ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের বহুল আলোচিত ইসলামী বক্তা ড. জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের পর এবার একই নামের পিস স্কুলগুলোও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাসিনা সরকার। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক অফিস আদেশে অনুমোদনহীন পিস স্কুলসমূহ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’
এছাড়া ঢাকার লালমাটিয়ায় পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাঠদানের অনুমতি বাতিল করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকেও নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিতর্কিত কার্যক্রমে লিপ্ত থাকায় লালমাটিয়ার পিস স্কুলটির পাঠদানের অনুমতি বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘পিস’ নামে বাংলাদেশে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রাজধানীর লালমাটিয়ায় পিস স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের সাময়িক নিবন্ধনই শুধু দিয়েছেন তারা। বাকিগুলো অননুমোদিত।
শিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যঃ
পিস স্কুল পরিচালনার সঙ্গে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী শক্তি জড়িত’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা ‘জঙ্গি তৈরির ক্ষেত্রকে’ উৎসাহিত করছিল।
বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের সাংবাদিকদের প্রশ্নে পিস স্কুল বন্ধের কারণ ব্যাখ্যা করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “পিস স্কুলে যে লেখাপড়া হচ্ছে, পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, মানসিকতা গড়ে তোলা হচ্ছে এটি আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীর জন্য, দেশের জন্য কখনও মঙ্গলকর নয়।
“ওখানে যারা পরিচালনা করছেন তারা আমাদের স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী শক্তি। তারা এখানে এমনই মনোভাব তৈরি করছেন যেগুলো জঙ্গিবাদ তৈরির ক্ষেত্রে, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিপথগামী করতে উৎসাহিত করে। যার জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমরা চালাতে দিতে পারি না।”
বন্ধ করে দেওয়া পিস স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “দায়িত্ব তারাই নেবেন যারা তাদের এই পথে নিয়ে এসেছেন।”
ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের পর অনুমোদনহীন পিস স্কুলগুলোও মঙ্গলবার বন্ধ করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অনুমোদনহীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, পিস স্কুল ‘বিশেষ চেইনে’ গড়ে ওঠেছে এবং সাংবাদিকরাই সে বিষয়ে খবর নিয়ে এসেছেন।
“আমরা পুলিশ এবং বিভিন্ন এজেন্সির খবর পেয়েছি, আমরা কথা বলেছি, খবর নিয়েছি। দেখা গেছে, অনেকগুলোর কোনো অনুমোদনই নেয়নি। একটা হয়তো বোর্ডের অনুমোদন নিয়েছে, সেটাও কাওকে না কাউকে ধরে।”
অনুমোদন ছাড়া কেউ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পিস স্কুল বন্ধ রেখেছি, আরও তদন্ত করে সঠিকগুলো বের করে ব্যবস্থা নেব। আমরা এগুলো সম্পর্কে জেনে-বুঝে তারপর করণীয় স্থির করব।”
যে কোনো প্রতিষ্ঠান চালানোর সময় জাতীয় ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতি, জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধসহ ‘সব কিছু’ ধারণ করতে হবে বলেও জানান নাহিদ। “বিপথগামী করে ছেলেমেয়েদের ভুল তথ্য দিয়ে কিংবা বিপথগামী হওয়ার দল তৈরি করে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না।”
সব পিস স্কুল বন্ধের নির্দেশের পাশাপাশি বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া লালমাটিয়ার একটি পিস স্কুলের নিবন্ধনও মঙ্গলবার বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই নির্দেশের পর মঙ্গলবারই লালমাটিয়ার বি-ব্লকের ৫/৭ বাড়ির পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাময়িক নিবন্ধন বাতিল করে আদেশ জারি করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ‘পিস’ নামে বাংলাদেশে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রাজধানীর লালমাটিয়ায় পিস স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের সাময়িক নিবন্ধনই শুধু তারা দিয়েছে; বাকিগুলো অননুমোদিত।
ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বাংলাদেশে বন্ধের পর ‘পিস স্কুল’গুলোর কর্মকাণ্ডের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে সরকার।
জাকির নায়েকের মতাদর্শ অনুসরণ করেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘পিস’ শব্দ জুড়ে দিয়ে বিভিন্ন নামে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গুলশান হামলাকারী অন্তত দুজন জাকির নায়েকের বক্তব্যে প্ররোচিত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠার পর গত ১১ জুলাই পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত আসে।তবে এই অভিযোগের সপক্ষে কোন প্রমান দেখাতে পারেনি সরকার।
ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনে তরুণদের অংশগ্রহণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ১২টি এনজিও রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইয়ং চেইঞ্জ মেকার্স কোয়ালিশনের আয়োজন করেছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ উদ্যোগের গণমাধ্যম সহযোগী।