আবু সায়েমঃ ৫ জানুয়ারীর প্রধানমন্ত্রী (অবশ্যই অবৈধ) শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি দাবী করেছেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শ্রদ্ধা নিবেদনকালে মূল বেদীতে উঠে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন।” তিনি নতুন প্রজন্মকে ভাষার সঠিক ব্যবহারে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান!!!
দেখা যাচ্ছে, দু’টি বিষয়ে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা :–
১) শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট
২) ভাষার ব্যবহার দ্বিতীয়টি দিয়ে আরম্ভ করি।
এ ইস্যুতে আমার সহজ-সরল প্রস্তাব, আওয়ামী লীগ নেত্রী দ্রুত একটি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন যার অধ্যক্ষা হবেন তিনি নিজে। সেখানে কেবল নতুন প্রজন্ম নয় নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়া, সাদা-কালো, আস্তিক-নাস্তিক সব ধরণের মানুষের সুযোগ থাকবে শিক্ষা গ্রহণ করার।
শেখ হাসিনা পরম আদরযত্ন, মমতায় তাদের শেখাবেন কী সুন্দরভাবে অসত্য, অপ্রয়োজনীয়, তির্যক, বক্র, অশোভন, ক্লেদাক্ত, বিষাক্ত শব্দের নিখুঁত ব্যবহারে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা। ভাষা ব্যবহারে যারা অধ্যক্ষাকেও ছাড়িয়ে যাবে তারা রাষ্ট্রীয় খরচায় ভারত সফরের সুযোগ পাবে।
এবার আসি প্রথম ইস্যুতে যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার মাথা গলদঘর্ম। চেতনায় শহীদ মিনার পবিত্র বটে তথাপি ফুল দিতে গিয়ে তার বেদীতে উঠলে মিনারের ইজ্জত চলে যায়, এমন কথা জন্মেও শুনিনি! তাই ‘নষ্ট’ করে দেওয়ার কষ্ট এখন আমাকে সারাক্ষন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
তবে কথা হচ্ছে, গত ৮ বছর চোখের সামনেই নষ্ট হতে দেখেছি অমূল্য বহুকিছুর পবিত্রতা। সেগুলোর মূলে আবার একজনই ব্যক্তি – শেখ হাসিনা! বিএনপি চেয়ারপার্সনতো ‘নষ্ট’ করেছেন (হাসিনার মতে) শহীদ মিনারের ‘পবিত্রতা’, আসুন দেখি শেখ হাসিনা নষ্ট করে ফেলেছেন কী কী পবিত্রতা (অসংখ্য উদাহরণের গুটিকতক মাত্র)-
১) গায়ের জোরে একতরফা ‘ভোটাভুটি’র উৎসব করে নষ্ট করেছেন ‘নির্বাচন’ নামক মহান প্রতিষ্ঠানটির পবিত্রতা।
২) অনির্বাচিত, অপদার্থ, মেরুদণ্ডহীন একদল ভেড়াকে ‘সাংসদ’ বানিয়ে; রওশন এরশাদের মতো অর্বাচীন মহিলাকে বিরোধী দলীয় নেত্রী সাজিয়ে; আর একের পর এক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে নষ্ট করেছেন জাতীয় সংসদের পবিত্রতা।
৩) একদলীয়, অবৈধ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছায় সরকার পরিবর্তনের সুযোগ রহিত করে এবং অভিনব ৭খ ধারা সংযোজনের মাধ্যমে নষ্ট করেছেন সংবিধানের পবিত্রতা।
৪) অযোগ্য, মাতাল, উন্মাদ, বখাটেদের মন্ত্রীসভায় জায়গা দিয়ে নষ্ট করেছেন সরকারের পবিত্রতা।
৫) দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, নগ্ন হস্তক্ষেপ ও ন্যায়বিচার রহিতকরণের মাধ্যমে নষ্ট করেছেন আদালতের পবিত্রতা।
৬) গুম, খুন, অত্যাচার-নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভূতপূর্ব ইতিহাস রচনা করে নষ্ট করেছেন সর্বজনস্বীকৃত মানবিক মূল্যবোধের পবিত্রতা।
৭) মসজিদ-মন্দির-গির্জায় হামলা চালিয়ে, নবী-রাসুল-আলেম-ধর্মগুরুদের কটাক্ষকারী নাস্তিকগোষ্ঠীকে ক্রমাগত আস্কারা ও সুরক্ষা দিয়ে নষ্ট করেছেন ধর্মের পবিত্রতা।
৮) নির্লজ্জভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়ে নষ্ট করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পবিত্রতা।
৯) সতের কোটি মানুষের মস্তক পদদলিত করে অপশাসনের চূড়ান্ত নজির স্থাপনের মাধ্যমে নষ্ট করেছেন বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের পবিত্রতা।
তারপরও হয়তো খালেদা জিয়াই দোষী, বেদীতে উঠে তিনি শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন! দালাল, পরান্নভোজী বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের চোখেও হয়তো তিনিই হবেন অপরাধী। কারণ শেখ হাসিনার রাজত্বে তার কথাই আইন, তার ইচ্ছেই সংবিধান।
সেখানে দেশপ্রেমিকের গলায় ঝুলবে ফাঁসির দড়ি, এটাই নিয়ম। তবে দিন বদলায়, দ্রুত এবং খুব দ্রুত। স্বৈরাচারের ক্ষমতাও অফুরন্ত নয়। ফাঁসির দড়ি থেকে যায়, ব্যক্তির বদল হয় মাত্র।
লেখক: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সালেহ মো. সায়েম।