DMCA.com Protection Status
title="৭

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে কটূক্তি, লাল্টুর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও বিষোদগার করছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাহাবুদ্দিন লাল্টু।


এর জেরে তার বিরুদ্ধে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ তার বিতর্কিত অতীতের কথা ফাঁস করে দিয়ে তার প্রশ্রয়দাতাদের একহাত নিচ্ছেন। কেউ আবার তার ‘অধপতন’ দেখে বিএনপি হাইকমান্ডকে শিক্ষা নিতে বলেছেন।

জানা গেছে, শুরুতে লাল্টু ফেসবুকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে অসম্মানজনকভাবে সম্বোধন করে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন।

এক পর্যায়ে তিনি বিএনপিকে ‘ভ্যানিটি ব্যাগের দল’ বলে অশোভন মন্তব্য করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে লেখেন ‘৭০ উর্ধ বয়স্ক এক ভদ্র মহিলাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চায় না’। এছাড়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তাচ্ছিল্য করে ‘তারেক’ সম্বোধন করেন। সমালোচনার নাম করে তিনি বিএনপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগারমূলক মন্তব্য করেন।

লাল্টুর এমন আচরণে তাকে নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ও লাল্টুর ঘনিষ্ঠদের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হলেও জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থী হয়ে যান লাল্টু। এ কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি তিনি। পরবর্তীতে বিএনপিতেও তিনি কোনো পদ-পদবী পাননি। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ২০১২ সালে নীরবে দেশ ছাড়েন।

এক পর্যায়ে ফেসবুকে লাল্টু জানান তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। শুরুতে তিনি বিএনপির পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য করেন। কিন্তু গত বছর বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর হঠাৎ বদলে যান তিনি। এ দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই বলে ঘোষণা দেন তিনি। এরপর জিয়া-তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নামে কটূক্তি শুরু করেন।

ছাত্রদলের সাবেক নেতারা জানান, ১৯৮৭ সালে ভোলা সরকারি কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের ছাত্র ছিলেন সাহাবুদ্দিন লাল্টু। এ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন তিনি।

বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহিমের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে হঠাৎ করেই ঢাকায় আগমন ঘটে তার। এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিলিমিনারি মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার দাবি করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বনে যান। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।


ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, হাফিজ ইব্রাহিমের প্রশ্রয়ে ছাত্র-অছাত্রদের নিয়ে ‘লাল্টু গ্রুপ’ নামে একটি ক্যাডার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন লাল্টু। এ বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ও প্রকৃত ছাত্র এমন অনেক ছাত্রদল নেতা নির্যাতিত হয়। এর জের ধরে ১৯৯৭ সালে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে লাল্টুকে ধরে এক কান কেটে দেয়।

সংবাদ মাধ্যমে ওই ঘটনা প্রকাশের পর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কাছে ‘কানকাটা লাল্টু’ নামে আখ্যা পান লাল্টু। কিন্তু বিএনপির একদল নেতা তাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন যোগান। এতে করে তিনি তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হওয়ারও সুযোগ পান। ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

সাবেক ছাত্রদলের নেতারা জানান, লাল্টুর আত্মীয় হাফিজ ইব্রাহীম ছিলেন একটি ব্যাংকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনী জোয়ারের সময় রহস্যজনকভাবে বিএনপির মনোনয়নে ভোলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরই পোয়াবারো হয় লাল্টুর।

জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে সভাপতি ও সাহবুদ্দিন লাল্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। পিন্টু লালবাগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে জোট সরকারের প্রথম দুই বছর ছাত্রদলের কর্তৃত্ব পুরোপুরি লাল্টুর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।


এদিকে পিন্টু-লাল্টু কমিটির নেতাদের মধ্যে যারা পিন্টুর সমর্থক ছিলেন তারা একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হতে থাকেন। এরমধ্যে কমিটির এক নম্বর সহসভাপতি সাগির আহাম্মেদ ও ২০ নম্বর সভাপতি সাইদুর রহমান নিউটনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

লাল্টুর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রের দুই নম্বর যুগ্ন সম্পাদক মোস্তাফিজুর ইসলাম মামুন প্রথমে কোনঠাসা হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া হন। পরে র‍্যাবের নির্যাতনের মুখে পড়ে মারা যান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই ছাত্রও পিন্টুর অনুসারী ছিলেন। ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ ওই সময় লাল্টুপন্থী কেউ নিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হননি, যা নিয়ে ছাত্রদলে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা ছিলেন মমিনুল্লাহ ডেভিড। অভিযোগ রয়েছে, একবার নারায়নগঞ্জে পদ বানিজ্য করতে গিয়ে লাল্টু ডেভিডের বাধার মুখে পড়েন। ক্ষুব্ধ ডেভিড লাল্টুর গাড়িতে গুলি করেন। পরে তিনি ক্রসফায়ারে নিহত হন।

এসব নেতা নিহত হওয়ার সময় লাল্টুর ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন তোলেন মেহেদি হাসান সোহাগ নামে একজন। জবাবে নিজের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেন লাল্টু। উল্টো তার দাবি ‘যখন আমি আহবায়ক, তারেক রহমানের সহযোগিতা নিয়ে অনেককেই বাঁচাতে চেষ্টা করেছি।’ এক্ষেত্রে দিনাজপুরের মুকুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল, নিরব, জাহাংগীর, মোস্তাফিজুল ইসলাম মামুনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম দুই বছর লাল্টুর নেতৃত্বে তার গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ডকে তার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ২০০৩ সালে তাকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি করে পুরস্কৃত করা হয়।

ওই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি ছিলেন এমন কয়েক জন সাংবাদিক জানান, ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার পর লাল্টুর নিয়োগ বাণিজ্য-টেন্ডার বাণিজ্য-চাঁদাবাজির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হঠাৎ করে বিত্ত-বৈভব বেড়ে যাওয়ায় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম পার্লার থেকে সাজগোজ করে নিত্যনতুন পোশাক করে দামি ব্রান্ডের গাড়িতে চড়ে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন।
তৎকালীন ছাত্রদল নেতারা জানান, আগে সাহাবুদ্দিন লাল্টু সাধারণ মানের বাসায় থাকতেন এ

বং নেতাকর্মীদের সামনে নিজেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে উপস্থাপন করতেন। কিন্তু সভাপতি হওয়ার পর তিনি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন। সেখানে তার ড্রয়িং রুমে নগদ টাকার বিনিময়ে বিসিএস ক্যাডারসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা টাকা দিতে না পারায় চাকরি বঞ্চিত হলেও, প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের অনেকে টাকা দিয়ে চাকরি বাগিয়ে নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী তৎকালীন একজন ছাত্রদল নেতা বলেন, আমি প্রথম স্থানের অধিকারী হয়েও শিক্ষক হতে পারিনি। অথচ ১০ লাখ টাকা নিয়ে আমার জায়গায় ১৯তম স্থান পাওয়া ছাত্রলীগের একজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

লাল্টু সভাপতি থাকতে বিসিএস চাকরিতে টাকা কথা বলতো বলেও দাবি করেন একজন। তিনি বলেন, পুলিশের এএসপি পদে প্রতি জনের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে ঢুকিয়েছে। আমরা তখন টাকা দিতে পারিনি বলে বিসিএসে কিছু করতে পারিনি।
জানা গেছে, ছাত্রদলের সভাপতি থাকতেই লাল্টু নিয়োগ বাণিজ্য-টেন্ডার বাণিজ্য-চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল বিত্তের মালিক হন। পাশাপাশি ঢাকায় ন্যাম ফ্ল্যাট ও গাবতলীতে সিএনজি পাম্প বরাদ্দ পান। সবকিছু মিলে ছাত্রনেতা থাকতেই তিনি বিরাট ব্যবসায়ী বনে যান।
তবে কৌশলী লাল্টু তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি গোপন রাখতে তা নিজের নামে না করে মালিক হিসেবে স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারীকে দেখান বলে দাবি অভিযোগকারীদের।
এর প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন, লাল্টুর স্ত্রী শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে চাকরি করতেন। কিন্তু তার নামে রাজধানীর সোবহানবাগে দুটি আলিশান বাড়ি রয়েছে। এই বাড়ি লাল্টুর টাকায় হয়েছে বলে দাবি তাদের।
রাজনৈতিকভাবে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে নবম সংসদ নির্বাচনে ভোলায় প্রয়াত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাজাহানের আসনে লাল্টুকে মনোনয়ন দেয়ারও চেষ্টা করা হয়।
বিএনপির একটি মহলের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাস পেয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ আগে ভাগেই ভোলায় জনসংযোগ শুরু করেন লাল্টু।
২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান পদে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নিয়োগ বিরোধী আন্দোলন করছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।
ওই সময় দলটির ডাকে অবরোধ চলাকালে ভোলা থেকে দলবল নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে মাদারীপুরে বাধার মুখে পড়েন লাল্টু। এ সময় অবরোধকারীদের পিস্তল প্রদর্শন করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা লাল্টুকে বেধড়ক পিটুনি দেয়।
এদিকে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোলায় লাল্টুকে মনোনয়ন না দিয়ে মোশারফ হোসেন শাজাহানকেই বহাল রাখে বিএনপি। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন লাল্টু। পরে ওই নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হলে গোপনে সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।
জরুরি অবস্থার ধরপাকড়েরর সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়ালেও লাল্টুকে সদলবলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে রিজবীজ নামের একটি রেষ্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়। জরুরি সরকারের সঙ্গে আঁতাতের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছিল বলে দাবি ছাত্রদল নেতাদের।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর স্থগিত নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তখনও বিএনপির মনোনয়ন পাননি লাল্টু। এমনকি পরে ২০১০ সালে বিএনপি সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করলে তাতেও তাকে কোনও পদ দেয়া হয়নি।
সংস্কারপন্থী অভিযোগ ঘুচিয়ে দলে জায়গা পেতে লাল্টু ২০১২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষাও করেন। কিন্তু ছাত্রদলের অন্য সাবেক নেতারা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও তাকে আর ডাকা হয়নি।
এ নিয়ে ক্ষোভে-অভিমানে ২০১২ সাল কানাডা পাড়ি জমান তিনি। এরপর বেশ কয়েক দফায় বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তিনি। সর্বশেষ গত বছর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে এতে পদ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হন তিনি। কিন্তু গত আগস্টে ৫০২ সদস্যের বিশাল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করলেও তাতে তার জায়গা হয়নি।
এরপর গত বছরের ২৮ অক্টোবরের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন লাল্টু। এতে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার হিংসার শিকার হয়ে এতটা ক্ষত-বিক্ষত হবার পরও ৮ বছর নিজ দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সামান্য একটি সদস্য পদ পর্যন্ত না পেয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি চান না আমি তার দল করি। সেজন্যই বিনা প্রতিবাদে রাজনীতি-দেশ সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি কি ইচ্ছা করলে অন্য কোনো দল করতে পারতাম না? আমার মত একজন কর্মি কি কেউ নিতে চায় নি? আর না হোক, অন্ত:ত এরশাদ তো আমাকে ফিরিয়ে দিতেন না, যদি আমি তার দল করতে যেতাম। এরশাদ হলেন সেই ব্যক্তি, যারা তার সাথে বেঈমানী করে চলে গিয়ে ফিরে এসেছেন, তিনি কাল বিলম্ব না করে তাদের দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমি নিশ্চিত যে, আমি যদি ইচ্ছা প্রকাশ করতাম, তাহলে তিনি যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েই আমাকে তার দলের জন্য কাজে লাগাতে চেষ্টা করতেন। বাংলাদেশে বিএনপি, আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির মধ্যে আজকের এই দিনে পার্থক্য কি খুব বেশী? কাজেই এরশাদের পার্টী করায়ও দোষের কিছু ছিলো না। কিন্তু আমি বিএনপির লক্ষ কোটি নেতা-কর্মীর মনে কোনো কষ্ট দিতে চাইনি বলে দেশ ও রাজনীতি ছেড়ে চলে এসেছি।’

তবে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিলেও ফেসবুকে বিএনপিকে নিয়ে লাগাতার বিষোদগারমূলক মন্তব্য করতে থাকেন তিনি। শুরুতে দলের বিভিন্ন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে কটূক্তি করলেও এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, লাল্টুর কটূক্তি ও বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অবহিত রয়েছেন। তারা লাল্টুকে উপক্ষো করার এবং তার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!