ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের জনগণ ও জাতীয় শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে বর্তমান অপশক্তি আর বেশীদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। হাসিনা সরকার জনবিচ্ছিন্ন বলেই ভারতের সাথে দরকাষাকষি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
আজ সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার তিস্তায় পানি আনবে না। তিস্তার পানি আনার ক্ষমতা তার নাই। কারণ তার তো গণভিত্তিই নেই। সে যে ভারতের সাথে বারগেইন করবে, সেই ক্ষমতাই তার নেই। এই নতজানু, সেবাদাস সরকার দিয়ে আমাদের জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের ন্যায্য হিৎসা আমরা পাবো না, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবো না। যেহেতু তারা গণবিচ্ছিন্ন-সেবাদাশ, তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ বছবপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মেলনী নামের একটি সংগঠন।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সভার মঞ্চে নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ইলিয়াসকে তুলে নিয়ে যায়,তার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আর পাওয়া যায়নি।
সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মিলনীর সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সুলতানা আহমেদ, হেলাল খান, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, সিলেটের সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিমউদ্দিন মিলন, আবদুল আহাদ খান, ওমর ফারুক ডালিম, মাহফুজুল হক, জাকির হোসেন, নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
সম্প্রতি বন্যা কবলিত নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে মানুষের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি শনিবার নেত্রকোণার বন্যা কবলিত হাওর এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশনেত্রীর নির্দেশে গিয়েছিলাম। আমরা মানুষের যে অভূতপূর্ব আবেগ দেখেছি, তাদের যে সাড়া দেখেছি, আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমরা যদি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, আমরা জাতীয় শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, তাহলেই এই অপশক্তি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আসুন, আমাদের সবচেয়ে এই কষ্টের দিনে আমরা সবাই শপথ গ্রহণ করি, যেকোনো মূল্যে আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবো, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনবো, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আমরা রক্ষা করবো।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী যেদিন গুম হয়ে যান, নিখোঁজ হয়ে যান, সেদিন পরিস্কার হয়ে গিয়েছিলো সবার কাছে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। এব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিলো না, ভিডিও ফুটেজও দেখা গেছে। আশে-পাশে যেসব গার্ড-টার্ড ছিলো তারা পরিস্কার করে বলেছিলো, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে এবং সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলো কারা তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের লোকেরা তা অস্বীকার করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক ইলিয়াস আলী নয়, আমাদের হিসাব মতে পাঁচশ’র ওপরে ইলিয়াস আলীরা গুম হয়ে গেছে, তাদের খোঁজ নেই। এই ঢাকা মহানগরের সুমন থেকে শুরু করে ৫০ জনের মতো নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। সরকার এখনো অস্বীকার করে যে, আমরা এগুলো জানি না। কিন্তু একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে গেছে, তারপরও কোনো খবর নেই।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে তুলে ধরার জন্য পরিবারসহ সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মিলনী সংগঠনকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার নেতা আনোয়ার ইব্রাহীমের মেয়ে যিনি সেখানকার বিরোধী দলের নেত্রী তিনি এসেছিলেন আইপিইউ কনফারেন্সে।
তিনি বলেছিলেন যে, আপনারা এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরেন না কেনো? বিশেষ করে যদি কোনো এমপির ব্যাপারে হয়, সেটা আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবো, আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরবো। আমি অনুরোধ করবো, কাইয়ুম সাহেব, ভাবী আছেন সবাইকে বলব- আপনারা দয়া করে এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো।
সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এতো লোকক্ষয় হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এখানে দুই হাজারের মতো মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। পাঁচশ’র ওপরে গুম হয়ে গেছে। হাজার হাজার ছেলে পঙ্গু হয়ে গেছে। মামলার তো সংখ্যাই নেই। আসামিরও কোনো সংখ্যা নেই। একটি গণবিচ্ছিন্ন সরকার যাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ক্ষমতায় টিকে থাকার, অথচ তারা ক্ষমতায় টিকে আছে। কেনো এটা হচ্ছে, এই জায়গাগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। জনগণের মধ্যে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এবং এই অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে।
নিরপেক্ষ সরকার অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে একটি নির্বাচন আমরা চাই, সেই নির্বাচন দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই যে গুমের রাজনীতি বাংলাদেশে, এটা কী জন্যে? হত্যার রাজনীতি কি জন্যে? শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে। আর এই ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্য অন্য কোনো দেশের পারপাস সার্ভ করার জন্যে। এটা শুরু হলো রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তারপর পর্যায়ক্রমে এদেশে একের পর বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হলো, কেউ কেউ মারা গেলো। আজকে নেতাশূন্য হয়ে আসছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আজ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে হয় জেলে দেবে, না হয় গুম করবে, না হয় হত্যা করবে অর্থাৎ বিএনপির নেতৃত্ব শূন্য করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না যারা বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য আওয়ামী লীগকে বুদ্ধি দিচ্ছে, একদিন তারাই আওয়ামী লীগকেও নেতৃত্ব শূন্য করবে। আমি সরকারকে বলব- সঠিক পথে আসেন। দেশকে ভালোবাসেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের সাথে আজকের এই চুক্তি বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগবে না। কিন্তু ভারতের কাছে লাগবে। সে কারণে বলছি, দেশাত্মবোধ দেশপ্রেম নয়, ক্ষমতা যার কাছে বড়, তিনি এটাই করবেন। আমাদের হাজারো ইলিয়াস আলী দরকার, গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে, ঘরে ঘরে আমাদের ইলিয়াস আলী প্রয়োজন। একটি আন্দোলন, একটি সংগ্রাম, আমাদের করতেই হবে। শপথ নিতে হবে- মরবো, লড়বো কিন্তু দেশের স্বাধীনতা কারো কাছে বিকিয়ে দেবো না।