DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতারণার দায়ে বৃটিশ পার্লামেন্টের পদ হারাচ্ছেন টিউলিপ !

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতারণামুলক বক্তব্য প্রদান, সাংবাদিককে হুমকি এবং শপথ ভঙ্গের দায়ে সংসদ সদস্য পদ হারাতে যাচ্ছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ পার্লামেন্ট এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন এলাকা থেকে নির্বাচিত লেবার দলীয় এমপি টিউলিপ সিদ্দিক গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) চ্যানেল-ফোরের এক সংবাদিককে হুমকি দেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে তার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গুম হওয়া বৃটেন থেকে ব্যারিস্টার আহমদের মুক্তির ব্যাপারে টিউলিপ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক ডেইজির ওপর ক্ষেপে উঠেন টিউলিপ। ডেইজিকে হুমকি দিয়ে টিউলিপ বলেন, “আমি হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন এর এমপি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন সদস্য। খুবি সতর্ক থাকবেন।” টিউলিপ বলেন, “আমি বাংলাদেশের নাগরিক না। আর আপনি যে ব্যক্তির কথা বলছেন তার মামলা সম্পর্কে আমি জানি না। এখানেই আমার কথা শেষ।” সাংবাদিক ডেইজির গর্ভাবস্থা নিয়েও পরে কটাক্ষ করেন টিউলিপ।

বিষয়টি নিয়ে চ্যানেল-ফোর বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনে তারা পরিস্কার করেই বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা ব্যারিষ্টার আহমেদ বিন কাসেমকে গুম করেছে। নিজের সাংবাদিককে হুমকি দেবার ঘটনায় লেবার পার্টির কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চ্যানেল ফোরের নিউজের সম্পাদক। চ্যানেল ফোর’এর রিপোর্টার এ্যালেক্স থমসন, ক্যামেরাম্যান ও সাংবাদিক ডেইজি এইলিফ টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার গ্রহণের চেষ্টা করেন।

বৃটিশ একজন এমপি হয়ে টিউলিপ প্রকাশ্যে একজন সংবাদকর্মীকে এভাবে হুমকি দেয়া নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগােযাগ সাইটগুলোতেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এটা দেখেছেন, তারা বিষয়টিকে উদ্ভট এবং অশোভন আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্ট হাউজ অব কমন্স সাধারন বিতর্কে যায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালি এমপি নাডিন ডরিস বিষয়টি হাউজে উপস্খাপন করে টিউলিপ কর্তৃক একজন সাংবাদিককে হুমকি প্রদান ও কটুক্তির নিন্দা জানান, তিনি সরকারের বক্তব্য দাবী করেন। অবশেষে ফার্স্ট সেক্রেটারী অব স্টেট ডেইমিন গ্রীণ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, টিউলিপের আচরণের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া, বাংলাদেশে অব্যাহত রাষ্ট্রীয় খুন গুম নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলবেন তারা।

নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ায় এভাবেই নতুন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান দখলদার সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। বৃটেনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজত্ব উপভোগ করতে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে বেড়াতে যান। বাংলাদেশে তার খালার নির্বাচনী সভা সমাবেশে টিউলিপকে উপস্থিত দেখা গেছে, এমনকি তার সাথে রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন টিউলিপ। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন’ পাশ করেন। ঐ আইন অনুসারে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা ও তাঁদের সন্তানাদির জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে বিশেষ নিরাপত্তা (এসএসএফ নিরাপত্তা), যানবাহন, এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে বাসস্থান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন টিউলিপ।

তদুপরি টিউলিপ গত শনিবার নিজে ‘বাংলাদেশী নন’ বলে সবকিছু উড়িয়ে দেন। তাছাড়া বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যারিস্টার আহমেদের বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ কিছুই জানেন না দাবী করলেও আসলে তিনি সবই জানেন। বিশ্বের সকল গণ মাধ্যমে বিষয়টি প্রচারিত হয়, এমনকি টিউলিপের অফিসে এ বিষয়ে মেমোরেন্ডাম জমা দেয়া হয়েছে। তদুপরি প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ যে কথা বলেছেন, তা একটি মিথ্যাচার। এই অনৈতিকতার দায় নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে কেউ সদস্যপদ রাখতে পারে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিক ডেইজির প্রশ্ন শুনে টিউলিপের ক্ষেপে যাওয়ার ধরণ দেখে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ধারণা- ব্যারিস্টার আহমেদ গুম হওয়ায় তার খালা হাসিনার সাথে টিউলিপ নিজেই জড়িত থাকতে পারে। তাছাড়া টিউলিপের সাথে চ্যানেল ফোরের ঘটনার পরে ব্যরিষ্টার আহমেদের ঢাকার বাসায় সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা পূনরায় হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক হয়রানিও করে। তাই এ নিয়ে নিবিড় তদন্ত প্রয়োজন।

উল্লেখ করা যায় যে, টিউলিপ বৃটিশ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে বাংলাদেশের সংসদের শেখা হাসিনার নেতৃত্ব বিরাট উৎসব হৈ চৈ করা হয়। রাষ্ট্রপতি আবদূল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপকে ‘বাংলাদেশী কন্যা’ হিসাবে অভিনন্দন জানায়, এমন খবর অনলাইন জুড়ে আছে। পরে টিউলিপ নিজেও প্রেস ব্রিফিং করে নিজেকে ‘বাংলাদেশী’ হিসাবে তুলে ধরেন, এমনকি বাংলাদেশে রাজনীতি করার আগ্রহও ব্যক্ত করেন!

কিন্তু গত শনিবার টিউলিপ নিজে “বাংলাদেশী নন” বলে যে চিৎকার ও হুমকি দেন, তারপরে টিউলিপের নাগরিকত্বের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, তিনি এত ঘন ঘন বাংলাদেশে যান কোন ক্যাপাসিটিতে। সর্বশেষ তিনি তার স্বামী ক্রিস্টিয়ান উইলিয়াম সেইন্ট জন পার্সিকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছেন ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর। প্রশ্ন উঠেছে তিনি কিভাবে গিয়েছেন? তিনি কি বৃটিশ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে ঢাকায় গিয়েছেন? নাকি বাংলাদেশী দ্বৈত নাগরিক হিসাবে “নো ভিসা রিকোয়ার্ড” সুবিধায় গেছেন? বাংলাদেশ এবং বৃটেনের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকরা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। সেই সুযোগে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তি বৃটেনের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বও বহাল রাখতে পারেন।

চ্যানেল ফোর টেলিভিশনকে টিউলিপ সিদ্দিক প্রকাশ্যেই বলেছেন, তিনি ‘বাংলাদেশী নন’। তাহলে জন্মসূত্রে একজন বৃটিশ সিটিজেন টিউলিপ সিদ্দিক এতদিন কোন উপায়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন? এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বরের আগে হাইকমিশন টিউলিপ সিদ্দিকের কাছ থেকে ভিসার জন্য কোনো আবেদন পায়নি। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পরিচয় গোপন করে কিংবা নিজ নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একজন বৃটিশ এমপি টিউলিপ বাংলাদেশ সফর করেছেন?

এ বিষয়টি হাউস অফ কমন্স এবং লেবার পার্টিতেও আলোচনায় এসেছে বলে জানিয়েছে লেবার পার্টির একজন এমপি। সূত্রমতে, এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে যৌক্তিক জবাব পাওয়া না গেলে কেবল তার বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্য পদই যাবে না, নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও চ্যানেল-ফোরের সাংবাদিক ডেইজির প্রশ্নের উত্তরে টিউলিপ নিজেকে “বাংলাদেশী নন” বলে দাবী করেন, তথাপি স্মরণ করা যায়, হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন এলাকায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে টিউলিপ নিজেকে বাংলাদেশী এবং শেখ মুজিবের নাতনী হিসাবে ভোট প্রার্থনা করেন। এরূপ অসংখ্য ভিডিও অনেকের কাছে আছে। এরূপ ভিডিও প্রমান নিয়ে হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন এলাকার অনেক ভোটার আদালতে টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রতারণা দায়ে মামলা করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!