ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার(প্রায় ১৬ কোটি টাকা) নগদ পরিশোধে গত চার বছরে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা ও ফরেষ্ট হিলস এলাকায় তিনটি বাড়ির মালিক হয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ইকনোমিক মিনিস্টার বরুন দেব মিত্রের (বি ডি মিত্র) স্ত্রী রাখী মিত্র চৌধুরী। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর কম্যুনিটিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, নগদ অর্থে বাড়ি ক্রেতাদের অর্থের উৎস জানতে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ জানতে চায় যে, সে অর্থ বৈধ চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে কিনা। ঠিক এমনি অবস্থার মধ্যেই বাংলাদেশি এই কর্মকর্তার স্ত্রীর কর্তৃক বিপুল অর্থে বাড়ি ক্রয়ের তথ্য মিডিয়ায় এলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিডি মিত্রের স্ত্রী রাখী মিত্র চৌধুরী নিউইয়র্কে বহুজাতিক একটি সংস্থায় চাকরি করেন। একই সংস্থায় কর্মরত অপর বাংলাদেশিরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হঠাৎ করে তিনটি বাড়ির মালিক হবার সংবাদে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, তা দ্বারা কোনভাবেই নগদ দুই মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করা সম্ভব নয় বলে রাখী মিত্র চৌধুরীর এক সহকর্মী জানান।
প্রকাশিত সংবাদের ব্যাপারে বিডি মিত্রের মতামত জানতে চাইলে তিনি এনআরবি নিউজের এ সংবাদদাতার সাথে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে চাননি। তবে এক পর্যায়ে মন্তব্য করেছেন যে, ''এই আমেরিকায় কত-শত সংবাদ রয়েছে। তা না লিখে আমাদের বিষয়কে কেন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে?''
এরপর তার স্ত্রীর সাথে কথা বলার অনুমতি চাইলে বিডি মিত্র নাকচ করে দিয়ে বলেন, ''সংবাদ তো প্রকাশ হয়েছেই, তার বক্তব্য জেনে আর কি হবে।'' এ সময় বিডি মিত্র আক্ষেপ করে বলার চেষ্টা করেন যে, আরো অনেকেই তো বিপুল অর্থে এই নিউইয়র্কে বাড়ি ক্রয় করেছেন। তাদের সংবাদ তো মিডিয়ায় আসে না? স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল হিসেবে মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের সংবাদ মিডিয়ায় এসেছিল। সে সংবাদের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শেষে সেই কন্সাল জেনারেলকে প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্লোজ করা হয়। এরপর তাকে অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে তার পদোন্নতির পরিবর্তে পদাবনতী ঘটেছে বলে অতি সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে মিডিয়াতে জানানো হয়।
জানা গেছে, বিডি মিত্রের স্ত্রীসহ সন্তানরা আগে থেকেই নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। অতিরিক্ত সচিবের পদমর্যাদায় ঢাকায় চাকরি করতেন। নিউইয়র্কে পরিবারের সাথে চাকরির শেষ দিনগুলো কাটানোর অভিপ্রায়ে নিম্ন পদমর্যাদা (ইকনোমিক মিনিস্টার) হওয়া সত্বেও জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে আসেন চার বছর আগে।
পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সাথে ক্রয়কৃত বাড়ির দলিল এবং ছবিও রয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, ৩টি বাড়িই নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায়। ৮৭-৩০ ১৬৯ স্ট্রীটের বাড়িটি নাসির আলী খান পলের নিকট থেকে ক্রয় করা হয় ২০১২ সালের ২ ফেব্রয়ারি। এর পুরো মূল্য নগদ ৭,৬০,০০০ ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে। ৮৫-২৭, ১৬৮ প্লেস, জ্যামাইকার বাড়িটি একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুডলারী ভনপ্রেসকোর নিকট থেকে নগদ ৭,৮৫,০০০ ডলারে ক্রয় করা হয়। ১১৬, ৮১ এভিনিউ, কিউ গার্ডেন্স ঠিকানার বাড়িটি গত বছরের ১২ জুন এক মিলিয়ন ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারে ক্রয় করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই বাড়িতে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ডলারের মর্টগেজ ঋণ নেওয়া হয়। অবশিষ্ট অর্থ নগদে পরিশোধ করা হয়েছে বিক্রেতা ইয়েলেনা সেডিনাকে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বি ডি মিত্রের স্ত্রী রাখী মিত্র চৌধুরী প্রায় তিন মিলিয়ন ডলারের রিয়েল এষ্টেট সম্পদের মালিক হলেন। এরমধ্যে প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার নগদ পরিশোধ করেছেন।
এদিকে, জাতিসংঘে কর্মরত ব্যক্তি কর্তৃক বিপুল অর্থে বাড়ি ক্রয়ের নেপথ্য কাহিনী উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রবাসীরা। এক্ষেত্রে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্রঃএনআরবি নিউজ।