DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ কি অনিবার্য ????????

india-pakistan-copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিকভাবে শক্তিশালী। চলমান কাশ্মীর ইস্যুতে যদি দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে উভয় দেশেরই পারমাণবিক হামলার আশংকা রয়েছে।

 

 তাহলে ভারত পাকিস্তান  যুদ্ধ  কি অনিবার্য ??? ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরির ব্রিগেড সেনা দফতরের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহতের পর কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী মনে করে, পাকিস্তান সমর্থিত জয়েশ-এ-মুহাম্মদ জঙ্গি গ্রুপ ওই হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ওই সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে ভারত জানিয়েছে। যে কারণে ওই হামলার পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে ভারতজুড়ে।

ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতা রাম মাধব দাঁতের বদলে চোয়াল খুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু হামলার পর সময় যত গড়ায় ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা ততটা কমে আসে।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সামরিক পন্থায় পাকিস্তানকে পাল্টা আঘাত করার চেয়ে এ মুহূর্তে কূটনৈতিকভাবেই জবাব দেয়াটা হবে যৌক্তিক। হঠাৎ করেই বুধবার রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ নিয়ে আরেক দফা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, কাশ্মীরের চলমান বিক্ষোভকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের পরস্পর সমরশয্যা শেষ পর্যন্ত আরেকটি কার্গিল যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তবে উরিতে হামলার পর যত সময় গড়াচ্ছে তত মনে হচ্ছে আপাতত কোনো পক্ষেরই যুদ্ধ করার মতো খায়েশ নেই।

কূটনৈতিক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দিকেই উভয়পক্ষের আগ্রহ বরং বেশি। উরি হামলার যোগ্য জবাব কূটনৈতিক স্তরে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ভারত নিজেকে সামরিকভাবেও প্রস্তুত রাখছে। পশ্চিম সীমান্তের সব ঘাঁটিতে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সেনাদের সব ধরনের ছুটি।

বৃহস্পতিবারের ঝটিকা অভিযানের পর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গ্রামগুলোকে খালি করা হচ্ছে। উত্তেজনার রেশ শুরু হওয়া থেকে ভারত যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে- এমন একটি আশংকা তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানে। ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিকভাবে শক্তিশালী।

চলমান কাশ্মীর ইস্যুতে যদি দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে উভয় দেশেরই পারমাণবিক হামলার আশংকা রয়েছে। যে কারণে উভয় দেশের নীতিনির্ধারক মহল চাইছে, কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে। কোনো ধরনের সামরিক হামলায় না জড়াতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে এখন কাশ্মীরের মতো বিচ্ছিন্ন হওয়ার আন্দোলন চলছে।

যদি পাকিস্তান ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করার জন্য নিজে থেকেই যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তাহলে বেলুচিস্তানকে ধরে রাখাটা কঠিন হবে। কারণ, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যখন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে, তখন মাঝখান থেকে বেলুচিস্তান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে। কারণ, ভারত তখন আফগানিস্তানের সহযোগিতায় বেলুচিস্তানে সহযোগিতার হাত বাড়াবে।

যে কারণে পাকিস্তানের এ মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার তেমন আগ্রহ নেই। অন্যদিকে ভারত সেনাবাহিনী দিয়ে কাশ্মীরের চলমান বিক্ষোভকে আরও কঠোরভাবে দমনের নীতি গ্রহণ করতে পারে। এরই শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে কাশ্মীরকে ঘিরে এ মুহূর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সেই সুযোগে চীন ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সাতটি প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে আবার নতুন করে উসকে দিতে পারে। বুধবার রাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে মর্যাদার প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সীমান্ত পেরিয়ে হামলাটি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় হামলার দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। সীমান্ত পেরিয়ে ভারত কোনো হামলা চালালে একই কায়দায় তার সমুচিত জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। অভিযানটি একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল বলে জানায় ভারত।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, শীর্ষ সামরিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারত বলছে, নিহত দুই পাকিস্তানি সেনা জঙ্গিদের সহযোগিতা করছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সামরিক অভিযানবিষয়ক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রনবীর সিং দাবি করেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী লাইন অব কন্ট্রোলে আস্তানা গড়ে সেখানে অবস্থান করছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী গত রাতে সেখানে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে।

উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা হতাহত হয়েছে।’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী হামলা চালাতে লাইন অব কন্ট্রোলে ওই জঙ্গি আস্তানাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ধারাবাহিকভাবে এমন অভিযান চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় বিমানবাহিনী নাকি স্থলবাহিনী এ অভিযান চালিয়েছে সে ব্যাপারেও কিছু জানাননি রনবীর সিং।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবি করলেও তা মানছে না পাকিস্তান। পাকিস্তানের দাবি, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে নয় বরং আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিতে তাদের দুই সেনার মৃত্যু হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে ভারত গুলি চালিয়েছে বলে দাবি পাকিস্তানের।

দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্দেহমূলক জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যা প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা উল্লেখ করে ধোঁকা দিচ্ছে ভারত।

তবে পাকিস্তান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চায় যে, নিজস্ব ভূখণ্ডে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট হামলা চালানো হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একই ধরনের জবাব দেবে।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কঠোরভাবে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবেশীর প্রতি শান্তিপূর্ণ আচরণকে আমাদের দুর্বলতা ভেবে ভুল করা উচিত নয়।’ দ্য ডন জানায়, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে এ গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ গোলাগুলি অব্যাহত থাকে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!