DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

কে এই ইয়াবা সম্রাট আবদুর রহমান বদি ????

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ছোটবেলা থেকে ছিলেন  ডানপিটে ছেলে। পড়ালেখা করানো ছিলো কষ্টসাধ্য। তাই সমুদ্রঘেঁষা ছোট শহর টেকনাফে না রেখে মা-বাবা তাকে পাঠালেন চট্টগ্রামের কুমিরার প্রখ্যাত জেল স্কুলে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হলো না। রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী বাবা এবং নিরক্ষর মায়ের ছেলেটি এসএসসি পাসেই পড়ালেখার পাঠ চুকালেন। এই ছেলেটিই আলোচিত-সমালোচিত কক্সবাজারের আওয়ামী সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি।

গত কয়েক দিনে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হচ্ছে, তাতে সবার আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতার নাম সামনে আসছে।

আব্দুর রহমান বদিকে টেকনাফের ইয়াবা পাচারের ‘গডফাদার’ বলা হয়। অবশ্য তার বাবা এজাহার মিয়া কম্পানিও কম যাননি। তাকেও এক সময় মাদকের গডফাদার বলা হতো। বিএনপি দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন, জাতীয় পার্টি হয়ে শেষ আশ্রয় হিসেবে এজাহার মিয়া খুঁজে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে।

বাবার উত্তরসূরি হিসেবে আব্দুর রহমান বদিও আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করে এমপি হন। সঙ্গে প্রসার ঘটান বাবার মাদক ব্যবসার।

নিজেকে শিক্ষিত দাবি করলেও আসলে বদি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করেছেন, তার প্রমাণ নেই। তার একাডেমিক ক্যারিয়ার নিয়ে এলাকাবাসীও সন্দিহান।

ইয়াবা নিয়ে আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ থাকলেও সরাসরি কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় কোনো সংস্থা এখনঅব্দি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ইয়াবা কারবারির তালিকাভুক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে।

আব্দুর রহমান বদিও আমাদের সঙ্গে আলাপকালে তার বিরুদ্ধে ইয়াবা চোরাচালানের কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকাকে সামনে এনে নির্দোষ দাবি করেছেন।

কিন্তু, বাস্তবতা হলো- টেকনাফ ও উখিয়ার পোড় খাওয়া থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, আব্দুর রহমান বদির রাজনৈতিক উত্থান এবং দেশে ইয়াবার আগ্রাসী রূপ সমান্তরালে হয়েছে। বদি এখন যতটা হিংস্র, তার চেয়েও তার ইয়াবা সারাদেশে আগ্রাসী।

এমনকি টেকনাফে ইয়াবাকে এক রকম ‘কুটির শিল্পে’ রূপ দেয়ার পেছনেও বদির ক্ষমতা বলয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও সাধারণ মানুষের ধারণা।

টেকনাফ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, ‘বদি এমপি হওয়ার পরই টেকনাফ ও কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসা লাগামহীন হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘বদি সরাসরি ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে বারবার বেঁচে যান।

প্রায় চার দশক কক্সবাজার আওয়ামী পরিবারের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত এই নেতা বলেন, ‘একবার বদি তার একটি এক কেজি হেরোইনের চালান আত্মসাৎ করায় অনুগত শ্যামাকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। পরে মামলা হলেও তদবির করে বেঁচে যান বদি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বদির বাবা আচার, সুপারিসহ বিভিন্ন চোরাচালানের পণ্য মিয়ানমার থেকে আনতেন। এজন্য স্থানীয়রা তাকে ‘কোম্পানি’ বলে ডাকতেন। সে সময়ে উপমহাদেশের অন্যতম তালিকাভুক্ত চোরা কারবারি ছিলেন এজাহার মিয়া। বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ব্যবসাকে প্রসার ঘটিয়েছেন বদি।’

একই রকম অভিযোগ করেন উখিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সানোয়ারা বেগমের স্বামী ও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী জাফর আহমদ চৌধুরী।

তিনি  বলেন, ‘টেকনাফে বদি এবং ইয়াবা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ২০০২-০৩ সালে ইয়াবার গোড়াপত্তন হলেও ২০০৮- এ আব্দুর রহমান বদি এমপি হন। এরপর তার শেল্টারে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে কার্যক্রম শুরু করেন। মাঠের ব্যবসা সামলান ব্যবসায়ীরা। আর প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন বদি।’

জাফর আহমদ চৌধুরী আরও বলেন, টেকনাফ উখিয়ার চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই ইয়াবা ব্যবসায়ী।

টেকনাফ উখিয়ার আওয়ামী ঘরানার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাষ্যে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আর্শিবাদ নিতে বদি যখন দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন, তখনো ইয়াবা এতটা ব্যাপকতা পায়নি। কিন্তু, ২০০২ সালে বদি টেকনাফ পৌরসভার চেয়ারম্যান হন। ঐসময় একদিকে যেমন বিস্তৃতি ঘটে ইয়াবার, তেমনি বাড়তে থাকে আব্দুর রহমান বদির রাজনৈতিক বলয়। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর লাগামহীনভাবে ইয়াবার প্রসার ঘটান তিনি।

তারা আরও বলেন, ‘বদি যে জনপ্রিয়তার কথা বলে বেড়ান বা দাবি করেন, তা মূলত ইয়াবার পাহাড়সম টাকার মাধ্যমে প্রতি পদে পদে মানুষকে কিনে নেয়ার জনপ্রিয়তা।’

যদিও আব্দুর রহমান বদি টেলিফোনে বুধবার  আমাদের বলেন, ‘আমি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এমন তথ্য-প্রমাণ কেউ কখনো দিতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যেকটি মোবাইল নম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা আঁড়ি পাতে। কিন্তু কোনো দিন আমি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেছি, তারা এমন তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।’

আব্দুর রহমান বদি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চোরাকারবারি বা ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে নাম এসেছিল। আসলে এগুলো আমরা নই। একই নামে আমাদের এলাকার অন্য মানুষ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম তাদের সঙ্গে আমাদের জড়িত করে গুলিয়ে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদ এবং প্রশাসনের কাছে বারবার ইয়াবা প্রতিরোধের জন্য বলেছি। টেকনাফের নাফ নদী ধরে ঘুমধুম থেকে শাহপরী দ্বীপ পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়ার প্রস্তাব করেছি। এটি হলে ইয়াবা ঠেকানো সম্ভব হবে।’

তবে এটি বাস্তবায়ন তার এখতিয়ার নয় বলেও জানান আব্দুর রহমান বদি।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ৯৫ ভাগ সঠিক। হয়তো ৫ ভাগ মানুষ ভুলে ফেঁসে গেছেন। আবার সত্যিকারের ইয়াবা গডফাদাররাও এই তালিকায় আসেনি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!