ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক খন্দকার মোশারফ হোসেন অবিলম্বে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একটি দলের পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় এই এসপিকে ওই নির্বাচনের সময় সাময়িকভাবে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহার করেছিল নির্বাচন কমিশন।
এবার সিটি নির্বাচনে মিথ্যা অপবাদে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গত ২৭ এপ্রিল আমাদের সমর্থিত মহানগর জামায়াত নেতাসহ ৪৫ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। যে সদিচ্ছা নিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচনের প্রথম থেকেই তারা আমাদের প্রত্যাশাকে, আমাদের আশাকে ভঙ্গ করেছে।
তিনি রোববার সকালে টঙ্গীতে বিএনপির কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব কথা বলেন। এসময় মেয়র প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্ত্রীয় সদস্য ও মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী মো. মাজহারুল আলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দাবি জানিয়ে খন্দকার মোশারফ হোসেন আরো বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারনাকালে আমাদের কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ গিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের অযথা হয়রানী করছে। পুলিশ প্রশাসন এখন থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একটা কৌশল অবলম্বন করছে। তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি আবারো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচন কমিশনকে এর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রশাসনকে এখানে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে, আর যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না তাদের অনতিবিলম্বে এ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীন হলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচনটা পরিচালনা করেন প্রশাসনের ব্যক্তিরা। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ না হয় এবং নির্বাচন কমিশন যদি প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে সেখানে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং ভোটাররা সেখানে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেনা। সেই জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই এখন থেকে শুরু করে নির্বাচনের দিন ভোট গণনা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উদ্বিগ্ন যে গাজীপুরে আমাদের শরিক দলের জামায়াতে ইসলামের গাজীপুর মহানগরের আমির এসএম সানাউল্লাহ মেয়র পদে প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। পরে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি তার মেয়র পদের প্রার্থিতা নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে আমাদের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ধানের শীষে ভোট দিতে সমর্থন দিয়েছেন। আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে ২৭ এপ্রিল দিনে দুপুরে জামায়াতের গাজীপুর মহানগর আমির এসএম সানাউল্লাহকে ৪৫ জন কর্মীসহ গ্রেফতার করেছে। আজকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই তাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের ২০ দলীয় নেতা-কর্মীরা যদি স্বচ্ছন্দে নির্ভয়ে প্রচার প্রচারণা করতে না পারে তবে আমরা কিভাবে আশা করব এ নির্বাচনী এলাকায় ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ইচ্ছামত ভোট দিতে পারবে।
মোশারফ বলেন, এ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন কী ধরণের হবে তার ইঙ্গিত বহন করবে এ সিটি নির্বাচন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর ও খুলানা সিটি নির্বাচন হল বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষা। যদি সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সরকার, এই নির্বাচন কমিশন, এই প্রশাসন, কী করবে তা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার পূর্বশর্ত হিসেবে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মূল্যায়ন করব। তাই তিনি সিটি নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ২০ দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন নির্বাচন করছি তখন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি। এ সরকার আমাদের নেত্রীকে বাদ দিয়ে আগামি সংসদ নির্বাচন করতে চায়। আমরা আমাদের নেত্রীর মুক্তি চাই। আমাদের নেত্রীর মুক্তি, গণতন্ত্র পুণপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচন এক সুতায় গাঁথা। সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভবিষ্যতের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।