ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিশ্ব স্যাটেলাইট অধিকারী দেশের মধ্যে ৫৭ তম সদস্য হিসেবে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের প্রথম এই স্যাটেলাইটটি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপন করা হবে। শনিবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। তবে শেয়ারবাজার লুটের মূলহোতা দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের কোম্পানী বেক্সিমকো’সহ আরও একটি কোম্পানিকে স্যাটেলাইটটির পুরো স্বত্ব দেয়ায় এর যথাযথ ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অপারেটর বছরে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন সফল হলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। আর বেঁচে যাওয়া বাকী তরঙ্গ বিভিন্ন দেশে ভাড়া দেয়া সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।
কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি বেরিয়ে আসে প্রবাসী সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে। স্যাটেলাইটটির স্বত্ব ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ও বায়ার মিডিয়াকে দেয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বিষয়টি তথ্য প্রযূক্তি মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট বলে জানান। গোঁজামিলের আশ্রয় নিতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তোপের মুখে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কনসালটেন্ট শফিক আহমেদ চৌধুরী বিনা টেন্ডারে বেক্সিমকো ও বায়ার মিডিয়াকে এর স্বত্ব দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। অথচ এটির স্বত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে থাকার কথা ছিল।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কনসালটেন্ট শফিক আহমেদ চৌধুরীর নিকট প্রবাসী সাংবাদিক সুলতানা রহমান জানতে চান যে, ‘আপনারা যে দু’টি কোম্পানীকে বেক্সিমকো এবং বায়ার মিডিয়া, এই দুটি কোম্পানীকে দিচ্ছেন। তার মানে কি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তাদের সার্ভিস কিনতে হবে এদের কাছ থেকে! গভমেন্টের কাছ থেকে নয়?”
এ প্রশ্নের জবাবে গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন শফিক আহমেদ। তখন ওই সাংবাদিক পাল্টা জানতে চান- ‘স্যার, আমি আসলে এতকিছু কম বুঝি। যে কারণে আপনি একটু ক্লিয়ার এ্যানসার দিন। ইয়েস অর নো এর মধ্যে। এই চ্যানেলগুলোকে এই দুটি কোম্পানীর কাছ থেকে (ফ্রিকোয়েন্সি) কিনতে হবে কি হবে না?”
তখন শফিক আহমেদ কিছু না বোঝার ভান করে জানতে চান- “কোন চ্যানেলগুলোর কথা বলছেন?”
পুনরায় ওই সাংবাদিক স্পষ্ট করে জানতে চান, ‘কোন টেলিভিশন চ্যানেল যদি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ফিকোয়েন্সি নিতে চায়, তাহলে তারা কি বিটিআরসির কাছ থেকে নিবে? নাকি এই দুটি কোম্পানীর কাছ থেকে নিবে?’
এবার প্রশ্নটাই এড়িয়ে গিয়ে স্যাটেলাইট এর কনসাল্টেন্ট শফিক আহমেদ আজব ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন- ‘ফ্রিকোয়েন্সি শব্দটাই ভুলে যান আপনি। আগামীতে এটা একটা প্রোডাক্ট হিসেবে থাকবে।’ একথা বলে তিনি হাতের কাছে থাকা পানির বোতল দেখিয়ে বলেন- ‘দেখুন এটা একটা পানির বোতল, আমি যদি এই পানির বোতল প্রক্রিয়াজাত করি…’
অযৌক্তিক ও হাস্যকর এ উদাহরণ শেষ করতে না দিয়েই সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন- ‘আমি যদি একটা চ্যানেল করি, আমি কি বেক্সিমকো কিংবা বায়ার মিডিয়ার কাছ থেকে (ফ্রিকোয়েন্সি) কিনবো? নাকি আমি সরাসরি বিটিআরসির কাছে এপ্লাই করবো?’ তখন শফিক আহমেদ স্বীকার করেন এবং বলেন- ‘না, না। বিটিআরসির এটার সঙ্গে এক্কেবারে কিছুই নাই।’
এরপর সাংবাদিক আরও নিশ্চিত হতে জিজ্ঞাসা করেন- ‘আচ্ছা, মূলত: এটা তাদের (দুই কোম্পানী) উপর নির্ভর করে যে, তারা কাকে দিবে আর কাকে দিবে না? এখানে গভমেন্টের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রন বা তাদের কোন কাঠামো আছে কি না?’ তখন শফিক আহমেদ সরাসরি জানিয়ে দেন ‘না’।
সাংবাদিক যোগ করে বলেন- ‘ভেরি ক্লিয়ার স্যার! তাহলে কি আপনার কাছে মনে হয় যে, এখানে একটি মনোপলি বিজনেসের (একচেটিয়া ব্যাবসা) আশঙ্কা আছে?’এবারও তিনি গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে বলেন- ‘মনোপলি বলবো না, আপনাকে তাহলে আমি এ্যাঁ..লেট মি ড্র ইয়োর এ্যাটেনশন…’
এসময় সাংবাদিক শিবলী চৌধুরী কায়েস বিটিআরসির চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন- ‘মাননীয় চেয়ারম্যান, এই দুটি কোম্পানীকে অর্থাৎ বেক্সিমকো এবং বায়ার মিডিয়াকে আপনারা কিভাবে দিয়েছেন? সে বিষয়টা যদি আপনারা ক্লিয়ার করেন। আরও তো কোম্পানী ছিল। কিভাবে দিয়েছেন এই দুটো কোম্পানীকে?’
এ প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত কোমল স্বরে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ জানান- ‘এই দুটো কোম্পানী পেয়েছে এটা কিন্তু ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় কিংবা বিটিআরসি থেকে ওরা পায় নাই। ওরা পেয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযূক্তি মন্ত্রনালয় থেকে।’
সাংবাদিক কায়েস ফের জানতে চান- ‘সেটা কি টেন্ডারিং হয়েছে? না… প্রসেসটা কি?’ তখন বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন- ‘এটা তো আমার জানার কথা না। আমি বলতে পারবো না।’
সাংবাদিক শাহেদ আলম আরও খোলাসা করে জিজ্ঞাসা করেন- ‘তাহলে বিষয়টা কি এই যে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পুরো প্রকল্পটি শুধু এই দুটো কোম্পানীর কাছে বন্ধক দেয়া হচ্ছে? অন্য কোন কোম্পানী তো এ বিজনেস করতে পারছে না। দুইটা কোম্পানীই মাত্র করতে পারছে। কেন কিভাবে এটা হতে পারে?’
জবাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন- ‘এটা খুবই সেনসেটিভ প্রশ্ন।’