DMCA.com Protection Status
title="৭

হাসিনার কাছে মোদীর কি বার্তা নিয়ে আসছেন জয়সঙ্কর ????

hasinamodi copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এবারের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বেশ খানিকটা ভিন্ন ধরনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

এই সফরের ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের জন্য আরো অনেক বার্তা থাকতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য পররাষ্ট্র সচিবের চাইতে ভারত সরকারের নীতি নির্ধারণে বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব সুব্রাহ্মনিয়াম জয়সঙ্করের প্রভাব খানিকটা বেশি।

এবার জয়সঙ্কর শ্রীলঙ্কা, চীন সফর করার পর বাংলাদেশে আসছেন। তার আগের দুটি সফরেরও ভিন্ন মাত্রা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মিশন নিয়েই তিনি বাংলাদেশ আসছেন এমন ধারণা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা পৌছে শুক্রবার সকালে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন জয়সঙ্কর। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে তার।

 

তিনি শেখ হাসিনার কাছে নরেন্দ্র মোদির গুরুত্বপূর্র্ণ বার্তা পৌঁছে দেবেন। শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফর জয়সঙ্করের একটি প্রধান অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক দিল্লিতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন তিনি।

দু’দফা পেছানোর পর শেখ হাসিনার এই সফর কবে অনুষ্ঠিত হবে এখনো তার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট হয়নি। মার্চের শেষে বা এপ্রিলে সফরের কথা বলা হলেও কিছু চুক্তি সম্পাদনের বিষয় রয়েছে যেগুলোকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা দূর হয়নি। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে স্বাক্ষরের জন্য ৪১টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের খসড়া ঢাকার কাছে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি বেশ স্পর্শকাতর।

তিস্তা পানি বণ্টন ও পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণের ব্যাপারে দিল্লির সম্মতি চায় ঢাকা। পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণে এর একটিতেও দিল্লি সম্মত হবে বলে আভাস পাওয়া যায়নি। অথচ ২০১১ সালে ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর গঙ্গা-ব্যারাজ তৈরির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। এই ব্যারাজ তৈরি করার জন্য দু’দেশের মধ্যে যৌথ টেকনিক্যাল টিমও গঠন করা হয়। কিন্তু এরও বিরোধিতা করছে পশ্চিম বঙ্গ সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার মতে, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের আলোচনায় সামরিক সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ও থাকবে। গত নভেম্বরে ঢাকা সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর।

এর চেয়েও আরো জটিল একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে বিপুল অঙ্কের চীনা বিনিয়োগ। ভারতের কলকাতাভিত্তিক পত্রিকা দ্যা টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে যৌথভাবে জরিপ চালাতে আগামি মাসে প্রথম সমুদ্র সংলাপে বসবে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় নয়াদিল্লি’র ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে এ আয়োজন।

পত্রিকাটি লিখে, নয়াদিল্লি ও ঢাকা সমুদ্র মনিটারিংয়ে যৌথ টাক্সফোর্স গঠন করেছে। ঢাকায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। সামুদ্রিক সহযোগিতা জন্য একটি ‘রোড ম্যাপ’ প্রণয়ণের কথাও রয়েছে সেখানে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা বাতিল হওয়ায় নতুন পায়রা সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ভারত। সোনাদিয়ায় চীনের অর্থায়ন করার কথা ছিল। ভারতের প্রবল বিরোধিতা ও সেইসাথে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকায় তা বাতিল করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আর সোনাদিয়া প্রকল্প বাতিল হওয়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগ করতেও চীন প্রচ- আগ্রহী। ফলে সামুদ্রিক আধিপত্যের লড়াইয়ে একরকম মুখোমুখী এ দু’দেশ। আর এ বিষয়টি কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বাংলাদেশ।

দিল্লিতে সাম্প্রতিক আলোচনার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানান, নতুন সামুদ্রিক এলাকা যৌথভাবে নিরীক্ষণ করতে আমাদের জন্য সামুদ্রিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা হয়েছে। যা খুবই ইতিবাচক। গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে সামুদ্রিক সহযোগিতার ওপর যৌথ টাক্সফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত উঠে আসে।

টেলিগ্রাফ’র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য বঙ্গোপসাগরে তেল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানে ভারতের সঙ্গে সামুদ্রিক সহযোগিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাতে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসার খবর প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন বাংলাদেশে তাদের গ্যাস ক্ষেত্রের মালিকানা একটি চীনা কোম্পানি’র কাছে ২শ কোটি ডলারে বিক্রির ব্যাপারে প্রাথমিক চুক্তি করেছে।

বাংলাদেশ সমূদ্র উপকূল বরাবর বেশ কটি বিদ্যুৎ প্রকল্পেও চীন বিনিয়োগ করছে। আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কেনার পর ২৫ বিলিয়ন ডলারের চীনা বিনিয়োগের অনেক প্রকল্প নিয়েই সন্দেহ করছে নয়াদিল্লি। এসব বিষয় বিশেষভাবে দেখার জন্য ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর নভেম্বরে ঢাকায় আসার সময় কোস্ট গার্ড প্রধান ও তিন বাহিনীর ডেপুটি চীফদের সাথে নিয়ে এসেছিলেন। এর ফলোআপের বিষয়টিও জয়সঙ্কর দেখবেন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ২০১৭ সালেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দিল্লি এখন বিশেষভাবে আগ্রহী বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের হয়ে ওয়াশিংটনকে ভারতের আশ্বস্ত করার ব্যাপারে শর্তের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়াও বিরোধী মতবিহীন বাংলাদেশ সংসদ ভারতের স্বার্থের অনুকূল বলে মনে করা হচ্ছে না। দেশটির মূল্যায়ন অনুযায়ী ভারতের মৌলিক অনেক স্বার্থের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে একতরফা সংসদ গঠনের পর দিল্লির অনেক পরামর্শকে আমলে নেয়া হচ্ছে না। বিশেষত চীনের বিপুল বিনিয়োগ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে যে ধরনের ধারণা দেয়া হয়েছিল বাস্তব চুক্তি বা সমঝোতা সে অনুযায়ী হয়নি। এক্ষেত্রে সংসদীয় ভারসাম্য সরকারের উপর কার্যকর চাপ তৈরি করে রাখার জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একটি সূত্রের আভাস অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য মোদির বার্তার একটি প্রধান দিক হবে এ বছরের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ যাতে আবার ক্ষমতায় আসে সে জন্য দিল্লির সমর্থন থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের আয়োজন বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয়া হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আবার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলেও আভাস দেয়া হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেশি দেশের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের পরামর্শ ও সহযোগিতা চেয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!