ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারনে সুন্দরবনের পরিবেশগত ক্ষতির হিসেব নিকাশে আমাদের গনমাধ্যম সরগরম। একদিকে অবৈধ হাসিনা সরকার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে এই আত্মঘাতি প্রকল্পের পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছেন অন্যদিকে বিএনপি সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো এর ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছেন।
তবে এসব তথ্য উপাত্ত সাধারন মানুষের বোধগম্য হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যে শুধু সুন্দরবন ধ্বংশ করবে তাই নয় ,এই প্রকল্পে বাংলাদেশের যে বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হবে তা শুনলে আতকে উঠতে হয়।
তাই আমি এবার সহজ সরল ভাষায় একটু আর্থিক ক্ষতির হিসেবটা তুলে ধরছি….
এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মানে মোট ব্যয়ের ৭০ % বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋন আনা হবে। আনয়নকৃত ঋনের সমস্ত সুদ বহন করবে বাংলাদেশ। বাকি ৩০ % ব্যয়ের ১৫ % বহন করবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়াত্ত বৈদ্যুতিক প্রতিষ্ঠান পিডিবি
এবং ১৫ % ভারতীয় রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি প্রকল্পের লাভ ভাগ হবে ঠিক সমান হারে ! ৫০ % বাংলাদেশ, বাকি ৫০ % ভারতীয় এনটিপিসি !
প্রকল্প কোন রকম আর্থিক ঝুকির মুখোমুখি হলে সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি বহন করবে বাংলাদেশ !! আর এই ৭০ % ঋন আমাদের নিতে হবে পরম বন্ধু দেশ ভারত থেকেই।
হিসেবটা খুব সহজ, ৮৫ % ব্যয় ও সমস্ত আর্থিক ঝুঁকি বহন করে বাংলাদেশের লাভের পরিমাণ(যদি আদৌ হয়) ৫০ %, আর ১৫ % ব্যয় ও কোনরূপ আর্থিক
ঝুঁকির ভাগিদার না হয়েই ভারতীয় এনটিপিসির লাভের পরিমাণ ৫০ %!!!
কি চমৎকার হিসাব !!!!!
হিসেব এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপ ইতিমধ্যে দেশে তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সরকার বিদ্যুৎ কিনবে ৪ টাকা প্রতি ইউনিট ও খুলনার লবনচড়া এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্ল্যান্ট থেকে ৩.৮০ টাকা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হবে।
অথচ রামপালের একই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমরা কিনবো ৮.৮৫ টাকা দরে !!!! দ্বিগুনেরও বেশী টাকা দিয়ে,ভাবা যায় ?
..
রামপালে প্রয়োজনীয় সমস্ত কয়লা আমদানী করা হবে বন্ধুদেশ ভারত থেকে। এ বিষয়ে চুক্তিও হয়ে গেছে । টন প্রতি দাম পড়বে মাত্র ১৪৫ ডলার ! প্রতিদিন লাগবে মাত্র ১৩০০০+ টন কয়লা। বিশ্ববাজারে কয়লার টনপ্রতি দাম বর্তমানে
কোয়ালিটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৮০ ডলারের
কাছাকাছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যদি ২০ ঘন্টা করে ৩০ বছর চালু থাকে এবং ইউনিট প্রতি ৪.৮৫ টাকা আর্থিক ক্ষতি ধরা হয় কেবল তাহলে ক্ষতির অঙ্কটা দাড়াবে এক লাখ চল্লিশ হাজার কোটি টাকা !!! পরিবেশগত ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কথা বাদই দিলাম।এধরনের অসম যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প বিশ্বের আর কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এরপরেও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আমাদের জন্য লাভজনক নাকি ক্ষতিকর গভীর ভাবে ভাবুন দয়া করে।এমতাবস্থায় আমরা এই প্রকল্পের পক্ষে নাকি বিপক্ষে থাকবো এটা ভাবনার বিষয় নয় কি ??????