ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী এবং বর্তমানে নিবন্ধিত সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ৩বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
জনাকির্ন এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
বাছাই কমিটির সদস্যদের সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বিশ্ববিদ্যায়লের সাবেক অধ্যাপক ও দক্ষ যোগ্য নারীদের মধ্য থেকে নেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, জেলা জজের মর্যাদা সম্পন্ন, ন্যূনতম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার সম্পন্ন, সিনিয়র আইনজীবী, বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হবেন।
তিনি বলেন , বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দু’জন ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আটজন ব্যক্তিকে চার নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্তির সুপারিশ করবে বাছাই কমিটি।
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে দুজনের মধ্যে একজন এবং নির্বাচন কমিশন পদে আটজন থেকে চারজনকে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন তার বক্তৃতায় ইসিকে অধিকতর শক্তিশালীকরণের জন্য বিধিবিধান ও আরপিও সংস্কার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ইসির নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে এবং সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে।
খালেদা জিয়া ইসি কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের আহ্বান জানান। এছাড়া নির্বাচনের সময় ইসি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করবে বলেও প্রস্তাব দেন তিনি।
খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ভোটগ্রহণের সময় ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তা পোলিং বুথেই রাখতে হবে। আর ভোট গ্রহণের পর খালি ব্যালট বাক্স যদি থাকে তা নিরাপদে রাখতে হবে।
বিএনপি চেয়াপারসন রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অতিসত্ত্বর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়া পরিশেষে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আবদুল মান্নান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি গোলাম মোর্ত্তজা, আজহারুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মো. আবদুর রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবীন আইজীবি ব্যারিস্টার রফিক উল হক, প্রাক্তন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, জাবির প্রাক্তন উপাচার্য ড. মোস্তাহিদুর রহমান, দিলারা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।