জাহিদ এফ সরদার সাদীঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, একটি অরাজনৈতিকসংগঠন। এই সংগঠনটি এবং এর প্রধান বর্ষিয়ান আল্লামা শফির বাংলাদেশের দৃশ্যপটে হঠাৎ আগমন।
গত ২০১৩ সালের ৫ই মে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন বাংলাদেশের জন্য। কারন ঐ দিনে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ হেফাজত ইসলাম নামে এই সংগঠনের আহবানে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে এবং কিছু ইসলামী দাবী পুরনের জন্য সরকারকে আহবান করে।
কিন্তু বাংলাদেশের সরকার বিষয়টি কে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে রাতের আঁধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা হাজারো হাফেজ হুজুরদের হত্যা করে এবং বিষয় টি ধামা চাপা দেয়। অথচ এর পর এক রহস্য জনক কারনে সরকার আল্লামা শফির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি এবং তাকে গ্রেফতারও করেনি, বরং তাকে স্বসন্মানে হেলিকপ্টারে করে হাটহাজারী চট্টগ্রামে পৌছে দেয়া হয়।
ঐসময় নিহত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের হত্যার দায়ে কোন মামলায়ও মাওনালা শফির নাম নেই। তারপর থেকে হেফাজত ইসলাম কে আর দেখা যায় নাই।
তারপর ৫ই জানুয়ারী, ২০১৪ তে শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে একটি পরিকল্পিত ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে। কিন্তু যেহেতু জনগন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই এবং বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে পারে নাই। আর জনগনের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ার পারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট সহ সারা বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন শুরু করে।
যখন সমগ্র বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এর জন্য লড়াই করছিল তখন কিন্তু হেফাজত ইসলাম নামের সেই সংগঠন চুপ ছিল। বাংলাদেশের জনগন তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের আন্দোলনে কোন রকম সাহায্য পায় নাই। তখন সবার কাছে হেফাজত ইসলাম নিয়ে সন্দেহর সৃষ্টি হয়।
চারিদিকে গুজব ওঠে হেফাজত ইসলাম আওয়ামীলীগের একটি চক্রান্তের অংশ !! বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় পারিবারিকভাবে আত্মিয়তার বন্ধনে আবদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও প্রচার সম্পাদক বাকপটু হাছান মাহমুদ এবং হেফাজত প্রধান মাওলানা শফি। শুধু এই হেফাজত কানেকশনেই মন্ত্রীত্ব পান হাছান মাহমূদ। প্রয়োজনের সময়ে এই আপাত জামাত বিরোধী হেফাজতকে ব্যবহারের পরিকল্পনা হাসিনা সরকারের আগে থেকেই ছিলো।
তা না হলে ৫ই মের গনহত্যা ছাড়াও রমনায় নারীদের অবমাননা, মুরতাদ লতীফ সিদ্দিকী এবং গাফ্ফার চৌধুরী প্রসঙ্গে হেফাজতের কোন নড়াচড়া আদৌ দেখা যায়নি কেনো ?
এখন কথা হচ্ছে, যে হেফাজত ইসলাম বর্তমানে 'বাংলাদেশয়ের সুপ্রিম কোর্টয়ের চত্ত্বরে প্রাণহীন গ্ৰিক মূর্তি নিয়ে হটাৎ জেগে উঠলো' যেই সময় কিনা অবৈধ হাসিনা সরকারের বিরুধ্যে পচ্চিমারা মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ আর জঙ্গীদের সাথে জোগসাজ খুজে পেয়ে অবৈধ হাসিনা সরকারের বিরুধ্যে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে হাক ডাক দিয়ে একাকার করে চলেছে, ঠিক সেই সময়, হেফাজত মাঠে।
এ যেনো কোন এক নতুন নাটকের অভ্যাস পাচ্ছি? যখন বিরোধী দলেকে কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না এমন কি মিছিল থেকে সরকারের পুলিশ বাহিনী ছিনিয়ে নেয় রাজনৈতিক দলের ব্যানার, আর সেই মুহুর্ত্বে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী কিনা হেফাজত কে পুলিশ প্রটেকশনে হেফাজতের সহিত আন্দোলন করতে দেয়???
বাহ্, এ যেনো কিসের গন্ধ পাচ্ছি! শাড়ি পড়া মূর্তি সরানোর আন্দোলনে নামে কিন্তু তারা গণতন্ত্র ফেরাতে মূর্তিটি যে ব্যক্তির নির্দেশে স্থাপন করা হয়েছে সেই আসল শাড়ি পড়া জীবন্ত দেবী (হাসিনা)'র অপসারণ এর আন্দোলন থেকে অনেক দূরে। কার স্বার্থ রক্ষা করতে হেফাজত সাধারণ ধর্মপ্রিয় মানুষ কে মাঠে নামাতে বাধ্য করেছে ধর্মের নামে শাপলা চত্বরের ন্যায়?
এর আগে বাংলাদেশের পাঠ্য পুস্তক নিয়ে হেফাজত নেমে ছিলো আন্দোলনে, সেই আন্দোলনের প্রতিটা শর্ত হাসিনা সরকার পূরণ করেছে। পাঠ্যবইয়ে হেফাজতের দাবির প্রতিফলন এবং তাদের বিভিন্ন দাবির প্রতি সরকারের অবস্থানে আমি মনে করি, ‘যদি বিএনপি এই সমস্ত দাবি তুলতো বা বিএনপি যদি রাজপথে আসতো, আমাদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি হতো, সেই দৃষ্টিভঙ্গি এদের প্রতি না। এদেরকে প্রশ্রয়ই দেয়া হচ্ছে।
কেননা মনে করা হচ্ছে এরা সমর্থন করবে এবং এদের সমর্থনটা তাদের জন্য প্রয়োজন। এরা শান্ত থাকলে সুবিধা, শান্ত না থাকলে এরা উগ্র হয়ে পড়বে’ অথবা 'পচ্চিম পাড়ায় যেন বলতে পারে দেখুন উগ্র ইসলামপন্থীরা আমাদের বিরুধ্যে, এদেরকে আগামীতে কঠোর ভাবে দমন করতে আমাদের প্রতি আস্থা জ্ঞাপণ করুন।'
‘সরকার এদেরকে শান্ত রাখতে চাচ্ছে এবং আগামী নির্বাচন যখন হবে তখন তাদের ভোটগুলো যাতে তারা পায় এই তাদের আকাঙ্ক্ষা। দ্বিতীয় হচ্ছে মানুষের যে ইহজাগতিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা এগুলোকে আচ্ছাদন করার জন্য অবৈধ সরকার এগুলোকে উৎসাহিতও করবে যাতে করে মানুষ এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’
ইসলামপন্থী এ সংগঠনের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে বলুন, সরকার পরিচালনায় বলুন সবসময়ই ছোটখাটো অনেকসময় আপোষ করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে। যেমন, এর আগে নারী নীতি নিয়ে কথা হয়েছিল তখন আমি নিজেই আলেম ওলামাদের সঙ্গে বসেছি, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি।’ ‘তারপর শিক্ষানীতি নিয়ে যখন কথা হয়েছে তখন আমাদের সরকারের থেকে ক্যাবিনেটেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে যে, এই নীতিমালাগুলোতে এমন কিছুই থাকবে না যেটি শরিয়া পরিপন্থী, কোরান হাদিসের পরিপন্থী। আসলে থাকেও নি।
তার ফলে বিষয়টিকে বলতে পারি ডিফিউজ করা হয়ে গেছে, না হলে এটা একটা খারাপ রূপ ধারণ করতে পারতো। ঐ সুযোগটি তো আমরা দেবো না।’ কিন্তু যখন ৫ই মে হাজারো ধর্ম ভীরু হাফেজ মারা গেলো সেগুলোর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় নাই কেন? দীর্ঘ ৪ বছর পার হয়ে গেলেও হেফাজত ইসলামের সেই সব নেতারা কেন কোন কথা বলে নাই বা হাসিনাকে প্রশ্ন করে নাই অথবা সেই সব নিহত ধর্মভীরু হাফেজদের পরিবারদের সান্ত্বনা দেয়ার কথা বলে নাই।
কোথায় ছিল তারা এতদিন? আজ জাতি জানতে চায় হেফাজত ইসলাম সম্পর্কে। "তারা কার স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করছে"? নাকি বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র দেখানোর জন্য ভোটার বিহীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করছে? আজ সারা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায় যে, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলে না অথচ কোন মূর্তি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে শোভা পাবে না সানি লিওন বাংলাদেশে আসবে আর না আসবে সেগুলো নিয়ে কথা বলছে?
হ্যাঁ সানি লিওন এর অতীত জীবন সম্পর্কে আমরা অবগত, তাই একজন মুসলিম হিসাবে তাকে একটি মুসলিম দেশে না আসতে দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, পাশা পাশি শাড়ি পড়া মূর্তির থেকে শাড়ি পড়া জীবন্ত দেবীটির অপসারণ আমাদের মুখ্য দায়িত্ব কিন্তু হেফাজত ইসলামের মতো কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য কোন কূটকৌশল বাস্তবায়নের জন্য কি???
এগুলো হাসিনার ই কূটকৌশল সেটা বুঝতে আর বাকি নাই কারো ।।
লেখকঃ জাহিদ এফ সরদার সাদী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা এবং বিএনপির বিশেষ দূত ।।