ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জঙ্গীবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী এবং জঙ্গী সংগঠন গনবাহিনীর সাবেক প্রধান হাসানুল হক ইনু একথা জানান।
ভারত সফরের চতুর্থ দিনে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ইনু বলেন, ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে বৈঠক সফল হয়েছে। মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জঙ্গিদের কোনও ধর্ম নাই, ইতিহাস নাই, কোনও সংস্কৃতি নাই। জঙ্গিরা সবসময় মিথ্যা, গুজব এবং প্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে বৈঠকে আমরা ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারে একমত হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রচারণার মাধ্যমে আমরা মিথ্যা, গুজব, অলীক প্রচারণা এবং ইতিহাসের বিকৃতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে সকল পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ কোনও আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমস্যা নয়। এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। বর্তমানে জঙ্গিবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হলেও বিভিন্ন দেশ এবং সমাজে এটি ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল উপায়কেই সমন্বিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ধর্ম, ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।’
এর আগে ১৭ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনু বলেছিলেন, ‘ইসলাম ও ইতিহাসের বিকৃতি রুখতে ভারতকে সহযোগী হিসেবে চায় বাংলাদেশ। যা হবে ১৯৭১-এর স্মৃতির রক্ষাকবচ।’
হাসানুল হক ইনু জানান, ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের ব্যাপারে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটি ‘মেগা ফিচার ফিল্ম’ নির্মাণের ব্যাপারেও চিন্তা করছি।”
তথ্যমন্ত্রী শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ভিন্নতা সম্পর্কে বলেন, ‘পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আমাদের দেশের পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশের সমাজে অসাম্প্রদায়িক এবং সম্প্রীতির সম্পর্ক বিরাজমান। বাংলাদেশে ধর্ম পালিত হয় সম্প্রীতির সঙ্গে। তাই পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা আমাদের দেশে তৈরি করা সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংঘটিত সকল জঙ্গি তৎপরতা দেশীয় জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত এবং এসব তৎপরতায় আন্তর্জাতিক কোনও গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা সামাজিক গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার পক্ষে। তবে আমরা নারী ও শিশুর সম্মান এবং রাষ্ট্র ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করতে চাই। সাইবার অপরাধ আইন এই লক্ষ্যে কাজ করবে।’
হাসানুল হক ইনু শনিবার আগামীকাল আজমীর শরীফ যাবেন। ২১ আগস্ট তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন।