ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অতি সম্প্রতি সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর(ডিজিএফআই)এর করা অতি গোপনীয় একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যাওয়া নিয়ে শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অভ্যন্তরে তোলপাড় চলছে।
২০১৮ সালের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনা ও করণীয় নিয়ে ডিজিএফআই দেড়শো পৃষ্ঠার এই বিস্তারিত রিপোর্টটি তৈরী করে।
এরপর দেড়শো পৃষ্টার বিস্তারিত রিপোর্ট থেকে শেখ হাসিনার জন্য ১১ পৃষ্ঠার একটি সংক্ষেপিত রিপোর্ট তৈরী করা হয়। এই রিপোর্টটি ডিজিএফআইএর পক্ষ থেকে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। এমনকি শেখ হাসিনা পাঁচটি আসনে নির্বাচনে দাঁড়ালে টুঙ্গিপাড়াসহ মাত্র দুইটি আসনে জেতার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁর সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠ হলে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে জয়লাভ করতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে যারা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এর মধ্যে মাত্র পাঁচজন মন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাশ করতে পারেন।
রিপোর্টে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়, অনেক গণমাধ্যমই এখন ভয়ে সরকারের দুর্বলতা লিখছেনা। এমনকি বিরোধী দলের অনেকেও গুম খুনের ভয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেনা। এ কারণে সরকার নিজেকে শক্তিশালী ভাবলেও প্রকৃতপক্ষে মাঠের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। জনগণ সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আগের মতো এবার আর গুম খুনে অংশ নিতে চাইছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় অংশ।
গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো অনিয়মে নেই, এমনকি রাজপথে দৃশ্যমান কোনো আন্দোলনেও নেই, এই অবস্থায় গুম খুনে অংশ নিলে তারা জনপ্রতিরোধের সম্মুখীন হবার আশংকা করছেন।
গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের পরিবার থেকেও ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও বিেষ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টটি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক না হলেও সব ঠিকই ছিলো।
কিন্তু বিপত্তি বাধে এই গোপন রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ।
রিপোর্টটি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তা এমনকি আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মন্ত্রীও এই রিপোর্টটি হাতে পেয়েছেন।
রিপোর্টে সরকারের ভেতরের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে যা শেখ হাসিনার জন্য হতে বিপরীত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তাই কিভাবে এই রিপোর্টটি অনেকের হাতে পৌঁছে গেলো কিভাবে গোপন রিপোর্টটি ফাঁস হলো এনিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে তোলপাড় চলছে। প্রাথমিক একটি তদন্ত রিপোর্টের সূত্র উল্লেখ করে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনার অনির্বাচিত সরকারের ভেতরের অতি বাম ধারার একটি অংশ শেখ হাসিনাকে চাপে রাখার জন্য নানারকম গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করে দিচ্ছে।
এদিকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের কাছে গোয়েন্দাদের পাঠানো গোপন তথ্য আর গোপন থাকছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেসব তথ্য পৌঁছানোর আগেই তা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরোধ; তৈরি হয়েছে আন্তদাপ্তরিক বিরোধও। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সচিবদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।
চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, এই চিঠিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সচিবদের মাধ্যমে দপ্তরগুলোকে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বশেষ সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
সচিবদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইনটেলিজেন্স (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাসহ (এনএসআই) অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাকার্যে নিয়োজিত থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকে।
গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্য দেশ পরিচালনায় নীতি- নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সকল অতি গোপনীয় তথ্য সিলগালাকৃত খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয় যাতে উক্তরূপ তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যতিরেকে অন্য কারো কাছে প্রকাশিত না হয়।’
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনের সম্পর্কের অবনতির বিবরণ দিয়ে মোহাম্মদ শফিউল আলমের সই করা এই চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি মহাপরিচালক, ডিজিএফআই কর্তৃক প্রেরিত আধা-সরকারি পত্র মারফত জানা যায় যে, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের গোপনীয়তা অনেক সময় রক্ষিত হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাতসূত্র উল্লেখ করা হয়, এমনকি উক্তরূপ প্রতিবেদনের ছায়ালিপিও কার্যার্থে সরবরাহ করা হয়- যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এই ধরনের কাজের ফলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে এবং মাঠপর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের কাজে বিঘ্ন সৃষ্ট হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য দপ্তরগুলোকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থায় উল্লেখিত বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে যে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি’।