ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে রাজধানীর একটি হোটেলে অতি সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিলেন বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতা। তাঁদের আলোচনার লক্ষ্য ছিল একটাই, অাগামী জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে যাবেন তারা। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং ২০দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতেও তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।
সেখানে অংগ্রহণকারীরা একটি বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে সক্ষম।
ওই নেতাদের মতে, ‘২০১৪ সালের বেগম জিয়ার নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে ধ্বংসের মুখে পড়ে বিএনপি। বর্তমানে যে বিএনপি তা জিয়ার আদর্শের বিএনপি নয়। এমন বিএনপি জিয়াউর রহমান কখনো চাননি।’
ওই নেতারা বলেন, ‘বর্তমান বিএনপি শুধু বেগম জিয়া এবং তাঁর ছেলে তারেক জিয়ার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারেই নিয়োজিত একটি সংস্থার মতো কাজ করছে। এখানে দলের সিনিয়র নেতারাও গুরুত্ব পাননা। তাই বিএনপি অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট থাকবেন।’
বৃহস্পতিবারে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ৪২ জন বিএনপি নেতা। এদের পরিচয় ও সংসদীয় আসনের পরিচিত দেওয়া হলো:
- এম এ হেনা (সাবেক এমপি), ৫৪ রাজশহাী-৪/রাজশাহী-৩
- সৈয়দ শহিদুল হক জামাল (সাবেক হুইপ), ১০২ বরিশাল-পিরোজপুর
- আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান (সংসদের সাবেক হুইপ) ৩৫ জয়পুরহাট-২
- মো. আবদুল করিম আব্বাসি (সাবেক হুইপ) ১৬১ নেত্রকোনা-১
- মো. আশরাফ হোসেন (সাবেক হুইপ) ১০১ খুলনা-১
- মো. আলমগীর কবির (সাবেক স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী) ৫১ নওগাঁ-৬
- মো. আবদুল গনি (সাবেক এমপি) ৭৪ মেহেরপুর-২
- গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (সাবেক এমপি) ৪০ বগুড়া-৫
- মো. আবদুল্লাহ (সাবেক এমপি) চাঁদপুর-৪
- মনি স্বপণ দেওয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী) রাঙামাটি-২৯৯
- মো. মোজাম্মেল হক (সাবেক এমপি) নাটোর-৪
- ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান (সাবেক এমপি) কক্সবাজার-৩
- এ টি এম আলমগীর (সাবেক এমপি ১৯৯১) কুমিল্লা-১০
- মোয়াজ্জেম হোসেন (পুবালী ব্যাংকের পরিচালক) ঝালকাঠি
- ব্যারিস্টার কামরুজ্জামন, ঝিনাইদহ-৩
- লিংকন (সাবেক এমপি) ৩২ গাইবান্ধা-৪
- আবদুল ওয়াহেদ (পরিচালক এফবিসিসিআই) চাপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩
- মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মেয়র, রাজশাহী সিটি করপোরেশন
- প্রফেসর জয়নাল আবেদিন (সাবেক এমপি) ফেনী-২
- নাসিরুল হক সাবু (সাবেক এমপি), রাজবাড়ি-২
- এস এ সুলতান (সাবেক এমপি) চাঁদপুর-৪
- অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব (সুপ্রিম কোর্ট) টাঙ্গাইল সদর
- মেজর (অব.) আনিসুর রহমান (চেয়ারম্যান, বে অ্যাগ্রো) শরিয়তপুর-৩
- মো. ওয়াহিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা-১
- আবদুল মতিন, বগুড়া-২
- ফজলুর রহমান বাদশা, বগুড়া সদর
- সেলিম রেজা হাবিব (সাবেক এমপি) ৬৯ পাবনা-৩
- এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম (সাবেক এমপি) পাবনা-৩
- রুস্তম আলী ফরাজি (এমপি) পিরোজপুর-৩
- সুলতান মাহমুদ বাবু (সাবেক এমপি) জামালপুর-২
- এম এম শাহীন (সাবেক এমপি) মৌলভীবাজার-২
- মোশারফ হোসেন মঙ্গু (সাবেক এমপি) বরিশাল-৩
- আশরাফ হোসাইন চৌধুরী (ব্যবসায়ী) মুন্সিগঞ্জ-১
- বাবর আলী (উপজেলা চেয়ারম্যান, পাইকগাছা, খুলনা)
- মতিয়র রহমান মন্টু (সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী জেলা বিএনপি, পবা, মোহনপুর, রাজশাহী)
- ইসরাত সুলতানা এলেন ভুট্টু (সাবেক এমপি) ঝালকাঠি-২
- শাহ মো. আবদুল হোসেন, বরিশাল-৪
- দেওয়ান সুলতান আহমেদ (সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই) লক্ষীপুর-১
- অ্যাডভোকেট এম এ রশিদ, বরিশাল
- এস আলম, ফরিদপুর সদর
- অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বকুল, জয়পুরহাট-১
- অ্যাডভোকেট সোলায়মান মন্ডু, ১ জয়পুরহাট
লক্ষ্য করা যায় এই বৈঠকে উপস্থিত কেউ কেউ ১/১১ এর সময় সংস্কারবাদী হয়ে উঠেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেগম জিয়া তিনমাস বিদেশে অবস্থানকালে উল্লিখিত নেতারা সংঘবদ্ধ হয়। এর আগে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদাভাবে যোগাযোগ হলেও নির্বাচন কেন্দ্র করে একজোট হয়ে আলোচনার ঘটনা এটিই প্রথম।
বিএনপির শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে গেলে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। আর সেক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে বর্তমান গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করেন তারা।