ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সুবিশাল অংকের অর্থ ( ১৬৫কোটি টাকা ) পাচারের মামলায় দুই আসামির জামিন পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী রবিবার এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে দুদক কৌসুলিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, ১৬৫ কোটি টাকার অর্থ পাঁচারের অভিযোগে মামলা হওয়ার সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে রিমান্ডের আবেদন থাকা সত্ত্বেও দুজন আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জামিন দিয়েছেন। আরেক আসামিকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
আদালত বলেন, নথি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে জামিন ও রিমান্ডে পাঠানোর আদেশের মধ্যেই বৈপরীত্য রয়েছে। কারণ রিমান্ডে পাঠানোর আদেশে ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন যে এটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচার্য। আবার দুজনকে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব? ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের আদেশ কমই দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে জামিন দেয়া হলে জাতির কাছে কি বার্তা যাবে?
গত ২৫ জানুয়ারি ১৬৫ কোটি টাকা পাঁচারের অভিযোগে নগরীর মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে দুদক। এ মামলায় এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামালকে জামিন দেয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে ব্যবসায়ী সাইফুল হককে জামিন না দিয়ে রিমান্ডে পাঠায় আদালত। বিষয়টি নজরে আসায় গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, এ ধরনের বিশেষ আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দিতে পারে কিনা?
বিচার শুরুর পূর্বে যদি জামিনের প্রয়োজন হয় তাহলে কোন আদালত জামিন দেবে? আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিটি বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রেই এ ধরনের সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। আপনার মত কি? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অর্থ পাঁচারের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ার নেই। এটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচার্য বিষয়। যে ম্যাজিস্ট্রেট জামিনের আদেশ দিয়েছেন তার বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। এছাড়া দুদককে জামিন বাতিলের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিতে পারে আদালত।
আদালত বলেন, দুদক আসামিদের জামিন বাতিলে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেই তো স্বত:প্রণোদিত হয়ে রুল জারি করতে হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের মামলায় দুদকের কোন অবহেলা রয়েছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। আদালত বলেন, সব বিষয় তো আমরা মেরামত করতে পারব না।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আসাদুর রউফ বলেন, অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে। জামিন আদেশের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আদালত জানতে চাইলে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, যিনি এই মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তার কাছে মতামত চেয়েছে কমিশন।
এছাড়া আদেশের অনুলিপিও না পাওয়ায় ওই সময়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আদালত বলেন, এক বছরেও আপনারা অনুলিপি পাবেন না। দুদক কৌসুলি বলেন, আমরা সবসময় স্বচ্ছ (ট্রান্সপারেন্ট)। আদালত বলেন, সাংঘাতিক ট্রান্সপারেন্ট সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি!