ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সব সময় রাজনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক থেকে দূরে থাকা তাবলিগ জামায়াত সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে। মূলত অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে কারণে সংগঠনটি দুটি বড় পক্ষে বিভক্ত হয়ে আছে। এরই জের ধরে গতকাল বুধবার শাহজালাল বিমান্দবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ করে তাবলিগের একাংশ।
আগামী শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) এবং ১৯ জানুয়ারি দুই দফায় তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম দফায় ১৪ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় দফায় ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে সংগঠনের দীর্ঘদিনের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে অতিথি হিসেবে আনতে চান একপক্ষ। অন্য পক্ষের কঠোর অবস্থান, সাদকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া যাবে না। আজকের বিক্ষোভে দ্বিতীয় পক্ষ অংশ নিয়েছে। এছাড়া দেশের আলেম সমাজের বড় অংশও মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য পরে শর্ত সাপেক্ষে সাদকে বিমানবন্দর থেকে কাকরাইলে তাবলিগের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে মাওলানা সাদ এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন না , বাংলাদেশে অবস্থান কালে তিনি কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করবেন এবং সুবিধাজক জনক সময়ে ভারত ফিরে যাবেন।
কে এই মাওলানা সাদ ? কেন তাকে এতো নিয়ে বিতর্ক?
মাওলানা সাদ কান্ধলভী একজন ভারতীয় আলেম। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব-মারকায বা কেন্দ্র হলো দিল্লির ‘নিজামুদ্দিন মারকায। এই কেন্দ্রে দায়িত্বে যিনি থাকেন তাকেই বিশ্ব-তাবলিগের আমির বলা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তাবলিগের আমিরের দায়িত্ব পালন মাওলানা সাদ। তাকে নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে উপমহাদেশে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বেশ কিছু বক্তব্যকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জারি করা এক ফতোয়ায় মাওলানা সাদের কড়া সমালোচনা করেছে দেওবন্দের ফতোয়া বোর্ড।
দেওবন্দের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা ফতোয়ায় বলা হয়, ’মুসলিমদেরকে, বিশেষ করে যারা তাবলিগ জামায়াতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর সংসর্গে আছেন তাদেরকে সাবধান করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে মাওলানা কান্ধলভী কুরআন ও হাদিসের কিছু বিষয়ে এমন সব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যা সত্য থেকে বিচ্যুত এবং আলেম উলামাদের সর্বসম্মত মতামতের বিরোধী।’
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতর্কিত বক্তব্যের একাধিক অভিযোগ পেয়ে তা যাচাই বাছাইয়ের পর দেওবন্দ এই সিদ্ধান্তে আসে বলে জানানো হয়। ফতোয়ায় আরও বলা হয়, ‘যদি দ্রুত সাদ কান্ধলভীর ব্যাপারে সতর্ক না হোন, তাহলে মুসলমানদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভ্রান্তিতে পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
দেওবন্দের এই অবস্থানকে তাবলিগের একাংশ সঠিক মনে করছেন। এবং তারা চান না সংগঠনটির নেতৃত্বে তিনি থাকুন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আগামী শুক্রবারের ইজতেমায় তার অংশগ্রহণের ঘোর বিরোধী এই অংশে মূলত আলেম সমাজ রয়েছেন।
মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে যেসব বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হল–
# ”বর্তমানে মানুষ তওবার ৩ টি শর্ত মনে রেখেছে। ৪র্থ শর্ত আজ সবাই ভুলগেছে। তা হলো ‘খুরুজ’ (তাবলিগের কাজে বের হওয়া।) ৯৯টি হত্যাকারীর যখন এক পাদ্রীর সঙ্গে সাক্ষাত হলো তখন তিনি তাকে নিরাশ করেন৷ পরে এক আলেমের সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাকে বলেছিলেন, ওমুক গ্রামের (আলেমের খোঁজে) দিকে বের হয়ে যাও। তো সে যখন সে দিকে বের হয়ে গেলো তখন আল্লাহ পাক তার তওবা কবুল করলেন। এর থেকে বুঝা যায় তওবা কবুল হওয়ার জন্য ‘খুরুজ’ শর্ত। এ ছাড়া কারো তওবা কবুল হবে না৷ এই শর্তটি মানুষ ভুলে গেছে।”
# ”হজরত মুসা (আলাইহিস সালাম) নিজ কওম এবং জামাতকে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চলে গিয়েছিলেন। যার ফলে বনি ইসরাঈলের ৫ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।”
# ”হেদায়েত প্রাপ্তির একমাত্র জায়গা হলো মসজিদ। যেখানে কেবল ধর্মীয় পড়াশোনা হয়, তাদের সম্পর্ক যদি মসজিদের সঙ্গে কায়েম না হয়, তাহলে আল্লাহর শপথ সেখানেও দীন রয়েছে বলে ধরা হবে না। সেখানে ধর্মীয় পড়াশোনা হতে পারে কিন্তু দীন বা ধর্ম হবে না।”
# ”পারিশ্রমিক নিয়ে দিন শেখানো দীন বিক্রির নামান্তর। কোরআনে কারীম শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকারীর আগে ব্যভিচারীরা জান্নাতে যাবে।”
# ”পবিত্র কোরআন অনুবাদসহ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব। এই ওয়াজিব লঙ্ঘন করলো তাকে অবশ্যই এজন্য শাস্তি পেতে হবে।”