DMCA.com Protection Status
title="৭

আওয়ামী লীগকে আর একতরফা খেলতে দেয়া হবে নাঃমির্জা ফখরুল।

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া আর কোনো খেলা হবে না এবং আওয়ামী লীগকে আর খালি মাঠে একতরফা খেলতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায়,তারা নিজেরা রেফারি থাকবে। নিজেরাই লাইন্সম্যান থাকবে। গোল দিয়ে যাবে আর একতরফা খেলে জয়ী হবে। আমাদের খেলতে দেবে না। তবে এই একতরফা খেলা আর হবে না, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া খেলা হবে না।

রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ‘রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান কেটে-ছিঁড়ে, ছিন্ন-ভিন্ন করে এখন যেটা আপনারা তৈরি করেছেন, সেটা তো সংবিধান নয় আপনাদেরই মনগড়া একটা কাগজ। আপনাদের অধীনে নির্বাচন হওয়া কঠিন, এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। নির্বাচনকালীন সময়ে তাই সহায়ক সরকার প্রয়োজন হবে। সেই নির্বাচনকালীন সরকারের গঠন-কাঠামো নিয়ে আলোচনায় বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

শাসন বিভাগ বিচার বিভাগকে কাজ করতে দিচ্ছে না বলে প্রধান বিচারপতির অভিযোগটি তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, এখানে যেটা চলছে, এক দলের শাসন চলছে। এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এখানে আর অন্য কিছু নেই। দেশে এমন একটা শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে যাকে একটা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, অন্য কারও সঙ্গে নয়। যেখানে বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়, ভিন্ন মতকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। যেখানে প্রতিবাদ করলে তাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, গুম করা হয়, হত্যা করা হয়। সেখানে গণতন্ত্রের কথা বলা কঠিন।

বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাওরে অনেক দিন পরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। গিয়ে কিছু ত্রাণের কাজ করে এসে উল্টো আবার বিএনপিকে দোষারোপ করলেন। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর। সবকিছুতেই বলতে চান যে বিএনপিই এর জন্য দায়ী। হাওরে বন্যার মধ্যে হাওর ?

উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়টি তুলে ধরে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা আলমগীর বলেন, এরা এই দেশটাকে মনে করছে তাদের একটা বিনোদনের জায়গা। এখান থেকে তারা অর্থ উপার্জন করবে, আর বিদেশে ঘুরবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো বলেই দিয়েছেন, ‘যা আয়-টায় করছো, তা নিয়ে তো বিদেশে পালিয়ে যেতে হবে।’

বিএনপিকে ভারতবিরোধী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের চিহ্নিত করার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি কখনো ভারতবিরোধী নই। আমার দল কখনো ভারতবিরোধী নয়। আমার জোট (২০ দল) ভারতবিরোধী নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু। যুদ্ধের সময়ে আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমি নতজানু হয়ে আমার সব কিছু বিলিয়ে দেব, আমার স্বার্থ আমি পাবো না। কী দুর্ভাগ্যের কথা আমাদের, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন কিন্তু আমাদের পানি সমস্যার সমাধান হয় না। কিন্তু যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পানির জন্য দরকষাকষি করতে পারতাম, সেই বিষয়গুলো আমরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছি।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আজাদ মাহবুব, মো. ইলিয়াস, সাহিদুর রহমান তামান্না, সৈয়দ সাদাত আহমেদ, সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও আবুল কাশেম ভুঁইয়া বক্তব্য দেন।


ওদিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএফইউজে ও ডিইউজে (একাংশ) আয়োজিত আরেক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণমাধ্যম একসঙ্গে যায় না। শুধু গণমাধ্যম নয়, এখন রাজনীতি-অর্থনীতি কোথাও স্বাধীনতা নেই। সব আওয়ামী লীগের হাতে চলে গেছে। তিনি বলেন, অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে, প্রথম আক্রমণ করেছে গণমাধ্যমের ওপর। এখন এই নিয়ন্ত্রণ আরো বেড়েছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, আজ দেশে না আছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, না আছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, না আছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। সব কিছুই একটা বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে। তাদের বাইরে এখানে কিছু করতে পারবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতেও পরামর্শ দেন তিনি।

বিএফইউজে (একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, আবদুস শহীদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসীন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য দেন। পরে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের ওপর এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!