ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দিল্লি সফর শেষে আজ দেশে ফিরছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দল ও দলের বাইরে কৌতূহল কী বার্তা নিয়ে তিনি ফিরেছেন?তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ২০২৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের মতোই এবারও ভারতের নির্দেশিত ফর্মুলা আনতেই এরশাদ দিল্লী গিয়েছিলেন।
তাকে বিমানবন্দরে ব্যপক গণসংবর্ধনা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। দলীয় নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন।
আজ সন্ধ্যায় এরশাদের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে রাখলে ব্যপক যানজট এবং জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
পাঁচ দিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে বিকেল ৪টায় জেট এয়ারওয়েজের একটি ফাইটে ঢাকায় ফিরেছেন এরশাদ। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ১৯ জুলাই ভারতের দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব:) মো: খালেদ আখতার তার সাথে যান।
সফরকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আজমীর শরিফে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির রহ: পবিত্র মাজার জিয়ারত করা ছাড়াও বিজেপি সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে বৈঠক করেন।
দল ও দলের বাইরের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের ভারত সফরের মূল ল্য ছিল আগামী নির্বাচনে তার এবং জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে- সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া। কারণ এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের নির্দেশনা না মানায় তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে বলে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন। এবার আর সেই ভুল তিনি করতে চান না। এ জন্য আগেভাগেই তার ভূমিকা কী হবে- তা ঠিক করতে চান। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গত ১৯ জুলাই তিনি পার্টির মাহসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং ব্যক্তিগত সচিব মেজর (অব:) মো: খালেদ আখতারকে সাথে নিয়ে নয়াদিল্লি যান।
এ সময় তিনি ভারতের মতাসীন দল ও সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়াও দেশটির একটি সংস্থার শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেন। ভারতের নেতারা এরশাদকে মতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দলের কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেছেন, স্যারের (এরশাদ) সাথে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারকদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা সবুজ সঙ্কেত দিয়ে আশ্বস্তও করেছেন। তবে এ সবুজ সঙ্কেত এককভাবে না আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়ে থাকতে বলেছেন সে ব্যাপারে তারা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি।
এ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পার্টি চেয়ারম্যানের দিল্লি সফরকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন এটা জাতীয় পার্টির জন্য বিশাল অর্জন। এ জন্য তারা আজ বিমানবন্দরে দলের চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতিও। দলের ঢাকা মহানগর দণি, উত্তর, মহিলা পার্টি, শ্রমিক পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, যুব সংহতি, কৃষক পার্টি, ওলামা পার্টি, ছাত্রসমাজসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো এরশাদকে সংবর্ধনা দিতে নিয়েছেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দেিণর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, নির্বাচনের আগে এরশাদের দিল্লি সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।’ তিনি বলেন, আমরা এ কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলীয়ভাবে বিমানবন্দরে পার্টি চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেয়ার। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এতে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা এবং ঢাকার পাশের জেলার নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও আমার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর-কদমতলী থেকেও বিপুল নেতাকর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবে।
পার্টির চেয়ারম্যানের বিভিন্ন টানাপড়েন থাকলেও এরশাদের এ আগমনে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সংসদে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। তিনি ইতোমধ্যেই পার্টি চেয়ারম্যানের গণসংবর্ধনা সফল করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।