পর্যায়ে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় বেক্সিমকো গ্রুপ।
আফরোজা বেগম: ষষ্ঠ স্থানে আছেন আফরোজা বেগম। যার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৫৮ কোটি টাকা।
সাফওয়ান সোবহান: ১৫৫ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সাফওয়ান সোবহান। সাফওয়ান সোবহান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চার সন্তানের একজন। বর্তমানে তিনি এই গ্রুপের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি অনেক সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত আছেন।
আকিজ পরিবার: আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন। শীর্ষ সম্পদশালীর তালিকায় সবচেয়ে বেশি সদস্য রয়েছেন আকিজ পরিবারের। এ পরিবারের পাঁচ সদস্য শেখ বশিরউদ্দিন, শেখ জামিল উদ্দিন, শেখ জসিম উদ্দিন, শেখ শামীম উদ্দিন ও শেখ নাসির উদ্দিন প্রত্যেকেই ১৪০ কোটি টাকার নিট সম্পদের মালিক। তাঁরা সবাই রয়েছেন অষ্টম স্থানে। আকিজ গ্রুপের ইতিহাস সেই চল্লিশের দশক থেকে শুরু। প্রথমদিকে এই গ্রুপ পাটের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করে। তখন পাট ‘সোনালি আঁশ’ বলে সারাবিশ্বে দারুন সমাদ্রিত এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সর্বোচ্চ উৎস। এরপর এই গ্রুপ বিড়ির ব্যবসা শুরু করে। গ্রামবাংলায় আকিজ বিড়ি এখনো যথেষ্ট সমাদ্রিত। বিড়ির ব্যবসাই মূলত আকিজ গ্রুপকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সবচেয়ে বেশি শক্তি জুগিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে পরবর্তীতে এই গ্রুপ আরো বড় হয় এবং ব্যবসার ১৫টি শাখা খোলে। এর মাঝে সিগারেট, বিড়ি, প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, টেক্সটাইল, হ্যান্ডবোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া শিল্প এবং রিয়েল-এস্টেট অন্যতম। শেখ বশির উদ্দিন বর্তমানে আকিজ গ্রুপকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যিনি ১৯৮৯ সালে মাত্র ৩শ’ টাকার বেতনে নিজ বাবার প্রতিষ্ঠানেই একজন শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শেখ জামিল উদ্দিন বর্তমানে এই গ্রুপের ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন। শেখ জসিম উদ্দিনও আকিজ গ্রুপের ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন। শেখ শামিম উদ্দিন এবং শেখ নাসির উদ্দিনও গ্রুপের ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন।
এম এ খালেক :গেটকোর অংশীদার ও প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক এম এ খালেকেরও রয়েছে ১৪০ কোটি টাকার নিট সম্পদ। আকিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে যৌথভাবে তিনিও রয়েছেন তালিকার অষ্টম স্থানে। প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন এম এ খালেক। ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। রয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের সোহেল এফ রহমান। বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সোহেল এফ রহমান। বর্তমানে তিনি এই গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত আছেন।
মঞ্জুরুল ইসলাম : ১৩৫ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে দশম স্থানে রয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। এনবিআরের তালিকায় অপর সম্পদশালীরা তালিকায় ক্রম অনুযায়ী আনোয়ার হোসেনের নিট সম্পদ রয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
নিট সম্পদের তালিকায় এরপর আছেন ১৩০ কোটি নিয়ে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার,
১২৫ কোটি টাকা নিয়ে প্রাণ গ্রুপের আহসান খান চৌধুরী,
১২০ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে এস আলম গ্রুপের মো. সাইফুল আলম ও মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী অবস্থান করছেন।
এর পরে ১১০ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে মো. মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং
১০৭ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে হাজি ইউনূস রয়েছেন।
তালিকায় এরপর রয়েছেন গাজী গ্রুপের কর্ণধার গোলাম দস্তগীর গাজী। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১০৫ কোটি টাকা।
তার পরেই রয়েছেন ১০০ কোটি টাকা নিট সম্পদের মালিক মোরশেদ আলম ও নিটল-নিলয় গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মাতলুব আহমাদ।
মো. ফারুকের নিট সম্পদের পরিমান ৯৬ কোটি ও মো. হানিফের ৯৫ কোটি টাকা।
৯০ কোটি টাকার নিট সম্পদের মালিক ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিম। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম খানের নিট সম্পদের পরিমান ৮৭ কোটি,
মো. আমানউল্লাহর ৮৬ কোটি,
মোয়াজ্জেম হোসেনের ৮১ কোটি ।
উত্তরা গ্রুপের ডিরেক্টর মেহদাদুর রহমানের ৮১ কোটি টাকা ।
সৈয়দ হোসেন চৌধুরীর ৭৬ কোটি টাকা।
প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর নিট সম্পদের পরিমান ৭৫ কোটি,
আবদুস সালামের ৭০ কোটি, আজিজ আল মাহমুদের ৬৮ কোটি ও মনোয়ারা বেগমের ৬৭ কোটি টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রুপের কর্ণধার কুতুবউদ্দিন আহমদের নিট সম্পদের পরিমান ৬৭ কোটি, সালমা হকের ৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া মিজানুর রহমানের ৬৪ কোটি, ইউনিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মো. নুর আলীর ৬০ কোটি, নাসিফ সিকদারের ৬০ কোটি ও নজরুল ইসলাম স্বপনের ৫৯ কোটি টাকার নিট সম্পদ রয়েছে।
৫৮ কোটি টাকার নিট সম্পদ নিয়ে সম্পদশালীদের তালিকায় রয়েছেন বিজেএমইএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী। এছাড়া মো. ইউনুছের নিট সম্পদের পরিমান ৫০ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান রাগীব আলীর ৫০ কোটি টাকা, জ্যোৎস্না বেগমের ৪৪ কোটি, মনজুর মোর্শেদ খানের ৪২ কোটি, আজিম উদ্দিনের ৪০ কোটি ও আলী আজগরের ৩৯ কোটি টাকা।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের নিট সম্পদ রয়েছে ২৭ কোটি টাকা, ইস্টকোস্ট গ্রুপের কর্ণধার আজম জে চৌধুরীর ২৫ কোটি ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ২১ কোটি টাকা।