DMCA.com Protection Status
title="৭

বিএনপির কাছে বাংলাদেশের জনগনের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তিঃ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির বিগত কয়েক বছরের  রাজনৈতিক নির্লিপ্ততা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মগের মুল্লুক স্টাইলে আজ বাংলাদেশ শাসন করতে পারছে বলে অনেকেই মনে করেন।

বিএনপি আওয়ামী লীগ বা জামায়াতের মতো কর্মী নির্ভর(অনেকে বলেন ক্যাডার নির্ভর) দল নয়,এই দলটি প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত সমর্থক এবং ভোটার নির্ভর দল।

এই সমর্থক ভিত্তির প্রধান অংশ সাধারন মানুষ বিশেষ করে মহিলারা হওয়ায় মারদাঙ্গা গরম আন্দোলনে আওয়ামী লীগ কিংবা জামাতের সমকক্ষ হয়ে উঠেতে পারেনি বিএনপি কোনোদিন।

বিএনপির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে সুষ্টু নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে মোটামুটি ভোটার বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করন।

বিএনপির অতীতের নির্বাচনী বিজয়গুলো বিশ্লেষন করলে তাই আমরা দেখতে পাই।

আমাদের আজ ভাবতে হবে বিএনপির বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় কি?

এর জন্য নীচের প্রশ্ন গুলোর উত্তর অন্বেষন করা জরুরী বলে মনে করিঃ

২০১৩/১৪ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনে অতিমাত্রায় জামায়াত নির্ভরতা কি বিএনপির জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো?

কেনো সারা দেশের আন্দোলনের তোড়ে বিপর্যস্ত সরকারের শেষ ভরসাস্থল রাজধানী ঢাকা পতনের দ্বারপ্রান্তে এসেও  বিএনপি থমকে গিয়েছিলো? 

কেন বেগম খালেদা জিয়ার ২৯ শ ডিসেম্বর'১২ এর ঢাকা অবরোধের চুড়ান্ত কর্মসূচীতে নেতা কর্মিদের মোবিলাইজ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো বিএনপি?

জেহাদ কিংবা নূর হোসেনের মতো কতজন বিএনপি নেতা কর্মী পুলিশ/বিজিবির গুলিতে শহীদ হয়েছিলো সেদিন?

এই কর্মসূচীর গোপন দলীয় পরিকল্পনা সরকারের কারা পাচার করেছিলো ,কাদের ষঢ়যন্ত্রে ব্যার্থ হয়ে যায় জাতির আকাংখিত একটি অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা ?

তদুপরী বিএনপির ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ এর  নির্বাচন বর্জন পুরোপুরী সফল হয়নি বলা যায়না।

আন্দোলনে গনমানুষের নিরব সমর্থনের কারনেই আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে ১৫৪টি আসনে ৫ই জানুয়ারীর পূর্বেই বিনা প্রতিদন্দীতায় তাদের লোকদের বিজয়ী ঘোষনা করে যাতে কোনক্রমে যদি নির্বাচন করা না যায় তবে আনুপাতিক হারে বাকিদেরও বিজয়ী ঘোষনা করতে পারে।

যাক সে প্রসঙ্গ।আমার আজকের আলোচনা বিএনপিকে নিয়ে।

আওয়ামী লীগকে জমাখরচ দিয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস বিএনপিকে অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।

আমি জানতে চাই বিএনপি প্রথম সারির নেতা যারা অতীতে মন্ত্রীত্ব সহ বিপুল সুযোগ সুবিধা অর্জন করেছেন তারা আজ গাঁ বাচিয়ে চলছেন কেনো?

বিএনপি আজ অভিযোগ করছে তাদের নেতা কর্মীদের নির্বিচারে গুম খুন করছে সরকার।

এঘটনা আনেকাংশে সত্য হলেও এটাও সত্য যে এক ইলিয়াস আলী এবং চৌধুরী আলম ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে আর কোন নেতা গুম হননি বিএনপির।

আমি জাতির বিবেকের কাছে জানতে চাইঃ

বিএনপির কতজন কেন্দ্রীয় নেতা সরকারী বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে প্রায় পঙ্গুত্ব বরন করেছেন এবং গত প্রায় একদশক ধরে অসংখ্য হুলিয়া মাথায় নিয়ে বিদেশে নির্বাসিত আছেন,দলীয় সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের মতো?

বিএনপির কতজন সাবেক মন্ত্রী / এমপি বসত বাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়েছেন এবং সন্তান পরিজন বিহীন নিঃসঙ্গ অসহায় জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন,বেগম খালেদা জিয়ার মতো??

কতজন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতার ব্যবসা বানিজ্য কিংবা ব্যাংক হিসাব জব্দ করে চরম মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে,জিয়া পরিবারের মতো??

এসব তথাকথিত শীর্ষ নেতাদের গাঁ বাচানোর প্রবনতা   এবং সরকারের সাথে লিয়াজো বজায় রাখার প্রবনতাই আজ বিএনপির ব্যর্থতার মূল কারন বলে আমি মনে করি।

তারা বিপুল বিত্ত বৈভবের অধিকারী হওয়া সত্বেও দলের জন্য আন্তরিক ভাবে কিছু না করা এবং চরম স্বার্থপরতা আজ বিএনপি সমর্থকরা জেনে গেছেন এবং আগামীতে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তাদেরইতো জয়জয়াকার,এই মনোভাব সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল আছি।

সম্পূর্ন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাকিয়ে বসা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যদি সম্ভব হয়ও, প্রশাসন,পুলিশ,র্যাব এবং স্বশস্ত্র বাহিনীর সর্বোত্র বপন করা আওয়ামী বীজের কুপ্রভাব বিএনপি কিভাবে মোচন করবে?

অন্যায়,অবিচার ,দূর্নীতিতে নিমজ্জিত এসব বাহিনীর কমান্ড স্টাকচার আজ ভেঙ্গে পড়েছে প্রায়।

আগামীতে ক্ষমতায় আসলে বিএনপিকে দেশের স্বার্থে এসকল প্রতিষ্ঠানকে পূনর্গঠন করতে হবে,মোকাবেলা করতে হবে হাজার হাজার কোটি টাকা এবং আওয়ামী পেশী শক্তিকে।

এর জন্য প্রয়োজন একদল সৎ,নির্ভীক এবং দেশপ্রেমীক তরুন নেতা কর্মী,যারা জাতীয়তাবাদী ধারাকে সমুন্নত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে।তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে  আমাদের ভবিষ্যতে সোপান গড়তে হবে,বিএনপির কোটি কোটি সমর্থকদের এই আজ প্রত্যাশা।

লেখকঃকানাডা প্রবাসী বিএনপি নেতা,রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!