ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির মিছিল থেকেই মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র আবারও নতুন কায়দায় জেগে উঠেছে। তাদের চিরতরে রুখে দিতে হবে। তারা পুলিশের অস্ত্র ভেঙেছে, গাড়ি ভেঙেছে। তারা কিন্তু চলে যায়নি।’
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর উদ্দেশে এসপি হারুন বলেন, ‘জামায়াত-শিবির চক্রের দুর্বৃত্তরা এখনও ঢাকাসহ পুরো দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি মনে করি, নতুন আইজিপির নেতৃত্বে নতুন উদ্যোমে আবারও সারাদেশে এসব চক্রান্তকারীর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করবো।’
বিদায়ী আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের দায়িত্ব পালনের সময়ের বিভিন্ন প্রসংশনীয় দিক উল্লেখ করতে গিয়ে এসপি হারুন বলেন, ‘স্যার যখন আইজিপির দায়িত্ব নিলেন, তখন ২০১৫ সালে ৯০ দিনের জামায়াত-শিবিরের আগুন সন্ত্রাস ও তাণ্ডব চলছিল। সেই তাণ্ডবে সারা বাংলাদেশে যখন পুলিশ হত্যা শুরু হলো, হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ও গাজীপুরে যখন হামলা হলো, তখন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক সিঙ্গাপুর থেকে ফোন করে জানতে চাইলেন, তোমার কোনও সমস্যা আছে কিনা, বলো।’
তিনি বলেন, ‘পুরনো আইজি স্যারকে বলব, আইজি সবাই হয় না। ১৯৪৭ সাল থেকে মাত্র ৩৮ জন আইজি হয়েছেন এ দেশে। লাখ লাখ লোক অবসরে গেছেন। আইজিপি হন একজন-দু’জন। আপনার প্রতি পুলিশ বাহিনীর একটা বিশ্বাস ছিল। আপনি কিন্তু পরাজিত হননি। পরাজিত আপনি হতে পারেন না। আপনি পরিবার-স্বজনদের সময় দিতে পারেননি। আপনি যেভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন, আপনি ঠেকবেন না।’
সদ্য বিদায়ী আইজিপির উদ্দেশে এসপি হারুন আরও বলেন, ‘আপনি সবাইকে সাহস জুগিয়েছেন, আপনি বার বার বলেছেন, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের এ দেশের মাটিতে ঠাঁই হবে না। আপনি বলেছেন, জামায়াত-শিবির চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান। আপনি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন বিশাল মনের মানুষ। স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে, যারা স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি, তাদের কাউকে আপনি ছাড় দেননি। আপনার কারণে আমরা মনের জোর নিয়ে কাজ করেছি। আমরা দেখেছি হেফাজতের তাণ্ডব।’
বিদায়ী আইজিপির উদ্দেশে এসপি হারুন আরও বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন, তুমি তাড়াতাড়ি লালবাগে যাও। আমি সেখানে গিয়ে আল্লামা শফীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি যখন রাতের বেলায় বাবুনগরীকে গ্রেফতার করলাম, দেখি আমার চাকরি চলে যায়।
এক স্যার আমাকে বললেন, কেন তুমি বাবু নগরীকে গ্রেফতার করলে? কমিশনার স্যারকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, একটু অপেক্ষা করো। আইজিপি স্যারকে ফোন দিলাম। তখন তিনি বললেন, কিসের ভয় পাও তুমি? যে স্যার আমার চাকরি খেয়ে ফেলছিলেন, কিছুক্ষণ পর দেখি, তিনিই আবার আমাকে বলেছেন, তুমি ভালো কাজ করেছ।’
নতুন আইজিপির উদ্দেশে এসপি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আজকে জাবেদ পাটোয়ারী নতুন আইজিপি হিসেবে আসছেন। উনি ক্লিন ইমেজের মানুষ। তিনিও বিভিন্ন সমস্যা দেখেছেন। আমাদের বিদায়ী আইজিপি যেভাবে পুলিশকে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বে আমরা কাজ করবো। ’ নতুন আইজিপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু একটা কথাই বলবো, আমরা যারা পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করি আমরা আমাদের সম্মান নিয়ে থাকতে চাই। আমরা আমাদের সেই সম্মানটুকু রাখার জন্য আমাদের বাহিনী প্রধানকে যতো ধরনের সহযোগিতা দরকার, সেই ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আজকে নতুন আইজিপি দায়িত্ব নিচ্ছেন। পুরনো আইজিপি দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের হরতাল-অবরোধ এবং জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবসহ জঙ্গিবাদের দৌরাত্ম্য রুখে দিয়েছিলেন, তিনি এটাকে দমন করেছিলেন। এরপরও স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বন্ধ হয়ে যায়নি। তারা আবার নতুন কায়দায় জেগে উঠেছে।’
এসপি হারুন আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে, যে সমস্যাগুলো আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিমাতাসুলভ আচরণে ভুগছি। আমাদের অনেকগুলো পদ সৃষ্টি করার কথা রয়েছে। আমাদের পুলিশের কোনও পদ সৃষ্টি হচ্ছে না। আপনার যেহেতু একটা ক্লিন ইমেজ রয়েছে, সবখানে যেতে পারেন, আপনি পুলিশের সেসব দাবিগুলো পূরণ করে বাংলাদেশ পুলিশকে আবারও একটা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে নিয়ে যাবেন।’