ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে বলে বলা হয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড-এর এক প্রতিবেদনে।
সংস্থাটির ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিবেদন ২০১৬’ প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। শনিবার ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসময় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ফাহমিদা খাতুনও বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি মানদণ্ড দিয়ে মরিমাপ করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
তবে এরপরও নিয়ম অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে জানান তিনি। এলডিসির তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বের হতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা তা তুলে ধরেন তৌফিক।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে পরিসংখ্যানকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সহায়ক একটি গ্র্যাজুয়েশন প্লাস কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কৌশল আমাদের চলমান উন্নয়নকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
“ওই সময়ে আমাদের রপ্তানিপণ্যের বহুমূখীকরণ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের রপ্তানি একটি-দুটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠা দরকার। একইসঙ্গে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। সে ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।”
প্রতিবেদনে একটি জাতীয় নীতিমালার অধীনে থাকার কথা বলা হয়েছে, যেখানে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্ব। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সরকারি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়ানো, বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতে যেসব সমস্যা আছে সেসব দূর করতে হবে।
তৃতীয়ত, দেশজ সম্পদ আহরণ বাড়ানো; এটা না করতে পারলে সার্বিক উন্নয়নের গতি তা কমে আসবে। চতুর্থ হচ্ছে, সরকারি বিনিয়োগ অর্থায়নে শুধু বড় প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও যেন সমভাবে এর সুফল পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব, শিল্পনীতিকে কৃষিবান্ধব করা এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উন্নয়নে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
রিসার্চ ফেলো তৌফিক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। এসময়ের মধ্যে উৎপাদন খাতে আরও অনেক বেশি হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একইসঙ্গে সেবা খাতের উন্নয়ন করতে হবে, যাতে এ খাতেও বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাম্প্রতিক আমাদের যে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তাতে রেমিটেন্সের অবদান সবচেয়ে বেশি। ভবিষ্যতে সেটা নাও থাকতে পারে।ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল থাকাও মাথা পিছু আয় বাড়ার আরেক কারণ বলে মনে করেন তিনি।
আগের বছরগুলোতে দফায় দফায় টাকার মান কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা হয়নি। ইতিমধ্যেই টাকা অতিমূল্যায়িত হচ্ছে। রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হলে আমাদের মাথা পিছু আয় কমে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতে মানব সম্পদের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মানব সম্পদের উন্নতি ত্বরান্বিত করতে পারলে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে টেকসইভাবে বের হয়ে আসতে পারবে বলে তার বিশ্বাস।