ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার নামে কেউ এদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে সেটি জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বর্ষবরণের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
নতুন বাংলা বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা দেখে অনেকে এগিয়ে আসতে চায় অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের নামে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে দেশকে দুর্বল করার জন্য।’ ‘বাংলাদেশে যখন ৮ কোটি লোক ছিল নিজেরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। আজকে ১৬/১৭ কোটি লোক ঐক্যবদ্ধ, তাদের কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা সকলকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, কিন্তু কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয়ে প্রভু হতে চায়, সেটা আমরা কখনো মেনে নেবো না, মানবো না। কারো প্রভুত্ব বাংলাদেশের মানুষ স্বীকার করবে না’ বলেন তিনি। নতুন বছরে সকলের শুভ কামনা করে দেশবাসীসহ নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া।
‘নববর্ষ যেন বাংলাদেশের মানুষের মনের সত্যিকারের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারে। আমরা কী চাই? আমরা চাই গণতন্ত্র, আমরা চাই উন্নয়ন, আমরা চাই শান্তি, আমরা চাই জনগণের কল্যাণ, প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, শিক্ষা সুযোগ প্রদানস ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।’
গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণের জন্য সকলকে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ে জনগনের কল্যাণ ও জাতীয় ঐক্যের বিশ্বাস করে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আমরা দেশ থেকে বিদায় করবো সন্ত্রাস, গুম-খুন-হত্যা ও জঙ্গি হামলা বিদায় করবো। বিদায় করবো নানারকম ষড়যন্ত্র। এসব বিদায় করে দেশে প্রতিষ্ঠা করবো শান্তি ও সুশাসন।’
এর আগে দুপুর থেকে নয়াপল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সমাবেশে রূপ নেয়। বিএনপি নেত্রী বিকেল ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন।
এ সময় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে নেতা-কর্মীরা তাকে স্বাগত জানায়। তিনিও হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের অভিবাদনের জবাব দেন। খালেদা নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আজকে প্রয়োজন ঐক্যের, প্রয়োজন শান্তির, প্রয়োজন কল্যাণের। আসুন বাংলা নতুন বছরে আমরা আজকে শপথ করি, দেশের মানুষের দুঃখ-দুদর্শা দূর করবো এবং জনগণের কল্যাণ করবো।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বাইরে থেকে পানি এসে আমাদের হাওড় অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। সেজন্য গরীব কৃষকদের পাশে গিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে। তাদের সাহায্য করতে হবে তারা যেন এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে।’ তিস্তাসহ ৫৮টি নদীল পানির ন্যায্য হিস্যার দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আমাদের পানি সমস্যা একটা বড় সমস্যা। সামনে শুকনো মৌসুম আসছে, এই মৌসুমে আমাদের পানির প্রয়োজন। সেজন্য আমরা বলতে চাই, আমাদের যে পানির প্রাপ্য সেই পানি আমরা চাই। আমরা কারো কাছে দয়া চাচ্ছি না, কিন্তু আমরা আমাদের যতটুকু অধিকার, সেই অধিকারটুকু চাই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু নিজের দেশের মানুষের স্বার্থের কথা, নিজের দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারেননি, কিছু করতে পারেননি। বরং আজকে তিনি নিজের দেশের মানুষের জন্য কিছু না করে, তাদের স্বার্থের কথা কিছু চিন্তা না করে সব কিছু অন্যের কাছে দিয়ে এসেছেন। তার বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।’
বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে তবলা, হারমোনিয়া, ডুগযুগি, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের মূর্চনায় শুরু হয় পয়লা বৈশাখের জাসাসের এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জাসাস শিল্পীরা ভাটিয়ালী, দেশাত্মকবোধন, বাউল গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন।
জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক চিত্র নায়ক হেলাল খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শাহজাহান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা, আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, নিপুন রায় চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, রাজীব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চিত্রনায়ক আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, বাবুল আহমেদ, শায়রুল কবির খান, মনিরুজ্জামান মুনির, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, সানাউল হক, সিবা সানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে খালেদা জিয়া বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।