জাহিদ এফ সরদার সাদীঃ গণতন্ত্রের মাতা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ দীর্ঘদিন জালিম, স্বৈরচার অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার গৃহপালিত আদালতের রায়ে কারাবন্দী। এই রমজানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইফতারির জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩৯.৫০ টাকা, যে কারনে দেশমাতার ভাগ্যে জুটেছে সামান্য ছোলা মুড়ি!
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খুব যতন করে লিখেছেন “খালেদার ইফতারের জন্য বাজেট ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, বাংলাদেশের ৩বারের প্রধানমন্ত্রীকে সরকার আর তাঁর গৃহপালিত গনমাধ্যম গুলো কি পরিমাণ হেনস্থার মধ্যে রেখেছে সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনে এতিমদের সাথে ইফতার করে তাদের দু:খগুলোকে নিজের করে নিতেন এই মহিয়সী নারী নেত্রী। কিন্তু এ জালিম সরকারের মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নেত্রী রমজানের প্রথম দিনে শরিক হতে পারেন নাই এতিমদের ইফতারে।
অন্যদিকে আমরা যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের আশীর্বাদে বিত্তশালী হয়েছি, দামী পাঞ্জাবি পড়ার সুযোগ পেয়েছি তাঁরা আজ কি করছি?
গণতন্ত্র ও দেশের জন্য ৭৩ বছর বয়স্ক বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ শরীরে নির্জন কারাগারে ছটফট করছেন, ‘ছোলা মুড়ি দিয়ে একাকি ইফতার করছেন’ অন্যদিকে আমরা ‘ফাইভ স্টার হোটেলে কাচ্চি বিরিয়ানি সহ হরেক রকমের ইফতারির পসরা নিয়ে দামী পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ইফতার করছি’।
একদিকে দেশমাতা মাত্র ৩৯ টাকার ইফতার করছেন অন্যদিকে আমরা ফাইভ স্টার হোটেলে মাথাপিছু ৩৯০০ টাকার ইফতার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছি! আমরা শুধু মাত্র একটি চেয়ার ই খালি রেখেছি কিন্তু সেই খালি চেয়ারের শূন্যতার অনুভূতির অন্তরালে শেষ রাতের তারা দেখার মতো —‘এ কী করছি আমরা’? মেঘলা আকাশের বুকে মেঘের দল করছে খেলা সুখে, জানিনা কোন ব্যথা হঠাত জেগে উঠেছে এ বুকে?
‘কেন আমরা ফাইভ স্টার হোটেলে ইফতার করবো?’ আমরা কি পারতাম না, ঐ নাজিমউদ্দিন রোডে সকল তৃনমূলের নেতা কর্মীসহ গরীব দুঃখীদের সাথে নিয়ে ৩৯.৫০ টাকার ইফতার নিয়ে রাস্তায় বসে যেতে?
আমরা কি পারতাম না, বিগত ১০ বছরে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নিহত, গুম ও আহত গরীব তৃনমূলের নেতা কর্মী এবং পরিবারদের সাথে নিয়ে দেশের গরিব এতিম দুঃখীদের ঐ নাজিমউদ্দিন রোডে নেত্রীর দেয়ালের এপারে ৩৯ টাকার ইফতার করাতে?
আমরা যদি ঐ চকবাজার থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে বসে ঢাকার সকল গরীব দুঃখীদের নিয়ে ৩৯ টাকার ইফতার করতাম তাহলে কি হাসিনার পুলিশ আমাদের বাঁধা দিতো? বাঁধা দিয়ে কি, রোধ করতে পারতো গরিব দুখি মানুষের ঢল? সরকার কি পারতো গরীব দুঃখীদের সাথে নিয়ে ইফতার করতে আশা তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ করাতে? সকলে মিলে রাস্তায় বসে ৩৯.৫০ টাকার ইফতার করতাম তাহলে কি মিডিয়া আমাদের বয়কট করতো? বিশ্ব মিডিয়া কি পারতো আমাদের এই মহসি উদ্যোগকে অবোহেলার চোখে দেখতে? আমাদের সাথে কি এসে যোগ দিতেন না বিদেশী কুটনৈতিকরা?
কবে ঘটবে আমাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতামূলক চিন্তার বিকাশ? আমরা কি পরিবর্তনের রাজনীতিকে প্রসার করে আলোড়ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করবো না, না চলবে গতানুগতিক ভাবে? মানুষ চায় পরিবর্তন আর পরিবর্তন এনে দেয় উৎসাহ-উদ্দিপনা, শক্তি-মনোবল আর সেই পরিবর্তন কেই ভয় পায় স্বৈরাচার। স্বৈরাচারকে দমাতে পরিবর্তনের নতুন খেলায় আমাদের চমকাতে হবে নতুনত্বেকে আগলে ধরে!
আমরা যদি রাজনীতিতে নতুনত্ব সৃষ্টির চেষ্টায় পুরো রমজান জুড়েই এরূপ কর্মসূচী দিতাম তাহলে কি আমাদের খুব কষ্ট হতো? সবার তো মনে হয়, এরূপ কর্মসূচী আসলে নেত্রী আর জিয়া পরিবারের প্রতি সন্মান বৃদ্ধি পেতো এবং সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সাড়া জাগাত! আর হাসিনার প্রতি জন্মাতো ক্ষোভ আর ধিক্কার!
বর্তমানে আমাদের সকল নেতা-কর্মীদের প্রয়োজন রাস্তায় বসে জনগণকে সাথে নিয়ে ইফতার পার্টি করা, ৫ তারকা হোটেলের এসি রুম বাদ দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে চকবাজার হতে নাজিম উদ্দিন রোড পর্যন্ত ইফতার মার্চ করা।
জনগণকে বোঝানো চার দেয়ালের ভিতরে একজন বয়োবৃদ্ধ নেত্রীর প্রতি এ কেমন অবিচার করছে বাকশালী, অগণতান্ত্রীক, স্বৈরচার সরকার।
যে মানুষটির জন্য চেয়ার খালি রেখে সেই খালি চেয়ারটির পাশে বসে আমরা আলোকিত হই, সেখানে আমাদের তো বুঝা উচিত যে জেলখানার অন্ধকার দেয়ালের পাশের রাস্তায় বসে ইফতার খেলেও আমরা আলোকিত হতে পারি অনেক বেশী।
‘যৌবনে যেমন হঠাৎ করেই মানুষ পেয়ে যায় অবাধ স্বাধীনতা। তখন তাদের একদিকে থাকে জ্ঞানের জগৎ, অন্যদিকে চাকচিক্য, লোভ-লালসার হাতছানি। সব মন্দ জিনিস এড়িয়ে জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের প্রয়োজন নিজেদের ওপর নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণ। চলার পথের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সৎ সাহস থাকলেই মানুষ সুবিবেচক ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। এমন মানুষদের জয়রথ থামানো যায় না।’ বিপদগামী মানুষের চিন্তার বিপরীতে, আত্মশক্তি, বিশ্বাস, সুযোগ ও ঝুঁকির আশঙ্কা সব ধারন করে আমরা দেশমাতার জন্য রাস্তায় বসে ৩৯.৫০ টাকার ইফতারের মাধ্যমে রাজনীতি ও মানুষের মনে নতুন সূচনা করেও আলো জ্বালানোর কাজ শুরু করতে পারি। তবে আমরা কবে জ্বালাবো সেই আলো নেত্রীর মূখখানি জুঁড়ে?
“গণতন্ত্রের মা ভালবাসি তোমার ঐ রোদ্দুর হাসি দেখে স্বপ্ন কাটে আমার দিবা নিশি, কি হল আজ আমি ভেবে না পাই সব হারালেও শুধু তোমাকে চাই।”
আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া দেশনেত্রীকে জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর তা শুরু হোক ঐ নাজিমউদ্দিন রোড থেকে!
চেতনায় জাতীয়তাবাদ, বিপ্লবেই মুক্তি!
লেখকঃ
জাহিদ এফ সরদার সাদী
বাংলাদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা এবং বিএনপির বিশেষ দূত।