ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ক্রমাগত ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে ব্যাপক দুর্নাম কুড়িয়েছেন অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলা ইনসাইডার’-এর সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির। কিন্তু সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছা একটি অডিও কথপোকথন বলছে ভিন্ন কথা। চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জানা গেছে কট্টর আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবিরের মুখে।
সবার ধারণা, বিএনপি বিরোধী মনোভাবের কারণে শেখ হাসিনার অন্যতম আস্থাভাজনদের তালিকায় আছেন সৈয়দ বোরহান কবির। গত বেশ অনেকদিন ধরেই তিনি তার অনলাইন পোর্টালে ধারাবাহিকভাবে চরম আপত্তিকর সব খবর প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন তারেক রহমান, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে ঘিরে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেগুলো ছড়িয়েও পড়েছে অসংখ্য মানুষের কাছে।
যদিও সংবাদের সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও গুণগত মান নিয়ে সকলের মনেই প্রশ্ন আছে, কিন্তু একশ্রেণীর পাঠকের জন্য সেগুলো আবার বিনোদনেরও খোরাক। অন্যদিকে কারো কারো মনে খানিকটা সন্দেহের বীজও বপন করতেও সমর্থ হয়েছেন কবির, যদিও সে সংখ্যা খুবই নগন্য।
তবে প্রাপ্ত অডিও ক্লিপ থেকে সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব সৈয়দ বোরহান কবিরের প্রকৃত আনুগত্য কোথায়। এতে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক সহচরের কাছে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘শেখ হাসিনা পিশাচ মহিলা। তার কোন বুকপিঠ নেই। সে আমাদেরকেও শেষ করে দেবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘তিনিতো জনগণের নেতা এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। তাকে হাসিনা রুখতে পারবে না।’
রেকর্ডিং অস্পষ্ট হওয়ায় পরের অংশটুকু বুঝতে বেগ পেতে হয়।তবে এটুকু পরিষ্কার যে, মি. কবির তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সে ব্যক্তির কাছে কৈফিয়ত দিচ্ছিলেন কেনো তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যা ও অসত্য সংবাদ প্রকাশ করেছেন এতোদিন।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারণ থেকে অনুধাবন করা যায়, তিনি বলতে চাচ্ছেন তাদেরকে শেখ হাসিনা বাধ্য করেছে এগুলো করার জন্য। তাদের কোন উপায় ছিলো না। আরো কয়েকটি নামও বলতে শোনা যায় তাকে যারা তার ভাষ্যমতে ‘আসল কালপ্রিট’। এদের ভেতরে রয়েছে মোজাম্মেল বাবু ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
ঘটনার গভীরে যেতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। উঠে আসে নানা চমকপ্রদ কাহিনী।
জানা যায়, বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে বাড়ি সরকারের প্রভাবশালী একজন সাবেক মহিলা মন্ত্রী গণভবনে কয়েক বছর আগে একটি ইফতার পার্টির পর শেখ হাসিনার সাথে সৈয়দ বোরহান কবিরকে পরিচয় করিয়ে দেন। কানাঘুষা আছে, মধ্যবয়েসী সে মহিলা মন্ত্রীর সাথে কবিরের বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিলো।
সেখানে উপস্থিত ৭১ চ্যানেলের একজন ক্যামেরাম্যান জানান,বোরহান কবির আবেগ ধরে রাখতে না পেরে হাসিনার পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়েন এবং নিজেকে তার সন্তান বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান। একই সাথে প্রথম সাক্ষাতেই তিনি শেখ হাসিনার কাছে তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অকল্পনীয় বিষোদগার করেন। এভাবে তিনি শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি লাভে সমর্থ হন যা তিনি তার ব্যক্তিগত ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও কাজে লাগান।
নাম গোপনের শর্তে তথ্য মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ সাবেক একজন কর্মকর্তা বাম ঘরানার সংবাদপত্রটির কাছে দাবি করেন, ‘সরকারপ্রধানের সরাসরি নির্দেশেই ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামের অনলাইন পোর্টালটির জন্ম হয়। এটির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির। গত বহুদিন যাবত এ পোর্টালটি বিএনপি ও জিয়া পরিবারের ইমেজ ধ্বংসে কাজ করে যাচ্ছে।
‘রিজভীকে বকবক কমাতে বলেন’, ‘পদ ছাড়তে রাজি খালেদা জিয়া’ ইত্যাদি নানা মুখরোচক ও মনগড়া সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভেতর পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি করা ও তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়াই হচ্ছে ‘বাংলা ইনসাইডার’র সরকারি অ্যাসাইনমেন্ট।’
সবকিছুই রুটিনমাফিক চলছিলো। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক আদিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে চলে আসেন বিতর্কিত সাংবাদিক সৈয়দ বেরহান কবির। সরকারের আস্থাভাজন হয়ে অল্প সময়ে বিত্তবৈভবের মালিকও বনে যান হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান বোরহান কবির।
একসময় বর্গাজমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতো তার বাবা। মা গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে বেড়াতো। নিজেদের মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিলো না। সেই পরিবারের বসবাস এখন ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাটে। চোখধাঁধানো আরও কয়েকটি ফ্ল্যাট ও দামি গাড়িও আছে তাদের।
কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা ও অর্থই কাল হয়ে দাঁড়ায় একদার অখ্যাত রিপোর্টার সৈয়দ বোরহান কবিরের জন্য।
পেশাদারিত্বের সুযোগে বহুগামিতায় আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেত্রীর সাথে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তার সাথে সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয় বৃহত্তর কুমিল্লার সেই সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর সাথে। অন্তত তিনবার দুজনের মধ্যে প্রকাশ্য বচসা হয় বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের প্রথম সারির একজন নেত্রী। তখন তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ দেওয়া হবে বলা হলেও কবির তাতে পাত্তা দেননি।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ‘বোরহান কবিরের ঔদ্ধত্য এতটাই বেড়ে যায় যে তিনি প্রধানমন্ত্রীরও ধার ধারেন না। শেখ হাসিনাকেও নাকি তাদের কথা শুনে সরকার চালাতে হয়।’ এদিকে সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজির টাকাপয়সা ভাগাভাগি নিয়েও মি. কবিরের বিরোধ তৈরি হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে। তিনি একাই সব খেয়ে ফেলতে চাইলে বেশ কয়েক দফা শাসানো হয় তাকে।
সর্বশেষ ঢাকাতে উড়াল রেল স্থাপনের একটি প্রকল্পকে ঘিরে ঘুষবাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন ‘বাংলা ইনসাইডার’-এর সম্পাদক। তিনি এতে প্রধানমন্ত্রী ও ডিএমপি কমিশনারের নাম ব্যবহার করেন। এ খবর পুলিশ হেডকোয়ার্টার হয়ে পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর কানে। আর তখনই ঘটে বিপত্তি। গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল রাতের আঁধারে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বোরহান কবিরকে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি দৈহিক নির্যাতনও করা হয়। রমনা ডিবি অফিসের একটি সূত্রমতে, পিটিয়ে কবিরের অন্ডকোষ থেঁতলে দেওয়া হয় যা দু:খজনকভাবে তার চিরস্থায়ী যৌনক্ষমতা হারানোর কারণ হতে পারে।
সব মিলিয়ে এখন দারুণ হতাশায় নিমজ্জিত আছেন সৈয়দ বোরহান কবির। বর্তমানে নিজের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত বিতর্কিত এ সাংবাদিক। আর তাই তিনি সহযোগিতা লাভের আশায় যোগাযোগ করেছেন তারেক রহমানের আস্থাভাজন তার পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির সাথে।
তাদের কথপোকথনের যে অডিও রেকর্ডিংটি এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁচেছে তাতে তার মনের অনেক রাগক্ষোভ ধরা পড়েছে। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আরে, হাসিনার কথা বাদ দেন। সে বাংলাদেশের মানুষের মুখে মু…না (ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য)।আমি তাঁকে (তারেক রহমানকে) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে চাই, কাজে লাগাতে পারলে হাসিনাকে তিন মাসের ভেতর ফেলে দেওয়া যাবে।’ বোরহান কবির বলেন, ‘ভাইয়াকে বলেন, আমি তাঁর হয়ে কাজ করবো। বললে আমি আজই দেশ ছেড়ে আসবো।’
কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজনদের কেউই সৈয়দ বোরহান কবিরকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না। বরং তাঁরা তাকে আওয়ামী লীগের একজন এজেন্ট হিসেবেই ভাবছেন এবং তিনি নতুন কোন ফাঁদ পাতার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন। সে কারণে আপাতত তারেক রহমানের কোনো আশীর্বাদ পাচ্ছেন না সৈয়দ বোরহান কবির।
অডিও ক্লিপ শুনতে এখানে ক্লিক করুনঃ