ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এবারের রমজানের ঈদে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দেড়লাখ মানুষ শপিং করতে ভারতে আসবেন, বিশেষ করে কলকাতায়৷ ব্যবসায়ী নেতারা জানান, সেখানে তাঁরা খরচ করবেন এক হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ৷ তাঁদের কথায়, এই প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷
রেহনুমা রেজা ভারতের কলকাতা থেকে ঈদের শপিং শেষ করে কয়েকদিন হলো ঢাকায় ফিরেছেন৷ তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন৷ দু'বছর আগে বিয়ে করেছেন৷ বিয়ের পর ভারতে ভ্রমণ এবং ঈদের শপিং – দু'টো একসঙ্গেই করলেন তিনি৷ রেহনুমা বলেন, ‘‘শুধু আমি না৷ আমার মতো আরো অনেকেই ঈদের শপিং করেন ভারতে৷ কলকাতার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ক্রেতাদের টার্গেট করে ঈদের বাজারে নতুন ডিজাইনের অনেক পোশাক এবং পণ্যও আনেন৷''
বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে শপিং করলে লাভ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে রেহনুমা বলেন, ‘‘তুলনামূলকভাবে কলকাতায় পোশাকসহ সব পণ্যের দাম কম৷ মান এবং ডিজাইন ভালো৷'' তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘আমি শান্তিনিকেতন থেকে যে শাড়ি ৫০০ রুপিতে এনেছি, সেটার ঢাকায় দাম চার হাজার টাকা৷ আমি শাড়ি ছাড়াও সালোয়ার কামিজ, জুতো এবং পরিবারের জন্য পোশাক কিনেছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশেও ভালো ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায়৷ তবে ওদের ওখানে আগে আসে৷ ওদের ডিজাইন দেখেই আবার এখানে করা হয়৷ কলকাতায় ঈদের সময় বাংলাদেশি ক্রেতাদের টার্গেট করে নতুন ডিজাইনের পোশাক, জুতা, গয়না আসে বাজারে৷''
রেহনুমা বলেন, ‘‘ঈদের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ক্রেতা তো যানই, এছাড়া সারা বছরই বাংলাদেশের ক্রেতা থাকে ভারতের বাজারে৷''
ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় হাই-কমিশন গত বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ভিসা দিয়েছিল৷ এবার এই ভিসার পরিমাণ এরই মধ্যে এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়৷ বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের একাংশ ঈদের শপিং করতে বিমানে যান৷
তবে বড় অংশ ভারতে যান সড়ক পথে৷ বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর এলকায় কর্মরত সাংবাদিক সেলিম রেজা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রোজা শুরু হওয়ার আগেই এখান থেকে ভারতে বাংলাদেশিরা যাওয়া শুরু করেছেন৷ এখনো এ ধারা অব্যাহত আছে৷ সাধারণভাবে এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি আসা-যাওয়া করেন৷ কিন্তু ঈদের সময় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার৷ আগের বছরগুলোর চিত্রও এ রকম ছিল৷''
তিনি জানান, ‘‘এরা মূলত ঈদের শপিং করতেই যান৷ এ সময়ে কাস্টমস চেকপোস্টেও আয় বা বাণিজ্য বাড়ে৷''
সেলিম রেজা বলেন, ‘‘যাঁরা কলকাতা থেকে শপিং করে আসেন, তাঁদের কথা হলো – ওখানে পোশাকের দাম কম এবং ডিজাইন ভালো৷''
জানা গেছে, কলকাতার নিউমার্কেট এলাকাসহ তার আশেপাশের বিপনী বিতানগুলোতে বাংলাদেশি ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়৷ ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন মাকের্টে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে৷
বাংলাদেশিদের কারণে কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মীর্জা গালিব স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, বেলগাছিয়া, নিউমার্কেট, চিৎপুর, টালিগঞ্জ, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিট, চিৎপুরের জাকারিয়া স্ট্রিট, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর এলাকায় ইতিমধ্যে বসে গেছে ঈদের জমজমাট বাজার৷
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘প্রতি রোজার ঈদে বাংলাদেশের লোকজন কম-বেশি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার শপিং করেন ভারতে৷ দেড়লাখের মতো লোক ভারতে যান ঈদ শপিং করতে৷ তারা গড়ে ১ হাজার ডলারের কম খরচ করেন না৷ সেই হিসেবে এটা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর৷ দেশের ব্যবস-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতি৷ দুই ঈদের হিসাব করলে অংকটি আরো বড়৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই টাকা বৈধভাবেই যায়৷ কারণ ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত বৈধভাবেই নেওয়া যায় বিদেশে৷ তবে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে৷ দেশীয় পণ্যের মান বাড়াতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক সহনীয় দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে৷ তা না হলে ভারতমূখিতা কমানো যাবে না৷''
অবশ্য শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ থেকে ঈদের শপিং করতে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ আরো অনেক দেশে যাচ্ছেন উচ্চবিত্তরা৷ এঁদের সংখ্যাও কম নয়৷ তাই বলে কি বাংলাদেশের শপিং সেন্টারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে না? ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে ঈদে? মোটেই তা না৷ ঢাকার শপিং সেন্টারগুলোতে এখন তো ভিড়ের কারণে ঢোকাই দায়৷ দেকানদাররাও চাহিদা সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না৷ তার ওপর শপিং সেন্টারগুলোর সামনে এখন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই ট্র্যাফিক জ্যাম৷