ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত ১০ই নভেম্বর ২০১৭ এ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের টেলিভিশন টকশোতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের কথিত অর্থ পাচার ইস্যুতে আলোচনা করেন 'The Daily Observer'এর সম্পাদক ও শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। জনাব চৌধুরী তার পত্রিকায় প্রকাশিত বানোয়াট সংবাদটিকে সমর্থনতো করেনই, উপরন্তু সম্পূরক যুক্তিতর্ক পেশ করে হাসিনাকে সৎ প্রমাণের অতি হাস্যকর চেষ্টাও করেন।
বালখিল্যসুলভ কথাবার্তায় শেখ হাসিনার প্রতি ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিশেষ অনুরক্ততা কিংবা প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার সহজ আভাস মিলে।
অপরদিকে মাহফুজ উল্লাহ খবরটিকে মিথ্যা, কল্পনাপ্রসূত ও নির্বাচনপূর্ব চরিত্র হননের অপচেষ্টা বলে উড়িয়ে দেন। উপস্থাপক তখন মাহফুজ উল্লাহর কাছে জানতে চান এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিএনপির এত সময় লাগলো কেনো।
প্রশ্নটির সুন্দর, কৌশলী ও বোধগম্য জবাব দিতে পারলেও প্রকৃত তথ্য উঠে আসেনি জনাব মাহফুজ উল্লাহর বক্তব্যে।
নিখুঁত সত্যিটা হচ্ছে, ৩০শে নভেম্বর 'The Bangladesh Observer'এর অনলাইন ভার্সানে খবরটি প্রথম প্রকাশিত হলে (প্রিন্টে সম্ভবত পরের দিন) তাৎক্ষণিক নজরে আসে বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েমের।
তিনি এ বিষয়ে নিজে অনুসন্ধান শুরু করেন এবং যোগাযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও বিএনপির বৈদেশিক দূত জাহিদ এফ সরদার-সাদী'র সাথে। দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্যানাডার বিএনপি নেতা ক্যাপ্টেন মারুফ রাজুকে।
বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর তারা নিশ্চিত হন, 'The Global Intelligence Network' ও 'The National' নামের কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই নেই সংশ্লিষ্ট দুটি দেশে, সংবাদের সত্যতাতো লক্ষ আলোকবর্ষ মাইল দূরের কথা।
খবরটি একশতভাগ মিথ্যা, প্রতারণামূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সায়েম ও জাহিদ এফ সরদার সাদীর মনে কোন সন্দেহ না থাকলেও এতে সূত্র হিসেবে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার তাগিদ বোধ করেন তারা।
সবকিছু খোলাসা হয়ে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার সায়েম ২ ডিসেম্বর লন্ডন সময় সকাল ১১:৫১টায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন যা স্ক্রীনশটে নিচে দেওয়া হলো। অ্যামেরিকায় তখন সকাল ৬:৫১টা। এর তিন মিনিট পর ১১:৫৪ টায় অর্থাৎ অ্যামেরিকার সকাল ৬:৫৪টায় জনাব সাদী স্ট্যাটাসটি তার পেজে আপলোড করেন।
এরপর এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ব্যারিস্টার সায়েম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখেন, প্রচারিত সংবাদটি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার কারসাজিমূলক গুজব এবং ব্যাখ্যা করেন কারা কী উদ্দেশ্যে এগুলো ছড়াচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি এবং পাহাড়সম দুর্নীতি ও অপরাধের শাস্তি এড়াতেই হাসিনা-রেহানা-জয়-পুতুল-ববি-টিউলিপ গং এহেন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।"
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করলে এ প্রতিনিধিকে জানানো হয়, তারা সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। কোন কিছুই তাদের চোখ এড়াচ্ছে না। অবৈধ সরকারের মিডিয়া ও তথ্য সন্ত্রাস মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছিলেন এবং আজ ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইনি নোটিশ প্রেরন করা হয়।
সৌদী আরব ও ক্যানাডা বিএনপিও অনুরূপ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মিডিয়ার কাছে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে। বিএনপি নেতারা বলেন, গুজব ছড়িয়ে কোন লাভ হবে না। আওয়ামী লীগের পতন অনিবার্য।