ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সিরিয়াকে কেন্দ্র করে এ বছরের শেষ দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এমন সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা কর্মকান্ড চালানো মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটফর এমনটাই মনে করছে। এর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সহযোগিতা এ সময়ে নূন্যতম পর্যায়ে চলে আসবে। কারণ, তাদের মধ্যে সিরিয়া সঙ্কট নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় কোন আগ্রহই থাকবে না। এ খবর দিয়েছে রাশিয়ার ওয়েবসাইট প্রাভদা।
এতে স্ট্রাটফরের বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এ সময়ে কূটনৈতিক বিরোধ মিটিয়ে ফেলার প্রতি রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করবে। তারা সামরিক কৌশলকেই অবলম্বন করবে। অন্যদিকে যেহেতু প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিদায় সমাগত তাই যুক্তরাষ্ট্রও গঠনমুলক কোন আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।
ওইসব বিশেষজ্ঞ বলছেন, সিরিয়ায় সুন্নী বিদ্রোহীদের শক্তিশালী করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে আলোচনা থেকে বিরত থাকবে। এর ফলে বছরের শেষ দিকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে তুরস্কের সেনাদের উপস্থিতি এ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। তুরস্কের সেনারা আমেরিকার প্রশ্রয়ে সিরিয়ার দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হবে।
এটা করা হবে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা পরিহার করার জন্য। একই সময়ে পারস্য উপসাগরে থাকা ওয়াশিংটনের মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলগত খেলা শুরু করবে। তারা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টির জন্য কাজ করবে। ওদিকে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও পারস্য উপসাগর বিষয়ক হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা ফিলিপ গর্ডন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ভুল করছেন। এর জন্য রাশিয়াকে মূল্য দিতে হবে।
এতে তিনি আরও লিখেছেন, ইউরোপ ও আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আলেপ্পোতে মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে। অবরোধ তুলে নেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করবে ইউরোপ। এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয় হবে। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে রাশিয়াকে দায়ী করে মার্কিন প্রশাসন ‘উদারপন্থি বিরোধীদের’ অস্ত্র সহায়তা দেবে।
এর ফলে রাশিয়ার হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। ইন্সটিটিউট অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের সেন্টার ফর আরব অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো বরিস ডলগভ বলেছেন, এমন নীতি গ্রহণের উদ্দেশ্য একটাই হবে তা হলো সিরিয়া সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দেয়া। এর অর্থ হলো যেকোনো মূল্যে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের ক্ষমতাকে বিনাশ করে দেয়া। সিরিয়াকে বিভক্ত করে দেয়া। মধ্য প্রাচ্য থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেয়া।
এমন অবস্থায় এসব দ্বন্দ্ব কবলিত রাজ্যগুলোতে ক্ষমতায় আসবে সুন্নীরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুগত, রাশিয়া ও ইরানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। রাশিয়াকে হুমকি দেয়া সহ এমন সব উদ্দেশে ওই প্রবন্ধটি লিখা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ওয়াশিংটন আগ্রাসীভাবে উগ্র ইসলামপন্থিদের অস্ত্র সরবরাহ দিতে পারে। এ জন্য রাশিয়ার প্রস্তুতি নেয়া উচিত ও এ পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এরই মধ্যে এস-৩০০ নামের আকাশ পথের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এর অংশ হিসেবে। আরও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে যেসব ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এতে তা নূন্যতম পর্যায়ে চলে আসবে।