ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে আজ শনিবার গনতন্ত্র হত্যা দিবসের মহামাবেশ করার অনুমতি দিলোনা হাসিনা সরকার।সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলো বিএনপি। এখন পর্যন্ত সমাবেশের কোনো অনুমতি মিলেনি।
অথচ আওয়ামী লীগ গনতন্ত্রের বিজয় দিবসের নামে ঢাকায় কয়েকটি জনসভা করেছে বলে মিডিয়ায় দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় সমাবেশের জন্য কোনো আবেদন তারা পায়নি। ডিএমপি’র এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী গতকাল রাতে জানান, সমাবেশের জন্য তারা কোনো আবেদন পাননি।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে না হোক, নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দিন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও একই প্রস্তাব দিয়েছেন। নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপি’র প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছি, এখন পর্যন্ত পাইনি। এখনও যদি অনুমতি দেন, কাল জনসভা সফল করবো। সেখানে না দিয়ে যদি পার্টি অফিসের সামনে দেন, তাহলেও আমরা জনসভা সফল করতে পারবো। আমরা দু’টো প্রস্তাব-ই রাখছি। আমরা আশা করছি আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আপনারা আমাদের সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানেই সভা করার অনুমতি দেবেন। এভাবে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করবেন না; এভাবে দরজা জানালা বন্ধ করে দেবেন না। দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে। হাজারটা মত আসবে, পথ আসবে। সেখান থেকেই তো গণতন্ত্র বিকশিত হবে বলেন- বিএনপি’র মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ৫ই জানুয়ারি সভা করিনি। ওইদিন ‘দেশনেত্রীর’ মামলার হাজিরা ছিল। আমরা যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে ৭ই জানুয়ারি সভা করতে চেয়েছি। পিডব্লিউডি আমাদের অনুমতি দিয়েছে। পুলিশের অনুমতি পাইনি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে গণতন্ত্রের সব কিছুকে ক্লোজ করে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পল্টন ময়দানে মিটিং করতাম, সে পল্টন ময়দান বন্ধ। মুক্তাঙ্গনে প্রোগ্রাম করতাম, সেটাও বন্ধ। অর্থাৎ, তারা জনগণকে ভয় পায়। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি সংগঠিত হই, কোনো বাধা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে না। গণতন্ত্রের বিজয় হবে।
প্রস্তুতি সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপি’র সহ-সমাজ কল্যাণ বিষয় সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ইউনুস মৃধা প্রমুখ।
৫ই জানুয়ারির কলঙ্ক মোচন হবে না: মওদুদ
এদিকে ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন জাতির সঙ্গে প্রতারণা- মন্তব্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ইতিহাসের কলঙ্ক হয়ে থাকবে। যা কোনোদিন মোচন হবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল জাতীয় গণতান্ত্রিক মঞ্চ আয়োজিত ‘৫ই জানুয়ারি নির্বাচন: ইতিহাসের কলঙ্ক’- শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল তালুকদার খোকনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের সব স্তম্ভকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ কোটি ভোটার ভোটকেন্দ্রেই যেতে পারেননি। কেন না, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পৃথিবীর নির্বাচনের ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই। আওয়ামী লীগও জানে সংবিধান অনুযায়ী এটি কোনো নির্বাচনই হয়নি। আর সেই নির্বাচনের দিনটিকেই আওয়ামী লীগ বলছে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এক, আর অন্যদের কাছে আরেক। আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রের কথা বলে, তা হাস্যকর, তা জাতির কাছে প্রতারণা, প্রহসন, জনগণকে হেয় করা, জনগণের অধিকারকে লঙ্ঘন করা বোঝায়। ৫ই জানুয়ারি যারা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করেন তারা জ্ঞানপাপী।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে গণতন্ত্রের কথা বলছেন, গায়ের জোরে, পুলিশের ছত্রছায়ায় বিজয় দিবস পালন করছেন, যেদিন ক্ষমতা ছেড়ে যাবেন, সেদিন মূল্যায়ন করবে জনগণ। সেদিন জনগণ ৫ই জানুয়ারিকে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস হিসেবেই পালন করবে।
বিএনপি’র এ সিনিয়র নেতা আরও বলেন, সরকার অনেক উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু তারা নতুন প্রজন্মের কাছে কোনো মূল্যবোধ দিতে পারেনি। কোনো ভবিষ্যৎ রেখে যায়নি। তারা পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ ধ্বংস করেছে। জনগণের কাছে সরকারের প্রশাসনের কোনো জবাবদিহিতা নেই। বিএনপিকে ৭ই জানুয়ারি কেন সমাবেশ করতে দেয়া হবে না প্রশ্ন রেখে দলটির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়। তথাকথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও অনুমতি দেয়। কিন্তু বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সমাবেশ করার অনুমতির জন্য গেলেও তাদেরকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনকালে দেশের বিভিন্নস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।