ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান অবশ্যই জড়িত উল্লেখ করে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে বললেন, আপনি তো অসুস্থ, দায়িত্ব ছেড়ে দেন। সায়েম বললেন, না আমি ঠিক আছি। কিন্তু জিয়া এরপর অস্ত্রের মুখে সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন।
তবে এই সময় হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টের দুঃখজনক ঘটনার সময়ে কর্তব্যে চরম অবহলা কারী সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর নামটিও উচ্চারন করেননি।
তিনি আরও বলেন ,৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করে জিয়া হাজার হাজার সৈনিক-সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। রক্তের মধ্যে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সেই দেশ আবার চলে গেল পরাজিত শক্তির হাতে।
শোকাবহ আগস্টের প্রথমদিনে মঙ্গলবার বিকেলে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষকলীগ শোকাবহ আগস্ট স্মরণে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ঘরের লোকেরাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে বেঈমানি করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে মূল ষড়যন্ত্র ছিল খন্দকার মোশতাকের। তবে এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন। তার প্রমাণ মেলে এভাবে যে, সংবিধান লঙ্ঘন করে মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি, পদোন্নতি দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করল।
১৫ আগস্টের কালরাতের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। তবে এটা শুধু একটি পরিবারকে হত্যা নয়, বাঙালি জাতির বিজয়কে হত্যা, আদর্শকে হত্যা। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের মানুষ হারিয়েছিল তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। হারিয়েছিল সম্ভাবনা, আশা-ভরসা।
জিয়াউর রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ হয়তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়টা ছিল পাকিস্তানে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ‘রেপড’ হওয়া মা-বোনদের সন্তানদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি নতুন দেশ, যা ছিল পাকিস্তানের একটি প্রদেশ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দেশটিকে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাাঁড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এদেশের কৃষক ও শ্রমিকদের মর্যাদা দেন।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মানুষ ও তাদের কিছু চাটুকার ছাড়া ২১ বছর এদেশের মানুষ শোষিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন এদেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন তিনিই শুরু করেছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের আগস্টের এই দিয়ে জার্মানিতে বসে শুনলাম, আমাদের কেউ নেই। জিয়াউর রহমান শেখ রেহানার পাসপোর্ট নবায়ন করতে দেননি।
ভারতের নয়াদিল্লিতে যখন ছিলাম, তখন হাইকমিশনার শামসুর রহমান সাহেব, যিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন, তিনি কাউকে কিছু না বলে আমাদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি কালো দিবস। যদি বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতেন, ১৫ আগস্ট না আসতো, তবে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারাদিশ্বের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত পেতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আকাঙ্খা নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ।
তিনি বলেন, আমরা তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি, এর মাধ্যমে এতোটুকু হয়েছে যে যারা খেতে পারতেন না, তারা এখন অন্তত একবেলা হলেও খেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এদেশের মানুষ সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ পেয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নই এটা ছিল, যা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তের ঋণ শোধ করে গেছেন। অথচ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর তার মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিব্বত ৫৭০ সাবান দিয়ে তার মরদেহ গোসল করানো হয়। তাকে দাফনও করা হয় রেডক্রিসেন্টের হাসপাতালে থাকা রিলিফের কাপড় দিয়ে। অর্থাৎ তিনি কিছুই নিয়ে যাননি।
তিনি বলেন, যখন দেখি এদেশের মানুষ ভালো আছেন, তখন আমি মনে করি নিশ্চয়ই বেহেশত থেকে আমার আব্বা-আম্মা দেখছেন।তবে আবেগময় এই বক্তব্যে হাসিনা তৎকালীন জাসদ এবং গনবাহিনীর অপতৎপরতার কথা একবারও স্মরন করেননি।
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খান, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার শামসুল হক রেজা প্রমুখ।