ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৭৫এর ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত লেঃকর্নেল (অবঃ) নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে তাকে কানাডা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের যে খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে এ রকম খবর পাওয়ার পরে আমাকে নিউ ইয়র্ক থেকে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন।
“আমাদের দুজনের আলোচনার প্রেক্ষিতে এই খবরটার সত্যতা জানতে কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সেখানকার হাই কমিশনার জানান, এই সংবাদটি সর্বৈব অসত্য। তিনি তার জায়গা থেকে কনফার্ম করেছেন এটার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।”
আনিসুল বলেন, কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার ওই দেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি নূর চৌধুরীর আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কেও হাই কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে ওই সংবাদের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া নূর চৌধুরী কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে বিচারে ফাঁসির রায় হয়।
নূর চৌধুরীসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছয়জন বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরের দাবি রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা চালানোর কথাও বলা হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ডবিরোধী কানাডা নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
তবে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে আলোচনায় তাকে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজতে মতৈক্য হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।এরপর বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয় যে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা।এই খবর টি ছিলো সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
কানাডায় বসবাসরত বিশিষ্টজনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কানাডার সংবিধান অনুযায়ী নূর চৌধূরীকে ফেরৎ পাঠানো সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করেন।
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বেআইনি পথে নয়, আইনি পথেই সরকার ফেরত আনতে চায় বলে জানান আইনমন্ত্রী।নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে কানাডার সংবিধানকেই সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন পেশায় আইনজীবী আনিসুল হক।
“কানাডার সংবিধানে বলা আছে- মৃত্যুদণ্ডাদেশ যেসব দেশে আছে সেখানে কোনো আসামিকে, যার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হতে পারে এমন কোনো আসামিকে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই একটা পয়েন্টের উপরে নূর চৌধুরী এখনও সেখানে টিকে আছেন। এই পয়েন্টটার সুরাহা হলেই নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে কি যাবে না, সেটার সিদ্ধান্ত হবে।”
খুনিদের আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান আইনমন্ত্রী, যিনি নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি পরিচালনা করেন।
“যখনই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হবে, তখনই নূর চৌধুরীর বিষয়ে কথা কবে। নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য সব সময়ই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। আমার বিশ্বাস এবারও সেই আলোচনা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।”
নূর চৌধুরীর পাশাপাশি আরেক খুনি রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের খবর সরকারের জানা বলে মন্ত্রী জানান।
রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে জন কেরি এসেছিলেন, ওই সময় এই ব্যাপারটা উত্থাপন করেছিলাম। কেরি সাহেব বলেছেন যে, এই ব্যাপারে দেশে ফিরে খোঁজ-খবর নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।”