দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র মালিকানা নাকি ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। সম্প্রতি ‘হোপ বাংলাদেশ ইনক’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র মালিকানা দাবী করেছে। এনিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ব্যপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি-কে ইনকরপোরেট করার বিষয়টিকে তারা আওয়ামী ষড়যন্ত্র ও হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ, সম্প্রতি ‘হোপ বাংলাদেশ ইনক’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘সতকীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশের ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঐ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, ‘কোন ব্যক্তি বা গ্রুপ 'হোপ বাংলাদেশ ইনক’ এর অনুমতি ছাড়া বিএনপি ইউএসএ (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি/বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যুক্তরাষ্ট্র), জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান, বিএনপি পতাকা, প্রতীক (ধানের শীষ)’ ব্যবহার করতে পারবে না। ‘হোপ বাংলাদেশ ইনক’-এর অনুমতি ছাড়া উপরোক্ত নাম/প্রতিষ্ঠান এবং এর পতাকা/প্রতীকের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে স্বত্ত্বর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে এটর্নী ডেভিড কর্নগোল্ড-এর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র মালিকানা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ এক প্রতিক্রিযায় বলেন, বিষয়টি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। যারা এই কাজটি করেছে তারা আওয়ামী লীগের পারপার্স সার্ভ করতেই নোংরা খেলায় নেমেছে। তিনি বলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি না থাকায় দলের মধ্যে কোন্দল, উপ কোন্দল, বিভক্তি বিদ্যমান। তারপরও শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ। কেননা, আমরা সবাই জিয়ার সৈনিক। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি নেই বলেই সাময়িক এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি হলেই সকল সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আশার কথা হচ্ছে সব ভেদাভেদ ভুলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। এখন কেন্দ্র উদ্যোগ নিলেই সকল সমস্যারও সমাধান হবে।
অপর সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কোন মন্তব্য করার কিছু নেই। এসব নিয়ে আলোচনা করলে অন্যদেরকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে আমি মনে করি বিএনপি আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দলের দায়িত্বশীলরা এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সামসুল আলম মজনু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি, দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় দল বিএনপি আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান নিয়ে যে বা যারা ইনকরপোরেটের খেলা খেলছেন তারা গর্হিত কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি। আমি এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিস্টদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল। সেই দলের শাখা সংগঠন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কর্মকান্ড অতীতেও পরিচালিত হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে। কোন রাজনৈতিক দল, দলের প্রতীক বা লগো, দলের প্রতিষ্ঠাতা বা নেতা-নেত্রী কারো ব্যক্তিগত ইনকরপোরেট হতে পারেন না। তিনি বলেন, ইনকোরপোরেটের সাথে রাজনৈতিক দলের কোন সম্পর্ক নেই।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হেলাল উদ্দীন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, মাঠ চাষ না করলে, মাঠে আগাছা জন্মাবেই। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে যা ঘটছে তা কেন্দ্রের উদাসীনতার কারনেই ঘটছে। মাঠ চাষ করেই ফসল ফলাতে হয়। অথচ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কোন কমিটি নেই। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। শহীদ জিয়া, বিএনপি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের নামে যা ইচ্ছে তাই হচ্ছে। তিনি মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি থাকলে এমনটি হতো না।
যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমদ বলেন, বিএনপি কারো ব্যক্তিগত দল নয়। যারা বিএনপি বা জিয়া-খালদা জিয়া বা তারেক জিয়াকে ব্যাকেটবন্দী করতে চান তারা বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা নেই যে আইন করে বিএনপি’র রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যুবদল এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং এধরনের অপশক্তিকে যুব সমাজ মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, যারা এমন কাজ করেছে তারা আগে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তারা নব্য বিএনপি সেজে বিএনপিকে ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছেন। তিনি বলেন, আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে-প্রবাসে বিএনপির রাজনীতি করি। তিনি বলেন, অাইন করে বিএনপি বা বিএনপি’র রাজনীতি বন্ধ করার এখতিয়া নিয়ে আইনগত যৌক্তিকতার বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে কানাডার মন্ট্রিয়ল থেকে কানাডা বিএনপি নেতা এবং সাংবাদিক ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফুর রহমান রাজু বলেন,' বিএনপি বাংলাদেশের গনমানুষের দল,এই দলের নাম কেউ তার নামে রেজিষ্ট্রি করলেই এই নাম ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যায় না।শুধু মাত্র জিয়া পরিবার এই দলের মালিকানা দাবী করার অধিকার রাখে,অন্য কেউ নয়। যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা তথা বহির্বিশ্বের অনেক দেশেই প্রচুর নেতা-কর্মী থাকার পরও বেশ কিছুদিন যাবৎ কোনো কমিটি নেই।এ কারনেই এসব ঝামেলা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলেই এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এব্যাপারে ‘হোপ বাংলাদেশ ইনক’এর কর্ণধার জ্যাকস মিল্টনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একজন সচেতন আর গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই বিএনপি’র নামে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি যাতে বিএনপি সহ দেশের সকল বিরোধীদল ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির রাজনীতি বা কর্মকান্ড পরিচালনা করলে আমাদের কোন কথা নেই, কিন্তু বিভক্ত হয়ে কাউকে বিএনপি বা জিয়া-খালেদার নামে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। এজনই মিডিয়ার মাধ্যমে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিরি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।