DMCA.com Protection Status
title=""

১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা হরিলুট ও একজন সাংসদের দাবি

 

মোহাম্মদ আলী বোখারীঃ অবশেষে বাংলাদেশের সরকার সহযোগী বিরোধী দলীয় জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রেসিডেয়াম সদস্য ও সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু দেশ ও জাতির লোপাট অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগসহ ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি অর্থ ব্যয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছেন।

 

এমনকী ‘বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়’।

 

সংবাদে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ওই দাবি তোলেন; যদিও সেসময় অর্থমন্ত্রী সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। তথাপি ওই দাবি সংবলিত বক্তব্যে সামগ্রিক অর্থনীতির একটি ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।

 

এতে এক ব্যাংকিং খাতেই নাকি ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার হরিলুটে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো দেউলিয়া। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রস্তাবিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা রীতিমতো নৈতিকতা পরিপন্থী। এ সব ছাড়িয়ে শেয়ার বাজার লুটের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়া ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করারও কঠোর সমালোচনা তুলে ধরেছেন।

 

এতে সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর ওই বক্তব্যের হুবহু চুম্বকাংশ হচ্ছে- ব্যাংকগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নেই।

 

সোনালী, অগ্রণী ও বেসিকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা দৈন্যদশা। ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা যেত। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

 

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ট্যাক্স পেয়ারের ২ হাজার কোটি টাকা উনি ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন? এটা কোনো নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। উনি নৈতিকতা ও আইন বিরোধী প্রস্তাব কীভাবে করেন? এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই উনি করতে পারেন না। এ টাকা উনি শিক্ষা-স্বাস্থ্য বা অন্য কোনো খাতে দিতে পারতেন। কেন আপনি ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে দেবেন। আগের তিন অর্থবছরেও আপনি টাকা দিয়েছেন। সরকার তাদেরকে টাকা দিতে যাবে কেন?

 

অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। ট্যাক্স পেয়ারের মানি দিয়ে লুটের টাকার ঘাটতি পূরণের কোনো অধিকার নেই। এজন্য তো উনাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এজন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত বলে আমি মনে করি। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে।

 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলে কানা ছেলে ?কানাই থাকে। এক বছরে মোটা চালের দা?ম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। মানুষ চাল কিনতে পারছে না। শুধু প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়। অর্থমন্ত্রী মিথ্যার বেসাতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। সত্যকে আলিঙ্গন করার সাহস থাকতে হবে। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সুফল পাবে না।

 

প্রিয় পাঠক, আপনারা দৈনিক আমাদের অর্থনীতির পাতায় একজন সাংসদের বক্তব্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির একটি অনাকাক্সিক্ষত ও অপরিণামদর্শী চিত্র হৃদয়াঙ্গম ও উপলব্ধির সুযোগ পেলেন। এতে তার মুখে ব্যক্ত দেশ ‘উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে’, সেই প্রশ্নটি নিজের দৃষ্টিতেই মূল্যায়ন করুন।

 

একইসঙ্গে বিবেচনায় নিন সামষ্টিক অর্থনীতি ও সরকারি অর্থব্যবস্থার আধুনিক জনক অর্থনীতিবিদ ‘দ্য লর্ড কেইন্স’ বা জন মেনার্ড কেইন্সের একটি বাণী, যেখানে তিনি বলেছেন,  যদি দন্তচিকিৎসকদের মতো অর্থনীতিবিদরা বিনীত ও যোগ্য হতে পারতেন, তবে তা হত চমৎকার।

 

বাস্তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন চমৎকৃত কিছু কি আমাদের অর্থমন্ত্রী দিতে সক্ষম হয়েছেন?

 

 

লেখকঃ কানাডার টরেন্টো প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং কলামিস্ট।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!