ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট’ আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় এক প্রশ্নে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি জানান, তার বাজেট বক্তৃতা লেখা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কি না কিংবা বিনিয়োগে আনার কোনো পদক্ষেপ থাকছে কি না, তা আলোচকদের মধ্যে কয়েকজন জানতে চান।
উত্তরে মুহিত বলেন, “কালো টাকার জন্য কোনো রকমের ব্যবস্থা করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। কালো টাকা সাদা করা অলঅয়েজ আ ব্যারিয়ার, অ্যান্ড ইট হ্যাজ নেভার সাকসিডেড।”
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাব নিয়ে আলোচনা বহু পুরনো। অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে বিভিন্ন সময়ে সুযোগ দিলেও তাতে সফল হয়নি সরকার।
এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অপ্রদর্শিত ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা বৈধ করা হয় বলে সংসদে গত বছর জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
তবে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণ বেশি বলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন। তারা বলছেন, এই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে মুহিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অসহায়ত্বের সুরে বলেন, “কালো টাকা দেশের বাইরে গেলে আমি কী করব?”
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মুহিত এই বছর কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে বলেও সতর্ক করেছিলেন।
গত জানুয়ারিতে রূপালী ব্যাংকের ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আপনারা সবাই জানেন এ বছর নির্বাচনের বছর। এ বছর টাকা পয়সার ছড়াছড়ি বেশি হবে, কালো টাকা হয়ত যথেষ্ট আসবে বাজারে, এ বছর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।”
এই সময়ে আলোচিত ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়েও সোমবারের অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ব্যাংক কেলেঙ্কারি ইজ অ্যা ভেরি সিরিয়াস ম্যাটার এবং ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক ধরনের গোলামাল আছে।”
ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি একীভূত হবে বলে আশা করছিলেন মুহিত। কিন্তু তা না হওয়ায় কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার বিষয়ে এগিয়ে যেতে চান অর্থমন্ত্রী।
“আমরা কিন্তু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ২০৪০ সালে এ দেশে কোনো তামাক থাকবে না, এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার। তামাকের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েছি। তার কিছু ইঙ্গিত এ বাজেটে দিতে পারব, যাতে দেশ থেকে তামাক বিতাড়িত করতে পারি। তবে তামাক চাষিদের জন্য বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করতে হবে।”
বিভিন্ন শিল্পের ব্যবস্থাপনা খাতের জন্য দেশেই দক্ষ জনবল তৈরিতে মনোযোগ দিতে চান মুহিত, যাতে দেশের অর্থ বিদেশিরা না নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, “আমাদের উন্নয়নে ২০৫০ সাল নাগাদ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে হবে।”
রাজস্ব আয় বাড়াতে যেখানে যেখানে কর আদায়ের সুযোগ রয়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ ছয় বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে, এজন্য বাস্তবায়নে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানো দরকার।
ঋণ গ্রহণ ও আদায়ে যেন কোনো রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হওয়ায় এগুলোর যে কয়েক লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, সে বিষয়ে পদেক্ষপ চেয়েছেন মির্জ্জা আজিজ।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
“কৃষিতে যান্ত্রিকী করণের প্রয়োজন রয়েছে, এর ফলে কোনো কর্মসংস্থান বাদ গেলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।”
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাঈদি সাত্তার, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলমও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মুহিতের ভাই বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এ কে এ মোমেন।
তিনি আয়কর বাড়ানো, সরকারের রিজার্ভ ফান্ডের বিপরীতে সভারেইন বন্ড চালু, সম্পদের অপচয় বন্ধ করা, ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিকার, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা, এপ্রিল মাসের মধ্যেই বাজেটের টাকা বিলিবণ্টনের সুপারিশ করেন।
মুহিত বলেন, “প্রথম দিকে বাজেটের পয়সা ব্যবহার করা হয় না। এবারে আমি বলব, প্রথম দিন থেকেই সরাসরি খরচ করতে পারবেন, যে মুহুর্তে পাস করবে, জুলাই থেকে খরচ করতে পারবেন।”