ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হেরে গেল বাংলাদেশ। প্রতিটি মুহূর্তেই জয়ের পাল্লা ছিল বাংলাদেশের দিকেই। শেষমেষ হাতের মুঠোয় এসে বেরিয়ে গেল ম্যাচ। শেষ ৫১ বলে ৩৮ রানের প্রয়োজন ছিল। হাতে ছিল ৬ উইকেট। কিন্তু সেই ম্যাচও হারলো বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত খেলছেন। ইমরুল কায়েস দারুণ সেঞ্চুরির পর আছেন ক্রিজে। সবার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জিতবে। কিন্তু তীরে এসেই ডুবল তরি। শেষ দশ ওভারের ঘরে ঢুকেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল টাইগারদের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেটি অসাধারণ জয় হওয়ার কথা সেটিতে হারের বিষাদে ঢাকা পড়ল ক্রিকেট পাগল দেশটা।
বৃথাই গেল ইমরুলের উপেক্ষার জবাব দেওয়া ১১২ রানের ইনিংস। বৃথাই গেল সাকিবের ৫৫ বলে খেলা ৭৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৩১০ করে জিতলে বাংলাদেশের দেশের মাটিতে নতুন সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড হয়। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো ৩০০ পেরিয়ে জেতা হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে ভেঙে পড়া শুরু। সেই ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ মুঠো গলে বেরিয়ে গেল। হারতে হল ২১ রানে। পেছন থেকে উঠে এসে জিতল ইংল্যান্ড।
সাকিব আল হাসানের আউটের পর যেন আর কেউ দাঁড়াতেই পারলো না ইংলিশ বোলারদের সামনে। শেষ পর্যন্ত ১৩ বল বাকি থাকতে ২১ রানে হারে বাংলাদেশ।
শুক্রবার হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে বেন স্টোকসের শতরান এবং জস বাটলারের ঝড়ো ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রান করে ইংলিশরা।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ৪১ রান সংগ্রহ করে। ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন টাইগার বোলার শফিউল। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ভিঞ্চকে ব্যক্তিগত ১৬ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি।
এরপর ইংলিশদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান জেসন রয়কে ফিরিয়ে দিয়ে নিজের প্রথম উইকেট শিকার করেন বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দলীয় ৬১ রানের মাথায় সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন ইংল্যান্ডের এ মারকুটে ব্যাটসম্যান। রয় ৪১ রান করেন।
এরপরের ওভারেই সাব্বিরের সরাসরি থ্রুতে ব্যক্তিগত ৫ রান করে রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন জনি বেইস্টরো। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে ডাকেট ও স্টোকস। ডাকেটকে ৬০ রানে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন শফিউল।
ডাকেট ফিরে গেলেও দুইবার জীবন পাওয়া স্টোকস ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকান। তবে শতরান করেই মাশরাফির বলে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন তিনি। স্টোকসের ১০১ রানের ইনিংসটি ৪টি ছয় ও ৮টি চারে সাজানো ছিল।
এরপর মঈন আলীও উইকেটে টিকতে পারেননি। মাশরাফির বলে মাত্র ৬ রানে তামিমের তালুবন্দী হন তিনি।
তবে মাঠে নেমেই ঝড় তোলেন বাটলার। মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। ৩৮ বলে ৬৩ রান করে সাকিবের বলে আউট হন বাটলার। ৪টি ছয় ও ৩টি চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত ৩০৯ রানে শেষ হয় ইংলিশদের ইনিংস। সফরকারীদের এই রান সংগ্রহে অবশ্য টাইগার ফিল্ডারদেরও বেশ অবদান রয়েছে! খুবই বাজে ফিল্ডিং দেখল টাইগার ভক্তরা।
বেন স্টোকস ও বাকেটের ৪টি ক্যাচ ফেলে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোশাররফ হোসেন রুবেল। তাছাড়া বাটলারেরও ক্যাচ ধরতে পারেনি তাসকিন আহমেদ।
এরপর ৩১০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে ৪৬ রান সংগ্রহ করে তামিম ও ইমরুল। তবে ব্যক্তিগত ১৭ রানে অভিষেক হওয়া জ্যাক বলের শিকার হন তামিম।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন সাব্বির রহমান। কিন্তু ভাগ্য যেন তার সাথে ছিল না। জ্যাকের বলে ওভার বাউন্ডারি মারতে গিয়ে উইলির হাতে ধরা পড়েন তিনি। উইলি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বলটি তালুবন্দি করেন। সাব্বির মাত্র ১১ বলে ১৮ রান করেন।
সাব্বির ফিরে গেলেও ইমরুল কায়েস নিজের ১৩তম অর্ধশতক তুলে নেন। মাহুমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি। পরে রিয়াদ ২৫ রানে আদিল রশিদের বলে আউট হন। মুশফিকুর রহিমও ভালোই খেলছিলেন।
কিন্তু উইকেটে সেট হয়ে গিয়েও নিজের উইকেট বিলিয়ে দিলেন তিনি। বেশ কিছুদিন হলো স্লগ সুইপ খেলে আউট হচ্ছেন তিনি। আজও সেরকম একটি শট খেলে আদিল রশিদের বলে মাত্র ১২ রানে আউট হন টাইগারদের টেস্ট ক্যাপ্টেন।
এরপর সাকিবের সঙ্গে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান। তাদের জুটিতে আসে ১১৮ রান। সাকিব ৫৫ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৯ রান করেন।
একসময় মনেই হয়েছিল জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু জ্যাকের এক ওভারেই সব শেষ। সাকিব আউটের পর মোসাদ্দেকও শূন্য রানে আউট হন।
পরের ওভারেই আউট হন মাশরাফি। উইকেট বিলিয়ে দেন তিনিও। এরপর ইমরুল কায়েসও যেন তাড়াহুড়ো করে ১১২ রানে স্ট্যাম্পিং হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
পরের ব্যাটসম্যানরা শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমান। শেষ পর্যন্ত ১৩ বাকি থাকতে ৩৮৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।