ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক,মাহমুদুর রহমান। অনেকেই তার নামের আগে যুক্ত করেন ‘সাহসী সম্পাদক’, এর অবশ্য যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে- বাংলাদেশে তিনিই প্রথম কোনো সম্পাদক যাকে এক নাগাড়ে ১৩১৯ দিন থাকতে হয়েছে কারাপ্রকোষ্ঠে।
মাহমুদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন।
জাপানে প্রকৌশল বিষয়ে কাজ করার সময় ১৯৮৬ সালে জাপান থেকে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে ব্যবসা প্রশাসনের উপর এমবিএ করেন।
মাহমুদুর তার কর্মজীবন ব্রিটেনের গ্যাস কোম্পানি ব্রিটিশ অক্সিজেন কোম্পানিতে অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি মুন্নু সিরামিক, ডানকান ব্রাদার্স, বেক্সিকো গ্রুপ, পদ্মা টেক্সটাইল এমডিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। জাপানেরও বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সুনামের সহিত কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে মাহমুদুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি আর্টিসান সিরামিক লিমিটেড নামে কোম্পানি গড়ে তোলেন।
এটিই সিরামিকে দেশের প্রথম প্রযুক্তিগত ‘ব্রেক থ্রো’ ও চীনা বোন কারখানা ছিল। ২০১৩ সালে তিনি আর্টিসান বিক্রি করে দেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে ২০০২ মাহমুদুর জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তিনি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পাঁচ আই ( ‘five 'I's’) থিওরি প্রচলন করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো- মেঘনা এনার্জি লিমিটেড, কাচঁপুরের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আনয়ন। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়; যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০০৪ সালে জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালের শেষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অসন্তোষের জেরে সৃষ্ট ওয়ান ইলেভের পর সেনা সমর্থিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ‘দৈনিক নয়াদিগন্তে’ ধারাবাহিক কলাম লিখতে শুরু করেন মাহমুদুর রহমান।
এরপরেই তিনি মূলত পাঠক সমাজের কাছে একজন সাহসী লেখক এবং সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। ২০০৮ সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদুর রহমান। একজন সম্পাদকের পাশাপাশি সমকালীন রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গের একজন সুলেখকও বটে।
‘জেল থেকে জেলে’, ‘গুমরাজ্যে প্রত্যাবর্তন’, ‘মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই’ সহ বেশকিছু পাঠক নন্দিত বইও প্রকাশ করেছেন মাহমুদুর রহমান। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল সকাল পৌনে নয়টায় রাজধানীর কাওরান বাজারের আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘ব্লগারদের লেখা’ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলাসহ একে একে ৭০টি মামলায় তাকে জড়ানো হয়।
সব মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন লাভের পর বুধবার দুপুর ১টার পরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন আলোচিত এই কলম সৈনিক। এর আগে ২০১০ সালে আরেকবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ ১০ মাস কারাভোগ করেন তিনি।