DMCA.com Protection Status
title="৭

মাথা উচু করেই চলে গেলেন শফিউল আলম প্রধান।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশ বরেণ্য রাজনীতিবিদ,অনলবর্ষী বক্তা, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান।ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন।

আজ রবিবার ভোর সাড়ে ৬টায় রাজধানীর আসাদগেটে নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি গত দুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। এর আগে একাধিকবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি।

তার জন্ম ১৯৫০ সালে পঞ্চগড়ে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দিন ছিলেন তার বাবা। স্ত্রী রেহানা প্রধান, মেয়ে ব্যারিস্টার তাহমিয়া প্রধান, ছেলে রাশেদ প্রধানকে রেখে গেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করা প্রধান ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দেশ বরেণ্য এই নেতার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ছাত্রলীগের মাধ্যমে।

১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিউল আলম প্রধান। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাত ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আসামি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। এটিকে শফিউল আলম প্রধান রাজনৈতিক চক্রান্ত দাবি করলেও বঙ্গবন্ধুর আমলেই তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ আসে। পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সে সময় কারাগারে যেতে হলেও পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে মুক্তি পেয়ে ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল রমনা গ্রিনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করে তার সভাপতি হন শফিউল আলম প্রধান। এরপর থেকেই জাতীয়তাবাদী বলয়ের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হন তিনি।

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জাগপাকে নিয়ে বিএনপির ৭ দলীয় জোটে সরব থাকা প্রধান সক্রিয় ছিলেন ২০ দলীয় জোটেও। তার মৃত্যুর খবরে ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সকালে তাঁর আসাদ গেইটের বাসায় জড়ো হতে শুরু করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে গিয়ে এই রাজনৈতিক সহকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে জাগপা সভাপতির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

জাগপা সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান জানান, রবিবার জোহরের নামাজের পর আসাদ গেইটে দলের কার্যালয়ের সামনে তাদের মরহুম নেতার জানাজা হবে।

আসরের পর ইকবাল রোড জামে মসজিদে দ্বিতীয় দফা জানাজার পর মরদেহ রাখা হবে হিমঘরে। সোমবার জোহরের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজার পর বিকালে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে শফিউল আলম প্রধানকে।

শেষ রাজনৈতিক তৎপরতায়ও ‘প্রতিবাদী’ ছিলেন প্রধান মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও তার দলের পক্ষে গণমাধ্যমে শফিউল আলম প্রধানের বিবৃতি আসে। এ নেতা শেষ এই বিবৃতিতেও চিরায়ত সরকারবিরোধী অবস্থান তুলে ধরেছেন।

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় শফিউল আলম প্রধান ও জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশি হামলা ও তল্লাশীর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, এই ধরনের উস্কানীমূলক তৎপরতা সমকালীন রাজনীতিতে নজিরবিহীন।

এই ‘ফ্যাসিবাদী তৎপরতা’ মোকাবেলায় তারা প্রতিরোধ-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বানও জানান। এরমধ্যে জাগপার একটি অংশ দল ভেঙ্গে শফিউল আলমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও, সরকারবিরোধী কড়া অবস্থান ধরে রেখেছিলেন তিনি শেষ পর্যন্ত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!