ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সিরিয়া, লিবিয়া, তুরস্ক ও ইরাক ফেরত বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে তাদের সুপারিশে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া, লিবিয়া, তুরস্ক, ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে ফেরৎ আসা ব্যক্তিদের বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। এর ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পরিচালিত জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রথমদিকে জঙ্গি কার্যক্রমে মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র, আফগান যুদ্ধ ফেরত বাংলাদেশিরা এসব কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত ছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের পরিচয়মতে জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অভিজাত শ্রেণির সামরিক-বেসামরিক আমলাদের সন্তানরা অধিকহারে জড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু শিক্ষক এসব শিক্ষার্থীর মোটিভেশন দিয়ে তাদেরকে জঙ্গি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম ও সাকা চৌধুরীর ছেলেরা এবং তাদের সংগঠনের আন্তর্জাতিক শাখার অনেক সদস্য বর্তমানে মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা ও ব্যবসার নামে অবস্থান করছে। তারা সেখান থেকে বর্তমান সরকার পতনের বিভিন্ন কৌশল প্রণয়নসহ দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তহবিল যোগানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উস্কানি দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে জঙ্গি নির্মূলে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদ নির্মূলে সব বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা যেতে পারে। তারা নিজেদের বাহিনীর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সমন্বয় করে জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে নিজ নিজ বাহিনীর অভ্যন্তরেও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ও মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সন্তান বা নিকট আত্মীয় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া যায়। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বরখাস্ত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া যায়।
এছাড়া, দেশের নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেখানকার শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি বা সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য/জনপ্রতিনিধিদের ওপর দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সব প্রগতিশীল সংগঠনকে একজোট হয়ে সারা দেশে জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি সঠিক ধর্মীয় পথ সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরার জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের জন্য স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শ দেয়া যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এরই মধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে।