শেখ মহিউদ্দিন আহমেদঃ বেগম খালেদা জিয়া নামেই যার ইতিহাস তৈরি হয়ে আছে; সেই আপোষহীন জাতীয়তাবাদী নেত্রী কারাগারে যাবেন এটা পুরো জাতি কথিত আদালতের রায়ের বহু আগে থেকেই জানতো। এটি জেনেও জাতি যেমন নিশ্চুপ ছিল, তেমনি অহিংস আন্দোলন করিয়ে বেগম জিয়াও বার্তা দিয়ে গেছেন গণতন্ত্রের, যে গণতন্ত্রে শাসকেরা কখনই বিশ্বাসী নয়, ছিলও না। তারপরেও শঙ্কা এখনো রয়েছে, তবে কি নিষ্ঠুর শাসক গোষ্ঠী তাদের প্রভুর ইঙ্গিতে তাকে নিঃশেষ করে দিবে?
#
জি, আমি নিঃশেষ শব্দটি বেগম জিয়ার জীবনাশঙ্কার বিষয়েই ব্যবহার করেছি। হাজার হাজার নিরস্ত্র, নিরীহ এমনকি বন্দী নাগরিক হত্যাকারী অনির্বাচিত সরকার বেগম জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনাই করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রথম ধাপে তাকে নিঃসঙ্গ কারাগারে নেয়া হয়েছে, মানসিক চাপ বৃদ্ধির জন্যে। চাপ দেয়া হচ্ছে সরকার ও তার প্রভুর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে; অন্যথায় জামিন বাতিল, শুনানিতে দীর্ঘ বিলম্ব, পুরাতন দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় সম্পৃক্ত করে কারাগারেই তাকে শারীরিক মানসিক অসুস্থ করে, সঠিক চিকিৎসা ও পথ্য না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার কাজটি চূড়ান্ত করেছে। সবকিছু বুঝেও অনড় বেগম জিয়া। এরপরেও তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষেই তার মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন?
#
আমি নিজেও তার এই অহিংস অবস্থার তীব্র বিরোধিতা করলেও নিজের কাছেই যখন প্রশ্ন করি চলমান রাজনৈতিক সিস্টেমে সহিংস আন্দোলনে কি আসলেই গণতন্ত্র মেলে? না মেলে না। তাইতো কম জীবনহানির মধ্যদিয়ে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় গণতন্ত্রের লক্ষ্যে পৌঁছতে বেগম জিয়ার শ্রেয়তর পথই বেছে নিয়েছেন। এতে অপশাসকদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলেও ইতিহাস তার এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই নির্ধারণ করবে। সেই সাথে বিচার ব্যবস্থার অধঃপতনের শেষ অবস্থায়ও ন্যায় বিচার পাবেন না জেনেও, বিচারের প্রতি আস্থা দেখিয়ে মূলতঃ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখছেন। এই চিন্তার ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটি মূল্যায়ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একসময় করবেন।
#
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় জনগণের নেতৃত্বের হাল বেগম জিয়ার কাছে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে; এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানের কারনেই যে সকল শক্তি নাখোশ ছিল, যাদের স্বার্থ যথাযথ সংরক্ষণ হতো না, তারাই দীর্ঘ এক পরিকল্পনার আওতায় পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কব্জা করে নেয়। একা বেগম জিয়ার পক্ষে সেই সুবিশাল ষড়যন্ত্রকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি বলেই আজকে তাকেই সাজানো বিচারে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এক নিঃসঙ্গ কারাগারে। কিন্তু একজন যোদ্ধা জেনারেলের সহধর্মিণী, যিনি সমরে সংঘাতে, রাজনীতিতে অনেক বিপত্তি পেরিয়ে এসেছেন, জাতিকে গণতন্ত্রের রাস্তায় ধরে রেখেছেন, সেই তাকে এখনো ৭৩ বছর বয়সেও অনড় থাকছেন। বয়স তাকে পীড়া দিলেও জীবন সায়াহ্নে তাঁর এই অবস্থান নতুন এক রাজনীতির শিক্ষা হয়ে সবার সামনে দৃষ্টান্ত করে রাখছেন।
#
কিন্তু বাংলাদেশীদের অবস্থানের প্রতি নাখোশ বিদেশী শক্তি কি দেবে কোটি কোটি জাতীয়তাবাদীদের সেই শিক্ষার আলোকে একটি অহিংস গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ? জেনারেল জিয়ার বিএনপি, জেনারেল জিয়ার আত্মত্যাগ এবং বেগম জিয়ার আপোষহীন অবস্থান থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতীয়তাবাদী আদর্শ দিয়ে, জাতিকে উজ্জীবিত করে রাষ্ট্রকে রক্ষায় কতদূর সক্ষম হবে সেদিকেই তাকিয়ে আছে দেশপ্রেমিক শক্তি। সময়েই নির্ধারণ করবে অহিংস অবস্থান কি কখনো সহিংস আন্দোলনে পরিনত হবে বা আদৌ তার প্রয়োজন হবে কিনা? এর অনেক কিছুই নির্ভর করবে বেগম জিয়ার বর্তমান অবস্থান ও তাঁর রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত অনুসরনের উপর।
লেখকঃ প্রেসিডেন্ট, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ।