ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশে ভিন্ন মোড়কে বাকশালী শাসন চলছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন মতকে কখনোই সহ্য করতে পারে না বলে ভিন্ন মোড়কে এখন একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েমের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন তারা ১৯৭২-৭৫ সালে এ্কদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল।
তিনি বলেন, এই সরকার সভা সমাবেশের জায়গাগুলো সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। আমরা যখনই কোনো সভা সমাবেশের আয়োজন করতে চাই সরকার তখনই বিধি নিষেধ আরোপ করে। আগে পল্টন ময়দানে, মুক্তাঙ্গণে সভা করা যেত। এখন সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর আইন করে দিয়েছে যে সভা করতে হলে পুলিশের অনুমতি লাগবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপির যৌথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভুইয়া প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ৭ নভেম্বরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিবস। সেই দিনই বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভিত্তি রচিত হয়েছিল। এই দিনটিকে যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। এ ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। আশা করি তারা অনুমতি দিবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারে না। আসলে আওয়ামী লীগ কখনোই ভিন্ন মত সহ্য করতে পারে না। তারা এখন ভিন্ন মোড়কে পুরনো কায়দায় একদলীয় বাকশালী শাসন চালাচ্ছে। বিরোধী দলকে দমন করে সেই পথেই এগোচ্ছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
দেশ আজ গণতন্ত্র শূন্যঃ
এদিকে অপর এক সভায় ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের রক্তে সন্ত্রাস রয়েছে। দেশে ১০ বছর ধরে গণতন্ত্র নেই। তিনি বলেন, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে বুঝা গেছে সন্ত্রাস করাই হচ্ছে আওয়াম লীগের ইতিহাস। শিগগিরই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনে নামবেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীতে পৃথক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
রাজধানী কচি কাঁচা ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় রাজনীতিবিদরা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যে, আওয়ামী লীগের রক্তে সন্ত্রাস আছে। এ সময় তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সেদিন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা লগি বৈঠাসহ এসে মানুষ হত্যা করে তাদের ওপর নৃত্য করেছে। এর এখনও বিচার হয়নি। ভবিষ্যতে এর বিচার করা হবে।
বিরোধী দল ও মত দমনে সরকার নীল নকশা তৈরি করেছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এই নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের লাশও পাওয়া যায় না, কখনও কখনও টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার হয়।
বর্তমান সরকার যে বিরুদ্ধ মতকে পছন্দ করে না, ৩৭টি অনলাইন পত্রিকা বন্ধ করে দেয়াই তার প্রমাণ বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণমাধ্যম তাদের আস্থাভাজন না হলেই তাদের বন্ধ করে দেয়া হয়।
সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাকে বিনা বিচারে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর থেকে গত ১০ বছ ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামবো।
দেশে বর্তমানে কোনো বিরোধী দল নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধী দল। দেশ এবং বিদেশের কেউ তাদেরকে বিরোধী দল হিসেবে মনে করে না। তাদের সঙ্গে কেউ বসে না। প্রকৃতপক্ষে বিএনপিই দেশে গণমানুষের আস্থার প্রতীক।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনায় ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।