ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশশাসন নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতার ভিত্তিক বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এই প্রতিবেদনের মূলমন্ত্র হিসেবে একটিই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনা কি বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্রে কায়েম করছেন?’
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।
আলজাজিরার মতে, এবারও ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। গতবার নির্বাচনে সহিংসতার জেরে প্রায় সকল বিরোধীদল নির্বাচন বয়কট করেছিল।
বর্তমানে বিভিন রাজনৈতিক নেতাদের কারাদণ্ড এবং আরও উচ্চতর শাস্তি এখন সকলের মধ্যেই একটি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। সকলেই এখন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে অনেকটা অনিশ্চিত। এই ডিসেম্বরেই বাংলাদেশের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকাতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত নাদিয়া তাবাসসুম খান আল জাজিরাকে জানান, সকলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয় পায়।
ঢাকার একটি রিয়েল এস্টেটের মালিক হাসান হাবিব বলেন, ‘এই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যকার শত্রুতা নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে আরও অধিক জটিল করে তুলেছে।‘
জোরপূর্বক গুম : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশ মন্তব্য করেছিল, বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম হতে যাচ্ছে। আর এ বক্তব্যকে সেই থেকে প্রত্যাখান করে আসছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এবং তার রাজনৈতিক দল। বর্তমানে সেটি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ৫ বছরের জেলের পাশাপাশি ২ কোটি ১০ লক্ষ জরিমানা করা হয়। এতে তার পুত্র তারেক রহমান এবং আরও চারজনকে ১০ বছরের শাস্তি দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রায় ১ মাস পর খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলেও কোন কারণ ছাড়াই তাকে কারাগারে থাকার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সর্বশেষ তথ্যমতে, খালেতাকে ৮ মে পর্যন্ত কারাগারে রাখা হবে এবং এরপর তার জামিনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই কারাদণ্ডাদেশ পুরো দেশকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি চলছে। যেটাকে বিএনপি আওয়ামীলীগের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। পুলিশের নথি থেকে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার জেল আদেশের পর সারাদেশে ৩০০ বিএনপি নেতা এবং সমর্থক আটক করেছিল পুলিশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিরোধীদলের ৩ হাজারেরও বেশি সদস্য কারাগারে রয়েছে।
প্রায় দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া। তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বেগম’ যারা একটি বিধ্বস্ত দেশের দারিদ্র বিমোচন করে বাংলাদেশকে তুলে নিয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশের কাতারে। বিএনপি অবশ্য দাবি করছে, ২০১৪ সাল থেকে তাদের দলের ৫০০ সমর্থককে মেরে ফেলার পাশাপাশি ৭৫০ জনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর বিএনপি এখনো কোন পরিকল্পনা করেনি। তবে খালেদা জিয়ার আদেশ অনুযায়ী তারা অসহিংতার পথ বেছে নিয়ে আন্দোলন এবং সমাবেশ করছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রীক দেশ হিসেবে অভিহিত করেছে জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং। সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উত্থাপন করা ১৩ টি দেশের মধ্যে কোনটিরই গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করছে না বলে দাবি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এই তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডাও ছিল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পর্যালোচনা চলাকালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মৌলবাদীদের হামলা সংঘটিত হতে দেখা গেছে।
সূত্র : আলজাজিরা
Link: https://www.aljazeera.com/indepth/features/sheikh-hasina-turning-bangladesh-party-state-180404082024893.html