ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার অপপ্রচার সেল খুলেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে নারী সরবরাহকারী ধান্দাবাজ সৈয়দ বোরহান কবীরকে।
ইদানিং তার সম্পাদিত অনলাইন পোর্টাল 'BANGLA INSIDER' এ লাগাতার ভাবে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দের বরাত দিয়ে অসত্য এবং বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে চলেছেন এই বোরহান করীর।প্রচারকৃ প্রতিটিসংবাদ সবৈব মিথ্যা বলে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার,জেনারেল মাহবুবুর রহমান ,তরিকুল ইসলাম এবং আব্দুল মঈন খান প্রমুখ।এছাড়াও এই হলুদ সাংবাদিকদেশনায়ক তারেক রহমানকে নিয়েও অসত্য এবং ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে ব্যপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন।
শেখ হাসিনার সাবেক এক উপদেষ্টা যিনি হল মার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এবং সাবেক একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী এই দুইজনকে নারী সরবরাহ করে হতদরিদ্র সৈয়দ বোরহান কবীর এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
কে এই সৈয়দ বোরহান কবীরঃ
রংপুরে গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় ছাত্র শিবিরের সাবেক সাথী সৈয়দ বোরহান কবীর ভোল পাল্টে ঢাকায় এসে এখন রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আলিশান বাড়ি, লেটেস্ট মডেলের গাড়ী,নারী পরিবেস্টিত বিলাসী জীবনযাপন করছে। তার এই যাপিত জীবন নিয়ে এককালের সতীর্থ সাংবাদিকরা রীতিমত বিস্মিত,হতবাক। শিবিরের গন্ধ গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে শত মুখে শেখ হাসিনার বন্দনা এবং বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারই এখন বোরহানের একমাত্র কাজ।
বোরহান কবীরের বাটপারি কার্যক্রমের পরিচালনার জন্য ধানমন্ডিতে তার প্রতিষ্ঠানের নাম “ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেড”। বিজ্ঞাপন এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার আড়ালে এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাঈম আশরাফের মতো নারী সরবরাহের অফিস। বিভিন্ন টেলিভিশন এবং প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকের সঙ্গে খাতির থাকার সুযোগে মিডিয়াতে কাজ করতে ইচ্ছুক মেয়েদেরকে ডেকে এনে এদেরকে ব্যবহার করেই আওয়ামী নেতামন্ত্রীদের কব্জায় রাখে ধুরন্ধর বোরহান। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক এমনটি দাবি করার কারণে অনেক নেতা মন্ত্রীরাই তার সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চাননা। বোরহান কবির দাবি করেন, “শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পেতে চান” – শেখ হাসিনার এই ইচ্ছে পূরণে তিনি কাজ করছেন।
সৈয়দ বোরহান কবীরের মিথ্যাচারের কিছু নমুনাঃ
বোরহান কবীরের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে আলোচিত দুই মডেল এবং দু’জনের নামের আদ্যাক্ষর “প”, এই মডেলদের সঙ্গে দুইজন এমপি এবং একজন মন্ত্রী বোরহানের অফিসেই একান্তে সময় কাটিয়েছেন । কিন্তু বোরহান গোপন ক্যামেরায় সেটি ফিল্মিং করে রাখে। এই দুই এমপির একজনের পিতা মন্ত্রী হওয়ার কারণে ওই মন্ত্রণালয়ে এখন বোরহানের একছত্র আধিপত্য। তাই বোরহানের কাছে জিম্মি থাকা আওয়ামী লীগের এক প্রতিমন্ত্রী বোরহানের অফিস বসেই মন্তব্য করেন, লাম্পট্য, মাদক ব্যবসা আর নারী সরবরাহকারী কার্লোস সালেহ এবং নাঈম আশরাফ শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারায় ধরা পড়লেও বোরহান কবিরের হাত অনেক লম্বা।
বোরহান কবীরের ঘনিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন বিকেলে শমী কায়সারের সাবেক স্বামী সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ এ আরাফাতকে নিয়ে বোরহান কবিরের সঙ্গে শমী কায়সারের কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বোরহান কবিরকে সাবধান করে দেন শমী কায়সার। তখন বোরহান কবির শমী কায়সারকে বলেন “আমি কার্লোস কিংবা কিংবা নাঈম আশরাফ নই -আমার হাত অনেক লম্বা” ।
বোরহান কবীরের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেস্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও আওয়ামীলীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের মনোরঞ্জনে সদা ব্যাস্ত থাকতো বোরহান। এর বিনিময়ে তারাই বোরহান কবিরকে কোটি কোটি টাকা বানানোর পথ খুলে দেন।
শেখ হাসিনার উপদেস্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সাথে মিলে বার্ডফু রোগের ওষূধ সরবরাহ করার নামে ২০০ কোটি টাকার এক প্রকল্প হজম করে ফেলে মোদাচ্ছের-বোরহান চক্র। আর আবু সাইয়িদ তার সময়ে বোরহানকে বিটিভিতে “পরিপ্রেক্ষিত” নামে একটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ দেন। ফলে বোরহানের পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি । “পরিপ্রেক্ষিত” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একদিকে বোরহানের চাঁদাবাজির পথ খুলে যায় অপরদিকে মিডিয়াতে কাজ করতে ইচ্ছুক মেয়েদের সঙ্গে তার যোগাযোগের দরজা উম্মুক্ত হয়ে যায়। বার্ডফ্লু রোগের ওষূধ সরবরাহ প্রকল্পের টাকা লুট আর পাশাপাশি চাঁদাবাজি এবং প্রয়োজন মতো সরকারের প্রভাবশালীদের নারী সরবরাহ এসবই বোরহানের জীবনধারণের পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়।
এই পুঁজি ব্যবহার করেই এখন ঢাকা শহরের ডিজিটাল হোর্ডিং ব্যবসা বোরহানের নিয়ন্ত্রনে। পাতাল রেলের খবর নেই, অথচ তার আগেই শহরের বিভিন্ন সড়ক মোহনার হোর্ডিংয়ে শোভা পাচ্ছে বোরহান বাটপারের পাতাল রেল। সকল অপকর্ম আড়াল করতে গত ফেব্রুয়ারী মাসে বোরহান বাটপার এখন নতুন করে ’বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি নিউজ ওয়েব পোর্টাল খুলেছে । ঘনিষ্টজনের কাছে বোরহান বাটপার বলেছে, শেখ হাসিনা এবং জয়ের নির্দেশে তারা এটি খুলেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে এমন রিপোর্ট প্রচার করা যাতে বিএনপির কর্মী সমর্থকরা বিভ্রান্ত ও বিব্রত হয়।
সূত্রমতে, এরইমধ্যে শেখ হাসিনার প্রশ্রয়ে নারী সরবরাহকারী বোরহান বাটপার বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক চরিত্র হনন করে রিপোর্ট লেখা শুরু করে দিয়েছে। এইসব রিপোর্ট লিখে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বোরহান কবিরের ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক জানান,’বাংলা ইনসাইডার’ অফিসে প্রায় প্রতি রাতেই বসে জমজমাট আড্ডা। আড্ডার অনুষঙ্গ নারী ও মদ। বোরহানের হেরেমের এই আড্ডায় প্রায়শই অংশ নেন সরকারের কমপক্ষে দুইজন মন্ত্রী, শেখ হাসিনার দুইজন উপদেস্টা এবং শেখ হাসিনার অফিসে গুরুত্বপুর্ন দুই কর্মকর্তা। এই দুই কর্মকর্তার একজন জয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ট।
বোরহান কবীরের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্য মুখ না খুললেও ঢাকার প্রায় সব সাংবাদিকই বোরহান কবীরকে চেনেন ব্লাকমেইলার এবং টাউট-বাটপার হিসেবে। মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ লেখার কারনে আজকের কাগজ এবং ভোরের কাগজ থেকে দুইদফা বোরহানকে বের করে দেয়া হয়। বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের নামে বানানো মিথ্যা সাক্ষাৎকার আজকের কাগজে ছেপে বোরহান কবীর একবার চাকুরী হারান। মিথ্যা খবর প্রকাশ এবং চাঁদাবাজির কারনে কমপক্ষে তিনবার জেল খাটে বাটপার বোরহান। ২০০১ সালের ১৬ জানুয়ারী বিটিভির “পরিপ্রেক্ষিত” অনুষ্ঠানের শুটিং করতে গিয়ে বোরহান বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নিমাইদিঘি গ্রামে এক মহিলাকে ধর্ষন করার চেষ্টা করে । এরপর মহিলার চিৎকারে গনধোলাইয়ের শিকার হয়। উত্তেজিত জনগণ তাকে পিটিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সায়ীদের ফোন পেয়ে পুলিশ তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
সাংবাদিক এবং বোরহানের পরিচিতজন এবং তার গ্রামের বাড়ীতে খোজখবর নিয়ে জানা যায়, রংপুরের এক অজপাড়া গায়ের বোরহান কবির শুরুতে ধর্মকর্ম করতো। সেই সময় সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়ায়। তখন ছিল শিবিরের সাথি । তার পরিবারের দুই জন জামায়াতের রোকন। জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক থাকাকালে বোরহানের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন গোলাম আজমের শিষ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দ বোরহান কবীরের পরিবার ও তার আত্মীয় স্বজনের অধিকাংশই ছিলো রাজাকার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান বোরহান কবীর ঢাকায় আসার পর শিবিরের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। পত্রপত্রিকায় ঢোকার জন্য ফন্দিফিকির করতে থাকে। শিবিরের পত্রপত্রিকা হাতেগোনা তাই আওয়ামী ধারার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়।
তার ঘনিষ্টজনরা জানায়, বোরহানের লেখা পড়ার দৌড় এইচএসসি পর্যন্ত। কিন্তু আওয়ামী স্বেছাসেবক লীগের নারী সরবরাহকারী নাঈম আশরাফের মতো বোরহান নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। এই পরিচয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায় কাজ শুরু করে। বোরহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দাবি করলেও তা মিথ্যা বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অফিসের একটি সূত্র বোরহান কবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোনো ডকুমেন্ট খুঁজে পায়নি। তবে পত্রিকায় কাজ করার সুবাধে সাংবাদিক পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে হলে থাকতো। ওই সময় বোরহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মলি নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর হল ছেড়ে বাসা নেয় গ্রীণ রোডে। আর এই মলিই হয়ে উঠে বোরহানের উপরে ওঠার সিঁড়ি। বোরহানের বাসায় শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ডা: মোদাচ্ছের আলী, আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ অনেক প্রভাবশালীরা যাতায়াত করতো। সবার “সেবা” করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে মলি দু’দফা বোরহানের সংসার থেকে চলে যায়। বোরহানের উপর রাগ করে মলি চলে যায় দৈনিক আজকের কাগজের তৎকালীন স্টাফ রিপোর্টার এনাম আবেদিনের কাছে। আজকের কাগজের সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় হাত পা ধরে এনামের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা হয় মলিকে। বোরহান কবীরের লাম্পট্যে অতিষ্ট হয়ে কিছুদিন পর দৈনিক ভোরের কাগজের মফস্বল সম্পাদক রমেন বিশ্বাসের সঙ্গে আবারো চলে যায় মলি। এরপর আবার মাফ চেয়ে ফিরিয়ে আনা হয় মলিকে।