ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর গণমাধ্যমে নিখোঁজ বেশ কিছু মানুষকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রচার করা বিজ্ঞাপনের ভাষা হঠাৎ পাল্টে গেছে।
শুরু থেকে দেশের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে এদেরকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছিল। তবে এখন বলা হচ্ছে, এরা দেশের শত্রু; নাশকতাকার চেষ্টা করছে। এদেরকে ধরিয়ে দিন। এরা ঢাকার আশেপাশেই আছে-এমন কথাও প্রচার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোগ্রামও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব কারনেই টেলিভিশনে ফলাও করে এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে ব্যপক সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এরা ঢাকার আশেপাশে আছে- এমন তথ্য কীভাবে নিশ্চিত হলেন- সে বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মাত্র কাজে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।’
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘টেলিভিশনের যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে যেহেতু পুলিশের মনোগ্রাম দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে সেহেতু আমি খোঁজ খবর নিয়ে বলতে পারবো।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তবে সবাই জঙ্গি নয়। তাই তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানের কথা চিন্তা করে নামগুলো প্রকাশ না করে আরো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞাপন যাদের নামে যাদের ছবি প্রকাশ করে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বাড্ডার জুনায়েদ খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী, লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন, ঢাকার ধানমন্ডির জুবায়েদুর রহিম, সিলেটের সাইফুল্লাহ ওজাকি ও জুন্নুন শিকদার। এদের মধ্যে তামিম আহমেদ চৌধুরীকে গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হচ্ছে।
তাকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের প্রধানও বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। আইএসের মুখপাত্র দাবিকে তার একটি সাক্ষাৎকারও প্রচার করা হয়। সেখানে অবশ্য তার নাম আবু ইব্রাহিম আল হানিফ চৌধুরী লেখা হয়েছে।
খিলগাঁও চৌধুরীর পাড়ার বাসিন্দা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন খন্দকার, তার স্ত্রী নাইমা আক্তার, দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন এবং বড় মেয়ের স্বামী সাদ কায়েসের নামও এই বিজ্ঞাপনে রয়েছে।
এদের মধ্যে চিকিৎসক রোকনউদ্দিন তার পুরো পরিবার নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। একটি ‘মুসলিম দেশ’ থেকে তিনি স্বজনদের কাছে ফোনও করেছিলেন। তবে বারবার জানতে চাইলেও ওই মুসলিম দেশের নাম জানাননি রোকন। এদের সবাই গত কয়েক মাস বা বছর ধরে নিখোঁজ। তাদের প্রায় সবার বিষয়েই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে।
নিখোঁজের তালিকায় নতুন আট নাম সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে নিখোঁজ আরও সাত জনের নাম প্রচার করা হচ্ছে। এদের দুই জনই ঢাকার বাসিন্দা। এরা হলেন, বারিধারার চিকিৎসক আরাফাত আল আজাদ, বনানীর সাইমুন হাসিব মোনাজ। এদের একজন সাবেক সচিবের ছেলে। আর নিকুঞ্জের তাহমিদ রহমান সাফির নাম নতুন করে আসলেও তার নামে আগেও প্রচার হয়েছে। তিনি সাবেক এক নির্বাচন কমিশনারের ছেলে। এবং আর্টিজান হামলার পর এরই রকম আরও হামলার হুমকি দিয়ে ভিডিওবার্তাও প্রচার করেছিলেন তিনি।
নতুন এই তালিকায় আছে দুই নারীর নামও। এরা হলেন গোপালগঞ্জের দুই বোন সাইমা আক্তার মুক্তা, রাবেয়া আক্তার টুম্পা। এরা স্বামী-সন্তানসহ কয়েখ বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
এদের মধ্যে মুক্তার স্বামী সুজন ২০১৫ সালে সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত তথ্য আছে পুলিশের কাছে।
সবশেষ নাম আসা নিখোঁজ অন্য তিন জন হলেন, আশুলিয়ার টুঙ্গাবাড়ীর আবদুর রহমান মাসুদ, গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়াবাজারের রিদওয়ান ইসলাম তুহিন ও বগুড়ার এ কে এম তাকিউর রহমান।