দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ সিলেটের গোলাপগঞ্জে মসজিদ ফটকে দিনে দুপুরে কুপিয়ে এক মুসল্লিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর নৃশংস উল্লাসে মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে খুনীরা।
গতকাল দুপুরে শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কদুপুর গ্রামের মসজিদ ফটকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। খুনের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ। ঈদের আগে বর্বরোচিত এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন এলাকার মানুষ।
কদুপুর গ্রামে খাসজমি দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিল। প্রায় চার বছর আগে খাসজমি দখল নিয়ে একই গ্রামের মৃত মকবুল আলীর গোষ্ঠীর সঙ্গে নুরুল হোসেনের গোষ্ঠীর বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের জের ধরে চার বছর আগে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে কদুপুর জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন মৃত মকবুল আলীর গোষ্ঠীর যুবক ইমাম হোসেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে কথাকাটাকাটি হয় নুরুল হোসেনের লোকজনের মধ্যে। একপর্যায়ে নুরুল হোসেনের পক্ষের দুলাল, হেলাল, তাজমল, রাজুসহ কয়েকজন মিলে ইমাম হোসেনের ওপর চড়াও হয়। তারা ইমাম হোসেনকে মসজিদে ওজু করা অবস্থায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা ইমাম হোসেনকে ওজুখানা থেকে টেনে নিয়ে যায় মসজিদের ফটকে। সেখানে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করে ইমাম হোসেনকে।
পরে মসজিদের ভেতর থেকে লোকজন দৌড়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। নিহত ইমাম হোসেন কদুপুর গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি কৃষি কাজ করতেন। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়েন ঘাতকরা। এ কারণে ঘটনার পরপরই খুনিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে খুনের ঘটনার খবর পৌঁছামাত্র এলাকার লোকজনও খুনিদের খুঁজতে থাকেন।
জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের গাফিলতির কারনেই এধরনের লোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে অপরাধীরা।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পালানোর সময় ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর এলাকা থেকে রাজু আহমদ নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহ আলম ও মারজান নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছেন নিহত ইমামের শরীর ছিল ক্ষত-বিক্ষত। তার দুটি পা হাঁটু পর্যন্ত কেটে দেয়া হয়। এছাড়া মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল অসংখ্য ধারালো আঘাতের চিহ্ন।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বিকালের দিকে থানায় নিয়ে আসে। রাতে ইমাম হোসেনের লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গোলাপগঞ্জ থানার ওসি ফজলুল হক শিবলী জানিয়েছেন, খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের হাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া খুনের ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।