ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা রেখেছেন-এদের মধ্যে কেউ আওয়ামী লীগের-এমন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্থ পাচারের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
উন্নয়নশীল দেশ থেকে বিভিন্ন উন্নত দেশে টাকা পাচার বরাবর এক আলোচিত বিষয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) এর একটি প্রতিবেদন আবার আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের হিসাবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে।
২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় প্রায় পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আগের বছর এই জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা চার হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া এই টাকা ক্ষমতাসীনদের। ব্যাংক থেকে লুট হওয়া টাকাই সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে-এমন অভিযোগও করেন তিনি।
বিএনপি নেতার এই অভিযোগের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অর্থ পাচারের রেকর্ড বিএনপির আছে। তাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। কোকোর টাকার কথা সিঙ্গাপুরে প্রমাণিত। তদের মানিলন্ডারিং বিষয়টি সবার কাছে সুপরিচিত এবং আদালতে প্রমাণিত।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে যুক্তরাজ্যের লয়েডস টিএসবি অফসোর ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পাচার করেছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে দুদক অর্থপাচারের মামলা করার পর তার আইনজীবীরা যুক্তরাজ্যে টাকা পাঠানোর কথা আদালতে স্বীকারও করেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের সাথে রাজনৈতিক কোন সম্পর্ক নেই। রাজনীতি করে কেউ এমন কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর এবং কোন আপস হবে না।’
কারা কারা অর্থ পাচার করছে তা বের করতে সরকারকে কোন ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘স্বচ্ছতার প্রয়োজনে যা করার দরকার আমরা রাজি আছি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখবে।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার উদ্বেগজনক, কথাটা অসত্য নয়। এখনও হচ্ছে। ভারতেরও অনেক টাকা পাচার হচ্ছে। উদ্বেগজনক বলেইতো আমরা তদন্ত করতে বলেছি। এখানে আমরা স্বচ্ছতা চাই।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, দিপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, সুজিত রায় নন্দী, রোকেয়া সুলতানা, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুস সবুর, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।